সুধীর মিশ্রা’র নতুন চলচ্চিত্র ‘আফওয়া’ নেটফ্লিক্সে এসেছে সম্প্রতি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো গুজব নিয়েই এর মূল ঘটনাপ্রবাহ আবর্তিত হয়।ভারতীয় চলচ্চিত্রে কয়েকবছর ধরে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যাকে নির্ভর করে কম বাজেটের কিন্তু আকর্ষণীয় গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে। আফওয়া’ও এই ঘরানার মধ্যে পড়ে।
শুরু হয় ভিকি বানার সাথে তার এক রাতের অন্তহীন ইঁদুর-বেড়াল খেলার। এই পর্যায়ে ভিকিকে ভাইরাল ভিডিওর ধারণা দেয় একজন, ভিকিও তার ফাঁদে পড়ে। টাকার বিনিময়ে সে তখন তার টিম নিয়ে নিবেদিতাকে নিয়ে রাহাব আর ভিকির হাতাহাতিকে ‘লাভ জেহাদ’-এর মোড়কে সাজিয়ে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়। দ্রুতই সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। এর সমান্তরালে আরেকটা ঘটনা চলতে থাকে, কসাইকে মারার জন্য চন্দনকে বাঁচানোর আর কোনো পথ না পেয়ে ভিকি পুলিশ অফিসার সন্দীপ তোমারের (সুমিত কৌর) ক্রসফায়ারের পরামর্শ মেনে নেয়, কিন্তু সন্দীপ ভুল লোককে গুলি করায় চন্দন বেঁচে যায়। তখন চন্দন নিবেদিতাকে সাহায্য করার বিনিময়ে তার বাবার কাছে তাকে আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ করে।
চলচ্চিত্রের গল্পটি এরকম:
টেলিকম কোম্পানির একজন বড় কর্মকর্তা রাহাব আহমেদ (নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী) তার এক ব্যবসায়িক কাজে সাওয়ালপুরের পাশে এক ছোট শহরে যায়। সেখানে সে এক অনুষ্ঠানের প্রধান আমন্ত্রিত ব্যক্তি হিসেবে বক্তৃতা দেয়। তখন একইসময়ে সাওয়ালপুরে ভিকি বানা’র (সুমিত ভায়াস) নেতৃত্বে একটা রাজনৈতিক র্যালি হচ্ছে, কিন্তু হঠাৎ কে বা কারা যেন তার উপর পাথর ছুড়ে মারে। এর ফলে র্যালি রূপ নেয় এক ছোটখাট দাঙ্গায়, কিন্তু সেই ছোট দাঙ্গা ভয়ংকর হয়ে উঠে যখন ভিকির ঘনিষ্ট চন্দন (শারিব হাশমি) নামের একজন এক কসাইকে মেরে ফেলে, আর সেটা কেউ মোবাইল ভিডিওতে ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। ভিকি বানা হচ্ছে সরকারি দলের এক বড় নেতার মেয়ের (ভূমি পেদনেকার) হবু স্বামী। ভিডিওটা ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় ভিকিকে তার হবু স্ত্রী নিবেদিতা সিং চন্দনকে গ্রেফতার করিয়ে বিচারের আওতায় আনার জন্য বলে, ভিকি তার পরামর্শ না মানলে নিবেদিতা ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ভিকির লোকজন তাকে খুঁজতে বের হয় এবং এক পর্যায়ে পেয়েও যায়, তারা যখন তাকে ফেরাতে চেষ্টা করছে তখনই রাহাব আহমেদ সাওয়ালপুর দিয়ে ফিরছে তার গন্তব্যে। সে তাদের থামাতে চেষ্টা করে এবং এক পর্যায়ে তাদের ধ্বস্তধ্বস্তির ভিডিও করা শুরু করে সামাজিক মাধ্যমের ছাড়ার জন্য। তখন ভিকি তার লোক দিয়ে রাহাবের মোবাইল নিয়ে নেয়। কিন্তু রাহাব কৌশলে নিবেদিতাকে নিয়ে তার গাড়িতে উঠে পড়ে।
শুরু হয় ভিকি বানার সাথে তার এক রাতের অন্তহীন ইঁদুর-বেড়াল খেলার। এই পর্যায়ে ভিকিকে ভাইরাল ভিডিওর ধারণা দেয় একজন, ভিকিও তার ফাঁদে পড়ে। টাকার বিনিময়ে সে তখন তার টিম নিয়ে নিবেদিতাকে নিয়ে রাহাব আর ভিকির হাতাহাতিকে ‘লাভ জেহাদ’-এর মোড়কে সাজিয়ে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়। দ্রুতই সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। এর সমান্তরালে আরেকটা ঘটনা চলতে থাকে, কসাইকে মারার জন্য চন্দনকে বাঁচানোর আর কোনো পথ না পেয়ে ভিকি পুলিশ অফিসার সন্দীপ তোমারের (সুমিত কৌর) ক্রসফায়ারের পরামর্শ মেনে নেয়, কিন্তু সন্দীপ ভুল লোককে গুলি করায় চন্দন বেঁচে যায়। তখন চন্দন নিবেদিতাকে সাহায্য করার বিনিময়ে তার বাবার কাছে তাকে আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ করে। এইভাবে গল্প বিভিন্ন দিকে মোড় নিতে থাকে। রাহাব আর নিবেদিতার পেছনে এখন শুধু ভিকি আর তার লোকজন নয়, সেই ভাইরাল ভিডিওর কারণে লাভ জিহাদিদের (রাহাব আর নিবেদিতা) মারার জন্য মৌলবাদী একটা গোষ্ঠীও তাদের পেছনে লেগেছে। তখন সামনে কী হবে সবই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
চলিচ্চিত্রে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীকে তার স্টার ভ্যালোর তুলনায় একটু খাপছাড়া লেগেছে। মূল গল্পের সাথে যেন তার চরিত্রটি ঠিকভাবে একাত্ব হতে পারেনি। তার অভিনয়ও একটু আড়ষ্ট। ভূমি পেদনেকারের মাঝেও নতুনত্ব কিছু দেখা যায়নি, গতানুগতিক অভিনয়ই দেখা গেছে। সুমিত ভায়াস সেই হিসেবে চরিত্রের সাথে মানিয়ে নিয়েছেন ভালো করে। তার চরিত্রটি একটু ধীরগতি দাবী করে, সেটা তিনি ভালোভাবেই এনেছেন। আবার, চন্দন চরিত্রে শারিব হাশমিও ভালো অভিনয় করেছেন।
চলচ্চিত্রের গল্পে নতুনত্ব আছে, বলিউডের ফিল্মে এতদিন আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া নিয়ে টুকরো টুকরো অনেক সিন দেখলেও, এর উপর ভিত্তি করেই পুরো চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে এই প্রথম। এটা ভালো বিষয়।
সময় কাটানোর জন্য মোটামুটি ভালো বলা যায় ‘আফওয়া’কে, যদিও ছবির সময়সীমা দুই ঘন্টা একটু বেশি হয়েছে। আর গুণবিচারে বলা যায় এটি মধ্যমমানের চলচ্চিত্র, সবকিছুই একটু একটু করে আছে এতে, তবে শেষপর্যন্ত কিছুই শিখর স্পর্শ করতে পারেনি।
আফওয়া
পরিচালক: সুধীর মিশ্রা
প্রকাশকাল: মে, ২০২৩।