বাহিরানা

দ্য ওয়ান্ডারফুল স্টোরি অব হেনরি সুগার— ওয়েস এ্যান্ডারসন— দৃশ্যের নতুন ব্যবহার


বাহিরানা ডেস্ক

ওয়েস এন্ডারসনের “দ্য ওয়ান্ডারফুল স্টোরি অব হেনরি সুগার” চলচ্চিত্রের কাহিনী এরকম,  হেনরি সুগার (বেনেডিক্ট ক্রাম্বারব্যাচ) পৈত্রিকসূত্রে বিত্তশালী মধ্যবয়সী আর অবিবাহিত। সে বিয়ে করেনি কারণ সে তার সম্পদের ভাগ কাউকে স্পর্শ করতে দিতে চায় না। প্রায় নিস্তরঙ্গ এক জীবন তার, কিন্তু তার মতো অন্য বিত্তশালীদের মতোই তারও জুয়া খেলার নেশা আছে। তবে, হেনরির জীবনের দিশা অন্যদিকে মোড় নেয়, যখন একদিন লাইব্রেরিতে এক ডাক্তারের লেখা আশ্চর্য এক লোক সম্পর্কে একটা বই তার চোখে পড়ে। তখন সেই বইয়ের ডাক্তারকে আমরা ক্যামেরার সামনে দেখতে পাই, ডাক্তারের নাম ডক্টর চ্যাটার্জি (দেব প্যাটেল) এবং তার সহকারী ড. মার্শাল (রিচার্ড ইওদে)। এই দু’জন সেই আশ্চর্য লোক ‘ইমাদ খান’ (বেন কিংসলে) বিষয়ে বলে। সে দাবী করে, যে সে চোখ বন্ধ করেও সব দেখতে পারে এবং সব কাজ করতে পারে। ডক্টর চ্যাটার্জি যখন স্বচক্ষে ইমাদ খানের এক প্রর্দশনীতে এই দক্ষতা দেখতে পায়। তখন সে তার একটা ইন্টারভিউ নেবে, এবং তাকে নিয়ে গবেষণা করবে বলে স্থির করে। ইমাদ খান চ্যাটার্জিকে জানান একজন মহৎ যোগীর (রিচার্ড ইওদে) সাথে যৌবনে তার দেখা হয়েছিল। সেই যোগী ধ্যানরত অবস্থায় মাটির উপর উঠে যেতে পারতেন। তার শিষ্যত্ব বরণ করে সে এই দক্ষতা আয়ত্ব করেছেন। এই জন্য অনেক বছর তাকে সাধনা করতে হয়েছে, যোগী তাকে বলেছিলেন সবচেয়ে প্রিয় একজনের মুখ যেন সে ভাবে যখন সে ধ্যান করে। তাহলে ১৫ বছরের মধ্যে সে সফলতা পেতে পারে। ইমাদ খান তার শৈশবে মারা যাওয়া ভাইকে ভাবতে থাকেন, দিনের পর দিন, এইভাবে অনেকগুলো বছর। একসময় তিনি তাশের কার্ড না দেখেই তাতে কি আছে বলে দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন।

আমরা এক ঘন্টারও কম সময়ের একটি চলচ্চিত্রকে রোল্ড ডাল-এর এই বই থেকেই দেখতে পাই। যেখানে মূল বইয়ের মধ্যে এসে ঢুকে পড়ে ডক্টর চ্যাটার্জির বই, যেখানে ইমাদ খান আর মহৎ যোগী এসে হ্যানরির জীবনকে মানবতার সেবায় নিয়োজিত করে দেয়। শর্ট ফিল্মটির একটি বিশেষত্ব হলো, এতে চরিত্ররা নাটকের স্টেজের মতো প্রথম পুরুষে তাদের কাহিনী বলতে থাকে। আর বিভিন্ন রঙের উজ্জ্বল ব্যবহার, যেগুলোকে আলাদা তাৎপর্য দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। বেনেডিক্ট ক্রাম্বারব্যাচ হ্যানরি সুগার চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন, একই মাত্রায় অনবদ্য অভিনয় করেছেন ইমাদ খান চরিত্রে বেন কিংসলে, চলচ্চিত্রে তাকে দ্য ডিলার চরিত্রেও দেখা গেছে।

