বাহিরানা

জলমগ্ন পাঠশালা— কাজল শাহনেওয়াজ— সময়ের পূর্বাপরকে ধরে রাখা কবিতা


কোনো কোনো বই একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রকাশিত হয়ে সেই সময়ের পূর্বাপরকে নিজের মাঝে বন্দী করে ফেলে। এরপর কালক্রমে বইটিকে আর সহজে কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না। কিন্তু কিছুকাল পরপরই কোনো না কোনো প্রতিভাবান তরুণ, তরুণী তাকে খুঁজতে থাকেন। তারা বিফলও হন না, কেননা একবার শোনা গিয়েছিল উত্‍পলকুমার বসুর “পুরী সিরিজ” বইটিকে একজন মূল্যবান দ্রব্যাদী থাকা তার আলমারীতে ঢুকিয়ে রেখেছিলেন। কাজল শাহনেওয়াজের, “জলমগ্ন পাঠশালা” তেমন এক কবিতার বই। যেটি আছে কিন্তু অনেক গভীরে, তাই সহজে দেখা যায় না, কিন্তু কবিতার বৃহৎ সমুদ্রে নাবিকরা বারাবার এর খোঁজ করে। কারণ কোথাও না কোথাও সব দেশেই আলমারিসমেত একজন পাঠক রয়েই যান যাঁর কাছে গোপন এ্যামারাল্ড পাওয়া যায়।

বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৯ সালে, আর এর ঠিক ৩৪ বছর পর বৈতরণী এবারের একুশে বইমেলায় আবার একে পাঠকদের সামনে নিয়ে এসেছে। সেই “পুরী সিরিজ”কে রক্ষা করা পাঠকটির মতো, তবে বৃহত্‍ আকারে। কারণ, বইটিকে এখন ইচ্ছে হলেই হাতে নেওয়া যাবে, কেনা যাবে। এটা বাংলা সাহিত্যে একটি বড় আনন্দের ঘটনা। বৈতরণী সেই আনন্দমুহূর্তটি তৈরি করে দিল।

বইয়ের কয়েকটি কবিতায় চোখ বোলানো যাক,

“আজ আমার চোখে কুয়াশা অবিকল

অঘ্রাণের খামার বাড়িতে একজোড়া

পুকুরেরই মতো’’

(হাইড্রলিক)

“এমন সময় সোনার গাভি এসে মুখ দিল হীরের ঘাসে

ওয়ার্কশপে যন্ত্রপাতির কাছে

আমি ঘষে যাই লোহার কবিতা

এক একা’’

(রহস্য খোলার রেঞ্চ)

তাঁবুর ভেতর মরা রোদের ঘোর লাগা বিষণ্ন ছেঁড়া পর্দা

টগবগে চৌবাচ্চা, উপচে পড়ে যাচ্ছে সবুজ খেলার মাঠে ট্রেন

একা একা চলেছি আলোর স্টেশন থেকে

বৃষ্টির ভেতরে, সবুজ ট্রেনে আজ কামরার দুলুনি—ঝিরঝির ঝিরঝির

(হেরোইন)

যন্ত্রসভ্যতার ভেতর থাকা খোদ যন্ত্রটিকেই তিনি ধরতে চান। আবার, গ্রাম আর নগরকেও, যারা অতীত থেকে ফিরে আসতে আসতে এখন আর ঠিক আগের  মতো নেই,  বদল ঘটেছে তাদের। সেইসাথে সময়েরও। বইয়ের ঊনচল্লিশটি কবিতায় কাজল শাহনেওয়াজ এই বর্তমানকালকেই অতীত আর ভবিষ্যতের সাথে যুক্ত করেছেন তার নতুন কবিতায় এবং নতুন ভাষায়। যে নতুনত্ব তার পরে আসা কবিদের অন্যতর নির্মাণের নিশানা দিচ্ছে। দেবেও, এটা বলা যায় স্পষ্ট করেই।

“কবে থেকে

টুকটাক ধাতুখণ্ডদের সাথে কথা বলি

গল্প বলি নেবুলার বড় হয়ে ওঠা

মহাকাশযানের আজীবন একা থাকা

চতুর্থমাত্রায় অনন্ত জীবন

কোয়ার্ক নাম ধরে ডাকি, ওগো দরোজা খোলো, জানালা খোলো

আমার কথা শোনো

কিউব, ট্যাপার আর গিয়ারের ফুলেরা”

(রহস্য খোলার রেঞ্চ)

 

জলমগ্ন পাঠশালা

কাজল শাহনেওয়াজ

প্রকাশক: বৈতরণী

দাম: ৩০০ টাকা

বইটি কিনতে:

জলমগ্ন পাঠশালা – বাহিরানা (bahirana.com)

(Visited 86 times, 1 visits today)

Leave a Comment