মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের কসমোজাহি উপন্যাসটি ক্রাইম থ্রিলার ঘরানার। মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের ক্রাইম থ্রিলার ঘরানারই আরেকটি উপন্যাস অগোচরা একই বছর প্রকাশিত হয়েছে। কসমোজাহি নিয়ে অনেকদিন ধরেই বিভিন্ন আলোচনা চলছিল পাঠক মহলে। বিশেষ করে এর নাম একটু আশ্চর্যরকম ভিন্নই বটে, ’কসমোজাহি’। নামটি এক চোখধাঁধানো গভীর ষড়যন্ত্রেরই আভাস যেন ধরে আছে এর পাঁচটি অক্ষরের সমবায়ে।
বইটি পাঠকদের থামতে দেয় না। শেষ হওয়ার আগ অবধি রুদ্ধশ্বাস এক পরিক্রমা শুরু হয় পাঠকদের। আর এর ভাষা এত স্বচ্ছ আর প্রাঞ্জল যে, পড়তে পড়তে মনে হয় লেখক আমাদের চোখের সামনেই সবকিছু উপস্থিত করছেন। সেইসাথে রয়েছে টুইস্টের অনবদ্য সব ব্যবহার।
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের কসমোজাহি উপন্যাসের ঘটনাপঞ্জি শুরু হয় কক্সবাজার থেকে, কাহিনীবিন্যাস এরকম, ডেভিড রিচার্ড নামে জাতিসংঘের একজন সুইস কর্মকর্তা, তিনি রোহিঙ্গা শরনার্থীদের জন্য কাজ করেন। সদ্যই তিনি কক্সবাজারে এসেছেন, এসেই তিনি জায়গাটার প্রেমে পড়ে গেছেন। তার হোটেল একদম সৈকতসংলগ্ন, সেখানে মেরিন ড্রাইভের ৯০ কিলোমিটারের যে রাস্তাটি টেকনাফ পর্যন্ত গেছে সেই পথ দিয়েই তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতায়াত করেন। স্বাস্থ্যসচেতন ডেভিড প্রতিদিন ভোরে জগিং করতে বের হন। সবসময়ই শান্ত, নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে জগিং করলেও, একদিন তিনি পূর্বনির্ধারিত জায়গা থেকে জগিং শেষে ফেরার পথে সৈকতের পাশে যে কতগুলো বালির ঢিঁবি রয়েছে তাদের একটাতে কুকুরদের অস্বাভাবিক তৎপরতা দেখে থেমে পড়েন। তার নিজেরও কুকুর রয়েছে, ফলে তিনি কিছু একটা গণ্ডগোলের আভাস লক্ষ্য করে তাদের দিকে এগিয়ে যান। তিনি লক্ষ্য করেন কুকুরেরা ঢিঁবি থেকে কিছু একটা টেনে বের করার চেষ্টা করছে, কাছে যেতেই ডেভিড স্তম্ভিত, অনড় এক বাস্তবতার মুখোমুখি হন। কুকুরেরা আর কিছুই নয় সেই ঢিঁবি থেকে বের করছে একজন মানুষের দেহ। মানুষটি মৃত, আর পরে জানা যায় আমেরিকান নাগরিক।
কিন্তু কেন তার মৃত্যু হলো, কী অপরাধই বা তার, আর কারাই বা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে। সেসব ঘিরেই রহস্য লতিয়ে ওঠে। এই ঘটনার তদন্তভার একসময় এসে পড়ে ইন্সপেক্টর গরীবে নেওয়াজের কাছে। তিনি তার একটি অসমাপ্ত কেসের সাথে এর যোগ খুঁজে পান। আর অন্যদিকে কাহিনীটি ভিন্ন এক অবতলের খোঁজ পাওয়ার সাথে সাথে এর গল্পটাও বদলে যায়, বদলে যায় ব্যাখ্যা, দেখার চোখ। আমরা জানতে পারি এসব চলমান ঘটনাগুলোর মূলে আছে ‘কসমোজাহি’। কিন্তু সেই গভীরতায় গরীবে নেওয়াজ আর সেইসাথে পাঠকদেরও— যেতে হয় অবিশাশ্ব্য সব পথ অতিক্রম করে, যেখানে পদে পদে জাল বিস্তার করে আছে রহস্য, ভয় আর সত্য আবিষ্কারের অদম্য ইচ্ছাশক্তি।
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের কসমোজাহি পাঠকদের থামতে দেয় না। শেষ হওয়ার আগ অবধি রুদ্ধশ্বাস এক পরিক্রমা শুরু হয় পাঠকদের। আর এর ভাষা এত স্বচ্ছ আর প্রাঞ্জল যে, পড়তে পড়তে মনে হয় লেখক আমাদের চোখের সামনেই সবকিছু উপস্থিত করছেন। সেইসাথে রয়েছে টুইস্টের অনবদ্য সব ব্যবহার। ‘কসমোজাহি’ মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন-এর নিজস্ব সাক্ষরবাহী, বইটি পাঠকদের ভালো লাগার সাথে সাথে অবশ্যপাঠ্য হয়ে উঠবে এটা জোর দিয়ে বলা যায়। এর সঙ্গে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন যে থ্রিলার লেখক হিসেবেই থাকতে চান না তার প্রমাণ দিয়েছেন সম্প্রতি ২০২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে গল্পসংকলন জুলাইর গল্প সম্পাদনা করে। তার সম্পাদিত বইটিও পড়া যেতে পারে।
কসমোজাহি
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
প্রকাশক : বাতিঘর প্রকাশনী
পৃষ্ঠা : ২৪০
দাম : ৩৮০ টাকা
প্রকাশসাল: অক্টোবর ৩০, ২০২৩।