রোল্ড ডাল চরিত্রে রালফ ফিয়েনেস

হেনরি সুগার ইমাদ খানের পদ্ধতি অনুসরণ করবে বলে স্থির করে। এবং তিন বছর মোমবাতির সামনে তার প্রিয় মানুষের মুখাবয়ব ভেবে ধ্যান করে। তিন বছরের সাধানার পর সে একটি কার্ডের পেছনদিক দেখতে পেত নির্ভুলভাবে। এই নবলব্ধ দক্ষতাকে সে ক্যাসিনোতে ব্যবহার করে। সে প্রথমদিনই ৩০ হাজার পাউন্ড জেতে। কিন্তু এরপরই সুগার এই দক্ষতার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, তার মনে হতে থাকে এখানে কোনো উত্তেজনা নেই কেননা সে চাইলেই জিততে পারে। তখন সে এই টাকা তার বাড়ির সামনের রাস্তায় উড়িয়ে দিলে মানুষ আর ট্রাফিকে প্রায় রায়ট হয়ে যায়, তখন পুলিশ অফিসার (রালফ ফিয়েনেস) তাকে বলে সে যদি দান করতেই চায় তাহলে সে যেন অনাথ আশ্রমগুলোকে বেছে নেয়। এই অফিসারের কথায় সে নতুন মানে খুঁজে পায় দক্ষতাটির। এরপর সে ছদ্মনামে, অজস্র বেশ ধরে সারা পৃথিবীজুড়ে ক্যাসিনো খেলতে থাকে, এবং সেই টাকায় তার একাউন্টেন্ট জন উইনস্টন (দেব প্যাটেল)-এর মাধ্যমে সে প্রতিষ্ঠা করে অজস্র হাসাপাতাল আর অনাথ আশ্রম। হার্ট এটাকে তার মৃত্যুর পর, যে হার্ট এ্যাটাকের কারণ সে বহু আগেই তার নুতন পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা দিয়ে দেখতে পেয়েছিল। মৃত্যুর পর তার একাউন্টেন্ট রোল্ড ঢালকে (রালফ ফিয়েনেস) হেনরির সব কাণ্ডকারখানার কথা বলে, এবং বলে তিনি যদি তাকে নিয়ে বই লিখতে চান তাহলে যেন তার ছদ্ম নাম ‘হ্যানরি সুগার’ লেখেন।

আমরা এক ঘন্টারও কম সময়ের একটি চলচ্চিত্রকে রোল্ড ডাল-এর এই বই থেকেই দেখতে পাই। যেখানে মূল বইয়ের মধ্যে এসে ঢুকে পড়ে ডক্টর চ্যাটার্জির বই, যেখানে ইমাদ খান আর মহৎ যোগী এসে হ্যানরির জীবনকে মানবতার সেবায় নিয়োজিত করে দেয়। শর্ট ফিল্মটির একটি বিশেষত্ব হলো, এতে চরিত্ররা নাটকের স্টেজের মতো প্রথম পুরুষে তাদের কাহিনী বলতে থাকে। আর বিভিন্ন রঙের উজ্জ্বল ব্যবহার, যেগুলোকে আলাদা তাৎপর্য দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। বেনেডিক্ট ক্রাম্বারব্যাচ হ্যানরি সুগার চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন, একই মাত্রায় অনবদ্য অভিনয় করেছেন ইমাদ খান চরিত্রে বেন কিংসলে, চলচ্চিত্রে তাকে দ্য ডিলার চরিত্রেও দেখা গেছে। আর রালফ ফিয়েনেস সব সময়ের মতোই অনন্য।

এন্ডারসন রোল্ড ডাল-এর ছোটগল্প দিয়ে চারটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন, ‘দ্য ওয়ান্ডারফুল স্টোরি অব হেনরি সুগার’— এই ধারাবাহিকের প্রথম নির্মাণ। এর সাথে যোগ করা যায় ওয়েস এন্ডারসনের দ্য ওয়ান্ডারফুল স্টোরি অব হেনরি সুগার লেখাকে দৃশ্যে রূপান্তরের গ্রাফিক পদ্ধতি অনুসরণ করেছে, আর এর সাথে যুক্ত হয়েছে নাট্যগুণ, সবমিলিয়ে অনন্যসাধারণ আর নতুন হয়ে উঠেছে চলচ্চিত্রটি।

দ্য ওয়ান্ডারফুল স্টোরি অব হেনরি সুগার
পরিচালক : ওয়েস এ্যান্ডারসন
প্রকাশকাল : থিয়েটার সেপ্টেম্বর ২০, নেটফ্লিক্স সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩।


Leave a Comment