বাহিরানা

এই ক্রমধূসর ব্যাপটাইজিং, দীর্ঘ বৃষ্টিতে



সোহরাব ইফরান


পার্থক্য ~

(ক)

হৃদয় রয়ে গেছে বিদ্যুতায়িত?

এরকম একটা ক্ষুদ্র পিরামিড— কায়রো পোকা রুমালের উপর— চিত্রোপময়; স্বলভ্যচিহ্নিত?

মনে রেখো? বটের অভ্যন্তর? পৃথিবী কেন?

শূন্যতা পর্যন্ত ‘রুটস ব্যয়্যার’ ছড়িয়েছিলো?

অদূরে মনক্লান্ত সন্ধ্যা। দেখতে পাচ্ছ কি পৃথিবীর এককোণে, কোনও ‘স্ব-অর্ঘ্য কোন’?

দৃষ্টি জহরত নামছে কাঠবেড়ালীর মতোন; পাতা ও ডাল ধরে রাখার ধীর প্রহরে?

(খ)

হৃদয়বিশ্রুতির প্রতিভা মনে নেই; পথের পাশে সবুজ মিনারে বিবর্ণ হচ্ছে— পাতা ঝরা!

মাকড়সা নামছে— ক্রমবিকাশ বেড়ে দেয়ালে।

জানি ‘সে’ কেন উভয়োতম অন্ধকারে?— ঐ বার্তাহারা পাখিগুলোর।

আক্রান্ত গাছের— অধিরনরকে— নীলিমায়— সৌরচিত্র ভুল করে!

ঐপাড়— পবনপরী— পানকৌড়ি, এবঙ আর্চ; আরও ও বুনো চিঠির আড়াল!

প্রার্থনা~

তোমার নিভু রোদের হৃদয়; আলোর হসন্ত— রুদ্ধ প্রজাপতি— কাঁপে।

পথের বাঁকে— কোঁচ খাওয়া রুই-এর মতো— কিছু ভাঁটফুলে!

যেনো তাঁর রঞ্জিত বাগান আমি সুপ্ত করে নিয়েছি, কয়েক প্রস্থ বালিরঙ বার্মিজ চিঠিতে—।

এখন ধূসর মুহূর্ত, রক্তিম কাঠেরপুতুলগুলো এ সময় অলিভ বনের গভীরে; ত্রস্ত ডাল-পালা বদল করে নেয়।

রিপুতে বিবর্ণ উন্মুখ হয়ে উঠে; পাখি’রা।

বিশুষ্ক সৈনিকের বুট পরে থাকে— যেখানে সেখানে!

ওই মরচে ধরা বৃক্ষের আড় হতে আমি তাঁকিয়ে রব— আর অতি-দীন কোন কাঠের দূর-কোরকে।

‘সন্ধ্যা’ ছিল হৃদয়বান, শৃগালত্ব প্রাপ্ত। দীর্ঘ গোধূলী— কোন বকুলের বন’কে ধরাশয়ী করে যাওয়ার মতন।

এই গিরিবাজ দ্যাশে ‘সে কি এখনও বেঁচে আছে!’

সারাইখানায় যেমন বেদনা; আতিথ্যপূর্ণ চিত্রকল্প, সৈন্যদের ঢাল চর্ম; অতৃপ্ত প্রেমের বিপদগ্রস্ত কোন গোলাপ থাকে!

রেদ-উম প্রাণময়— ‘তুমি’’ মৃতই। এবং তুমি ‘জ্যাঁ’ অনুভব।

তুমি কি প্ররোচিত ইতিমধ্যে?

প্রতিকূল সৈনিকের ইন্দ্রজাল এর মতোন পৃথিবীর এককোণে কয়েক ফুট প্রাচীর ও কয়েক রকম উদ্ভিদ ?

অশ্ব আর তুমিও কি পাশাপাশি-ই রবে! পথের অলস কাঁকড়, তিতির পাখি, ঐ জীবনের উপত্যকা; খুঁটে নিচ্ছে বাতাস।

আর উত্তাল কবিতার— ছোটো ছোটো ডলফিন!

উঁচু দরোজা ~

অপ্রস্তুত আমিও, এই ভালোবাসা, বুদ্ধের গভীরে এসে!

সমুদ্রের গ্রন্থছেঁড়া স্বভাবের সাথে ঢেউ-তরুদের সচ্ছলতা এই, বারংবার গ্রথিত হবার পরেও— মৃদু আহ্বানেও ওরা আসে, দাঁড়ায়।

যথেষ্ট আনমনা না হলেও কি সমুদ্রতীরে; অদ্ভুত সব— শ্লোকের সোয়ালো হারাতো না প্রায়ই?

লোকশ্রুত অতল নিয়ন্ত্রণ ফেলে, আসে কে ডুবোকাঠের মতো হৃদয়ে?

ভেজা বালিয়াড়ির উপর, অন্তর্লীন কারুবাসিনী— রেখা-বিশাখায় কর্তিত হতে চায় সমস্ত রাত; কিসের অনুভব এ?

প্রিয়তর রক্তনদীর বোনভয়ে; নিহত হয় নি উষ্ণতা? অধ্যয়ন— না কি এই রাত্রি নিভিয়ে— উড়ে যাওয়া ‘সে’ নভোহাঁস!

দূরপনে দ্বৈপায়ন~

মার্কোপোলোর সেই পরিভ্রমণ এখনো: কি রকম?

বিস্মিত হই: চিত্রে তাই— দাগ, কোন, কাওয়া, যে রকম পেন্সিলভেনিয়া বেঁচে আছে হৃদয়ে!

