সম্প্রতি কবি, প্রাবন্ধিক ও শিশু সাহিত্যিক এহসান হায়দারের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে “সারাদিন বেড়ালের সঙ্গে” (বেড়াল বিষয়ক গল্প সংকলন) । বইটির প্রকাশক দ্যু প্রকাশন, মুদ্রিত মূল্য ৮৫০ টাকা। এই উপলক্ষ্যে বাহিরানা থেকে আমরা তাঁর সাথে কথা বলেছি, তাঁর সাহিত্য, সম্পাদনা ও লেখালেখির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে। তিনি যখন “এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার” সম্পাদনা করেছিলেন তখন সেটি দুই বাংলাতেই পাঠক, সমালোচক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল, সেটি এখনও অব্যাহত। তিনি মূলত কবি, কিন্তু সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় আগ্রহ নিয়ে কাজ করেন, যেমন শিশু সাহিত্য এবং প্রবন্ধে তিনি ইতোমধ্যেই মৌলিকতার সাক্ষর রেখেছেন। বিনয়ের পর একদম বিপরীত মেরুর কাজ “সারাদিন বেড়ালের সঙ্গে”। পাশ্চাত্যের রেনেসাঁসের পরবর্তীকালে পৃথিবীজুড়েই মানুষ নির্দিষ্ট দক্ষতার পরিধিতে আটক হয়ে পড়েছে, সেখানে এহসান হায়দারের সাহিত্যের এত বিচিত্র বিষয়ে আগ্রহের কারণ নিশ্চয়ই তার জীবন এবং লেখাপত্রে পাওয়া যাবে। বেড়াল নিয়ে বইটিসহ তিনি আমাদের সঙ্গে তাঁর সাহিত্যিক হয়ে ওঠার পর্ব থেকে সম্পাদনা— সব বিষয়েই কথা বলেছেন।
বাহিরানা : সাহিত্য বিষয়ে পঠন এবং লেখালেখিতে আগ্রহী হওয়ার গল্পটা আমাদেরকে জানাবেন?
এহসান হায়দার : সাহিত্য বিষয়ে পঠন বলতে চাই যদি— তবে তা আমার শুরু থেকে পরিকল্পিতভাবে হয়নি। আমাদের গ্রামের বাড়িতে বই এবং পত্রিকা ছিল প্রচুর। বাবার সুবাদে রাশিয়ান বই থেকে শুরু বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্য পড়া হয়েছে অনেক বেশি। সে সময়ে বিভিন্ন জনরার বই পড়তাম। বলা চলে, ছেলেবেলায় যা সামনে পেতাম তা পড়তাম, এমনও সময় গিয়েছে— দিনে ক্লাসের পড়া শেষ করে রাতভর কুপির আলোয় বাইরের বইপত্র পড়তাম। পাঠ্যবইয়ে লেখকদের পরিচিতির সঙ্গে ভালো বইগুলোর একটা তালিকা থাকতো। আমি সেইসকল বই আমার বড় ভাইয়াকে চিঠি লিখে কলেজ ছুটির সময়ে কিনে আনতে বলতাম। তবে ঐ সময়ে সবচেয়ে আকর্ষণ ছিল আমার রূপকথা, গোয়েন্দা সিরিজ, থ্রিলার, কমিক্স, ইতিহাসভিত্তিক গ্রন্থ। আর বেশ কিছু পত্রিকার নিয়মিত গ্রাহক হয়েছিলাম তখন, যেমন ধরুন— সন্দেশ, শিশু, টইটুম্বুর, কিশোর ভারতী, টুকলু, বিজ্ঞান সাময়িকীসহ কারেন্ট ইস্যুভিত্তিক কিছু পত্রিকা এবং ম্যাগাজিন।
আমি গির্জার স্কুলে পড়েছি, সেখানকার লাইব্রেরিতেও প্রচুর বইপত্র পেয়েছিলাম, তাও পড়া শুরু করি। পরে অবশ্য বেশি ঝুঁকে পড়ি ছোটকাগজের দিকে। বাংলাদেশ এবং ভারতীয় ছোটকাগজ সংগ্রহ করতাম— তা পড়া হতো। এরপর ধীরে ধীরে বড়দের সাহিত্যও পাঠ শুরু হয়, এসব আমি লেখার জন্য পড়ি নাই— কেবলমাত্র ভালোলাগা থেকে পড়তাম।
এবং সাহিত্যবিষয়ক সিরিয়াসলি পঠন যদি বলি তবে মাধ্যমিক স্তর শেষে তা শুরু করি— এ সময়ে ত্রিশপরবর্তী আধুনিককালের কবিদের পড়তে থাকি। আমার এক চাচা ছিলেন— তিনি মঞ্চনাটক করতেন, তিনি দিয়েছিলেন আমাকে মাইকেল মধুসুদন দত্ত’র ‘মেঘনাদ বধ’ আর শহীদ বুদ্ধিজীবী লেখক আনোয়ার পাশা’র ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ বই। এ দুটি বই অনেক সময় নিয়ে পড়েছিলাম। এর বাইরে আর কথাসাহিত্যও বেশ পড়েছিলাম। এভাবে ধীরে ধীরে সাহিত্যের ইতিহাস, সামাজিক ইতিহাস এবং এপিকগুলি দেখতে শুরু করি। এগুলি সাহিত্যবিষয়ক পঠন বলবেন কী?
