বাহিরানা

মো: ফুয়াদ আল ফিদাহ-এর অনুবাদে স্টিফেন কিংয়ের দি আউটসাইডার: পুরনো স্টিফেন কিংয়ের স্বরূপে ফেরা


স্টিফেন কিং সবসময়য়ই তাঁর পাঠকদের পরিচিত, অপরিচিত কাহিনিবিন্যাসের মাঝে বাস্তবতার অজানা এক সমীকরণের মুখোমুখি করেন। এক সময় পাঠক যাকে বাস্তব বলে বিশ্বাস করতেন তখন তাকে অবাস্তব লাগে, আবার উল্টোটাও সত্য, যেমন পাঠকদের কাছে অবাস্তবকেই তখন বাস্তব বলে বোধ হয়। আবার, তার বইয়ের উপসংহার প্রায়শই হয় বাঁকঘোরানো বা একশব্দে তাকে বলা যায় স্টিফেনীয়। তাঁর লেখার এই চারিত্রলক্ষণ প্রথম উপন্যাস হরর ঘরানার ‘ক্যারি’ থেকেই শুরু হয়েছিল। আর সেই বইয়ের অবিশ্বাস্য সাফল্য থেকে তার যে উত্থান সেটা তিনি অব্যাহত রেখেছেন ভালোভাবেই। বারবারই নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। তা আমরা ভালোভাবেই দেখতে পয়েছি, যেহেতু সংখ্যার হিসেবে সারা পৃথিবীজুড়ে তার বইয়ের বিক্রি চারশ মিলিয়ন কপিরও বেশি।

দুই হাজার আঠার সালে প্রকাশিত স্টিফেন কিংয়ের দি আউটসাইডার গোয়েন্দা উপন্যাসটিতে আমরা আবার সেই পুরনো কিংকে নতুন করে দেখত পাই। দি আউটসাইডার উপন্যাসের গোয়েন্দা হলি গিবনি নামের যে চরিত্র আছে, ২০২৩ সালে স্টিফেন কিংয়ের এই চরিত্রের নামেই হলি শিরোনামের উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। মি. মারসিডিস (২০১৪) উপন্যাসে প্রথম আমরা দেখতে পেয়েছিলাম হলি গিবনি নামের চরিত্রকে।  স্টিফেন কিংয়ের দি আউটসাইডার বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন মো: ফুয়াদ আল ফিদাহ।

এখান থেকেই সমান্তরালভাবে আরেকটি ঘটনা ঘটতে শুরু করে, যেটি এতদিন সবার নজর এড়িয়ে গেছে। বিষয়টি হলো, টেরির হত্যাকাণ্ডের অনুরূপ আরেকটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল অন্য এক শহরে। এই যোগসূত্রটি আবিষ্কার করে গিবনি, আর তার আবিষ্কারকে আরও বড় পাটাতনের উপর দাঁড় করিয়ে দেয় যখন জানা যায় কে যেন টেরির মেয়ে গ্রেস আর রালফের স্ত্রী জেনীকে হুমকি দিচ্ছে।

বইটির কাহিনী এরকম, যৌন নিপীড়নের পর নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ফ্রাংক পিটারসনকে। তার হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের দায়িত্ব পড়ে ফ্লিন্ট সিটি পিডির গোয়েন্দা রালফ অ্যান্ডারসনের উপর। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে দ্রুতই সে গ্রেপ্তার করে শহরের জনপ্রিয় ইংরেজির শিক্ষক এবং কোচ টেরেন্স মেইটল্যান্ডকে। সে-ই যে খুনি সে বিষয়ে রালফের মনে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বিপত্তি ঘটে যখন হঠাতই টেরেন্সকে আদালত চত্ত্বরে খুন করা হয়। আর কে সেই খুনী সে বিষয়েরও কোনো হদিশ জানা যায় না। ফলে কেস বন্ধ হয়ে যায়।

তবে টেরির স্ত্রী ও তার উকিল হাওয়ার্ড গোল্ড বিষয়টিকে সহজে ছেড়ে দিতে রাজি নয়। তাদের কাছে এটি জীবন মরণের প্রশ্ন। ঘটনাগুলো যখন এরকম জট পাকানো তখনই আগমন ঘটে হলি গিবনি নামে এক চৌকষ ডিটেক্টিভের, ফাইন্ডার্স কিপার্স নামক এক প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করে সে। সে এসেই এই রহস্যজনক কেসের একের পর এক মিসিং লিংক খুঁজে পেতে শুরু করে। আর এর ফলে পুরো ঘটনাটাই যেন নতুন দিশা পায়। এখান থেকেই সমান্তরালভাবে আরেকটি ঘটনা ঘটতে শুরু করে, যেটি এতদিন সবার নজর এড়িয়ে গেছে। বিষয়টি হলো, টেরির হত্যাকাণ্ডের অনুরূপ আরেকটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল অন্য এক শহরে।

এই যোগসূত্রটি আবিষ্কার করে গিবনি, আর তার আবিষ্কারকে আরও বড় পাটাতনের উপর দাঁড় করিয়ে দেয় যখন জানা যায় কে যেন টেরির মেয়ে গ্রেস আর রালফের স্ত্রী জেনীকে হুমকি দিচ্ছে। কে সে? তখন আরো দুইটি প্রশ্নও মাথা তুলে দাঁড়ায়, শহরের জনপ্রিয় নাগরিক টেরি মেইটল্যান্ডের সহজ-সরল ভদ্রতার আড়ালে কি আরেকটি মানুষ রয়ে গেছে? যাকে কেউ চেনে না? আর কে-ই এই লোক যে টেরিকে হত্যা করেছে?

স্টিফেন কিংয়ের গোয়েন্দা উপন্যাস দি আউটসাইডার পুরো বইটিই কিংয়ের নিজস্ব সাসপেন্সে ভরপুর। আগে থেকে কিছুই জানা যায় না, তবে অনুমান করা যায়। সবকিছুই অনিশ্চিত, কিং যেন পাঠকদের স্ফিংসের ধাঁধার সামনে ফেলে দেন।

মো: ফুয়াদ আল ফিদাহ অসাধারণ দক্ষতার সাথে অনুবাদ করেছেন উপন্যাসটি। স্টিফেন কিংয়ের লেখায় যে বাঁকগুলো থাকে, সাসপেন্স থাকে—সেগুলোকে সহজভাবে বাংলা ভাষায় নিয়ে আসাটা কঠিন। অনুবাদক সেদিকে পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছেন এবং সফলও হয়েছেন, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। স্টিফেন কিংয়ের দি আউটসাইডার কিংয়ের পাঠকসহ সব ঘরানার পাঠকদের ভালো লাগবে, এটা বলা যায়।

স্টিফেন কিং
অনুবাদ: মো: ফুয়াদ আল ফিদাহ
প্রকাশনী: শিরোনাম প্রকাশন
প্রকাশকাল: ২০২৩
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৪৪৮
মূল্য: ৭০০টাকা।


মন্তব্য করুন