মুখের এক ভাগে জড়োসবুজ গ্রাম— চেরাই করা রাস্তার পাশে পোড়ামাটির ফুটকেয়ার— গুল্মতা— আড়— থমথমে ভুবন পাশ।

জীবন এখন একটা থাবার মতো থমকে আছে, আশ্চর্যের তাঁর হলো— করতল বলতে পেয়েছি মর্মস্থ এক বড়ো পাঁপড়ি।

কুন্তল দিয়ে রুদ্ধশ্বাস প্রতিকার না হলেও—,  কালগর্ভে লাপিজিয়াম শুষে নেবার সময়, এডেনিন বুনোকৌশলগুলো— দিঘি পাশ এ ঘুরে বেড়াবার।

আজও একই ভাবে সিমেট্রি—রেস্তোরাঁ— এমন’কি রাতভর স্কাইলাইট দেখি।

কেন প্রলুব্ধ করো পাথর পেরুতে? বালিরপ্রস্থ পেরুতে— ?

প্রেরণার কোনও সঠিক তৈজস যেমন ধারণ করে নিতে পারে , গাঁদা ফুলের ছোট্ট প্রকাশিত শরীর।

যেন পাতাঝরার মৌসুমেও এমন একটি রঞ্জনবন্ধু তোমার থাকে।

যে পরিভ্রমণ করে। কালির নিবে— পথে— অর্গানে— রঙে— আকাশের তুলোধুনো গুঞ্জনে

যে পৌঁছোয় ও পৌঁছাতে পেরেছিলো।

~শীতেরদিকটায়

রাতের রাস্তায়— ধূসর বেড়ালও মনে হয় দূরপাল্লার।

ঘুমন্ত শরীরে ঋষিকাজ করে চলে নভোনীল!

অশ্বথ-প্রতিচ্ছবি যখন আয়নার সামনে; স্লেজ-রেডিওতে বালি চক; বর্ণভাঙে!

আবছায়াতে নির্বাপিত ‘তাকে’ জানিয়েছো, নিবৃত্তি থাকবে।

ইস্পাতে অগ্নিকুয়াশা; স্থিতিস্থাপক ধূলিকণা; অবসরবিহীন তাড়না— রাখো!

কর্ণের অক্ষয়— সবকটি সিলোগ্রামঝরা তক্ষক, নিমেষে শেষ হয় না।

তুমি ভিজে কাঠ, ভেসে যাও। বৃক্ষের মেঘের বিভোর শূন্যতা থেকে!

অজ্ঞাতের থিওরেম~

কাঠের পুরুষ্টু  বাকলে যখন, ভলিউমের মিহিন একাগ্র রকমের চিরে যাওয়া শুরু হয়— তখনই কেবল  মনে হতো, গাছের ব্রত সম্পর্কে!

‘সেতু আপা’ কি বৃক্ষে আরও চুপ করে থাকতে চায়?

সেই দ্বীপে ফিরিনি, সে দ্বীপে এত কমলালেবু ঝরেছে যে, ফেরার গুরতর প্রয়োজন নেই।

আমি তো ভ্রান্ত না যে, হেলেদুলে যাচ্ছে বলেই একটা বাসে উঠে যাবো।

অরুন্ধতি যে নীরব না, সেটা তো অরুন্ধতি নক্ষত্রের নিজে জানাতে হয় নি।

মেঘগুলোর প্রত্যয়ও উচ্চারণ, এতকাল পরে বৃষ্টি না হলেও।

আশ্চর্য ট্রিকারি বৃষ্টিতে, যুক্তাক্ষর বোঝানোর নানান সময়ে, সে পরিস্ফুট করে চলেছে, বহুবর্ণ নগরীর রুদ্ধ’পা।

এই ক্রমধূসর ব্যাপটাইজিং, দীর্ঘ বৃষ্টিতে— সে নক্ষত্র নারী’টিকে আরও আর জীর্ণ না করি।

উন্মদিন কীর্তন শেষ হলে~

রেলের পাতে স্লিপারগুলো দেখেছো?

সামান্য দূরের কালভার্টে; মনে হতো; নিশুন্য হওয়ার যুগে এসে গেছি!

রেলে বস্তির কোন মোরগ— যখন দ্রুতলয়ে ছুটে; ওর পালকগুলো দ্যাখো— রঙ অস্ফুট দীর্ঘশ্বাস যেনো!

রেলের পাত ধরে হাঁটলে— বৃক্ষের এমন দৈত্যদশা দেবদারু চোখে পড়লে— বায়ুতাড়নে ঊর্মিমুখর— আদ্রতা।

মগ্ন অনুপম— এত পাশবিদীর্ণ দীঘল বৃক্ষ— তন্ত্রীদের বাদামী সবুজ থামের ভিতর— ধবল বকের লুকিয়ে থাকা আরোহীরা— কি রকম তূর প্রহরণ— নিয়ে এলো আজো!

কি করে আকাশ অবতীর্ণ হলো, অন্তত এই কালভার্টের তলায়—?

রেলের নিঝুম কর্ণ ধরে— পা রোজ প্রত্যাবর্তিত হতো।

রণনৈপুণ্য একভিড় মেষ কেয়ানুশ, ভিজে ট্রেনের জনপদে— শোণিতপিপাসু সেনানীভেঙে চলে গেছে—।

মসীবর্ণ নদী থেকে অনাবিল ভাবতার— আমাদের খুঁজতে এসেছিলো।

(Visited 164 times, 1 visits today)

Leave a Comment