একটা ঘটনা বলি, আমাদের গ্রামে পুজোর সময় নিয়মিতভাবে একটা সাহিত্য পত্রিকা বের হতো। সেই পত্রিকায় লেখার জন্য এলাকার সব ছেলেরা, মেয়েরা মুখিয়ে থাকতো। একটা শক্তপোক্ত এডিটোরিয়াল বোর্ডও ছিল। ওঁরা নির্বাচন করতো লেখা। পুজোর অষ্টমীতে পত্রিকা প্রকাশ করা হতো, যাদের লেখা ছাপা হতো এ পত্রিকায় তাদের মধ্যে একটা বিরাট অহংকার দেখতাম চলাফেরায়। এছাড়া স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ শহীদ দিবসেও বিশেষ দেয়ালিকা প্রকাশ পেত। ফলে শিল্প-সাহিত্য চর্চায় একেবারে এতটা গ্রাম পর্যায়ে যথেষ্ট এগিয়ে ছিল আমাদের এলাকা।
আমি ছুটি পেলে থানা শহর থেকে বাড়িতে এসে এসবের মধ্যে যুক্ত হতাম। তখন লিখতাম না, তবে পড়তে পড়তে একদিন লিখতে শুরু করেছিলাম। কাউকে দেখানো হতো না সেসব। বাবা প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর একটা ডায়েরি উপহার দিতেন। সঙ্গে বড় দিনের লাল-নীল-বেগুনী বেলুন আর চকোলেট। দারুণ আনন্দ হতো। তখন ডায়েরি লিখতে শুরু করেছিলাম। মাঝে মাঝে ছন্দে মিলিয়েও লিখেছি। না কবিতা না ছড়া।
যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, প্রথম লেখাটা আমাদের অঞ্চলের ‘সুপ্তি’ পত্রিকার জন্য দিই। লেখাটা পরের বছর শীতে ‘বরষা’ নামক উন্মুক্ত সাহিত্যপত্রে ছাপা হয়।
বাহিরানা : কবিতা আর শিশুসাহিত্য— এ দু’টো মাধ্যমে কাজ করার প্রতি ভালোবাসা কী করে জাগ্রত হলো?
এহসান হায়দার : আমার শুরুটা হয়েছিল ছোটদের জন্য কিশোর কবিতা দিয়ে— কারণ তখন আমি একেবারেই স্কুল লেভেলে পড়ি। এক সময়ের চালনা বন্দর নগরী বলে এ অঞ্চল খ্যাত, এখানেই আমি বেড়ে উঠেছি। আমার জন্মস্থান খুলনার দাকোপ, চালনা থেকে গ্রামের বাড়িতে যাতায়াত করতে হতো লঞ্চ, ট্রলার আর টাবুরি(ছইঅলা নৌকা)তে করে। নদী অঞ্চল, কাছেই সুন্দরবন। এই প্রকৃতির সঙ্গে বেড়ে ওঠা আমার শিশুসাহিত্য বিষয়টা সব সময় মাথায় ঘুরতো, হয়তো বয়সের জন্যও। তাছাড়া শিশু-কিশোরদের বই অতোটা গোগ্রাসে গিলবার জন্যও হতে পারে, শিশুদের জন্য কাজে বিশেষ আগ্রহ পাই। এখন নিজের শৈশব আর ছেলেবেলাকে ভাগ করে নিতে চাই। এবারে কবিতার কথা বলি— কবিতার জগতে ঢুকে পড়াটা ছোটকাগজ থেকে।
আমি প্রথমে দেয়াল পত্রিকা সম্পাদনা করতাম, নাম ছিল সপ্তবর্ণা। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি সেই সময়ে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়বার সময়ে ‘বারুদ’ নামে ছয় লাইনে ছড়া বিষয়ক কাগজ করেছিলাম ফটোকপি করে, পিন বাইন্ডিং ছিল সেটা। তারপর ‘শিশির’ নামে একটা ভাঁজপত্র, পরে ছোটকাগজ করি কলেজে ঢুকে। এ সময়ে আমি খুলনায় ছিলাম। স্থানীয় সাহিত্য সংগঠনগুলোতে নিয়মিত যেতাম। বিশেষত শুক্রবার সকাল থেকে এইসকল সাহিত্য সংগঠনে স্থানীয় তরুণ-প্রবীণ কবি-লেখকদের আনাগোনা দেখতাম। তাদের কাঁধে কোনো ঝোলা থাকতো না অবশ্য, তবে স্থানীয় কলেজগুলোর বাংলার তরুণ শিক্ষকদের দেখেছি তখন হাতে মোটা ডায়েরি কিংবা কলেজে সদ্য ঢোকা তরুণীকেও মোটা ডায়েরি নিয়ে হাজির হতে। তাতে লেখা থাকতো কবিতা, নয় গল্প। কারও কারও নিউজপ্রিন্টের খাতায় ধারাবাহিক উপন্যাসও। আমি কবিতা পড়তাম না, শুনতাম কারা কী লিখছেন। খুলনা থেকে তখন বেশ কয়েকটি ছোটকাগজ হতো। উদিচির সালেহ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তখন বের করতেন— ‘কাকতাড়ুয়া’। ভালো হতো কাগজটি।
অনেকেই আসতেন সে সময়ে, কেউ কেউ এখনও লেখেন শহরে। খুলনাতে তখন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান হতে ছোটকাগজগুলো বিক্রির জন্য যেত, আমিও তা কিনতাম। কবিতা তো একটা ঘোর, ভালোবাসার ঘোর, ভালো লাগার ঘোর— কবিতার ঘোরে কখন ঢুকে পড়েছি তা একেবারেই বুঝিনি।
বাহিরানা : শুধুমাত্র বেড়াল নিয়ে একটি সংকলন করতে উৎসাহিত হওয়ার কাহিনি ‘সারাদিন বেড়ালের সঙ্গে’ বইয়ের ভূমিকাংশে আছে। এ সম্পাদনাটি করতে গিয়ে আরও কিছু ভালোলাগার এবং মজার স্মৃতি আমাদের জানান।
এহসান হায়দার : বেড়াল আমার খুব পছন্দের একটি প্রাণী। এ প্রাণীটি সেই গ্রামের বাড়ি থেকেই আমার আপনজন। ফলে বেড়ালের প্রতি একটা আবেগ কাজ করেছে সর্বদা। বাংলা শিশুসাহিত্যে এবং বিশ্ব শিশুসাহিত্যে বেড়াল বিষয়ক লেখার সংখ্যা অনেক বেশি। কে লেখেননি বেড়াল নিয়ে— তা বলা মুশকিল। এরা উপকথা এবং ধর্মীয় কাহিনিতেও জায়গা করে নিয়েছে। অ্যালেন পো থেকে শুরু করে ভৈকম মুহম্মদ বশীর কিংবা সমকালের অধিকাংশ কবি-লেখক লিখেছেন, হয় গল্প না হয় কবিতা। অনেক লেখক-অভিনেতারা তো পালতেন, নিজের প্রিয় বেড়ালের সঙ্গে ছবি তুলতেন নানান পোজ দিয়ে। আমার এই বেড়াল নিয়ে কাজ করার সময় সব অদ্ভুত অদ্ভুত তথ্য পেয়েছি বেড়াল সম্পর্কে। কারও বেড়ালের ব্যবসা রয়েছে, কেউ বেড়াল পালতে পালতে বেড়ালের চিকিৎসক হয়েছেন।
গল্পকারগণ তাদের বেড়ালের গল্প লিখে পাঠানোর পর বলেছেন— বেড়ালের রংটা একটু বদলাবো, দিয়েন তো আরও একবার লেখাটা বদলাই। কেউ কেউ হেসেছেন— বেড়ালের সম্পাদক বলে। আমি এসকল কথায় একেবারে কর্ণপাত করিনি। নিজের কাজকে গুরুত্ব দিয়েছি কেবলমাত্র। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো— বিনয় মজুমদারকে নিয়ে বইয়ের কাজ শেষ করার পর হাঁপিয়ে উঠেছিলাম খুব, বোরিং লাগছিল সবকিছু, এজন্য এই কাজটা করি— রিলাক্সের জন্য।
বাহিরানা : যাঁরা ‘সারাদিন বেড়ালের সঙ্গে’ কাটিয়েছেন, তাঁদের অর্থাৎ সেই পাঠকদের প্রতিক্রিয়া কেমন?
এহসান হায়দার : পাঠকদের মন্তব্য নানানরকম। কেউ ভাবতেই পারছেন না, বেড়াল নিয়ে এত মজার একটা সংকলন হতে পারে। আবার কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে ভিন্নরকম মন্তব্যও করেছেন— কারণ বেড়াল তো আর মানুষের বাচ্চা নয়, তাকে নিয়ে সংকলন হবে কেন? এরকম অনেক মন্তব্য পেয়েছি যে— ‘কাজকাম নেই, বেড়াল নিয়ে সংকলন করছো?’ তবে আমি বলবো, ‘সারাদিন বেড়ালের সঙ্গে’ বইটি পাঠকদেরকে আকর্ষণ করেছে। বেড়াল দিবসে এবারে বইটি কিনেছেন অনেক পাঠক, তারা খুব পজিটিভলি নিয়েছেন বিষয়টি। আমি মনে করি গ্রন্থটি পাঠকের মন জয় করবে শেষমেশ।
বাহিরানা : ‘দিলরুবার বেড়াল’-এর মতো আরও কিছু গল্প কি আপনার থলেতে আছে? যা ইতোমধ্যেই বেরিয়ে পড়েছে বা পড়তে পারে?
এহসান হায়দার : হ্যাঁ, অনেক গল্প লেখা হয়েছে। বিশেষভাবে করোনাকালীন রুদ্ধ অবস্থায় সাতটি গল্প লিখেছি— একটি উপন্যাসও লেখা হয়েছে। গত ঈদের সময় দেশ রূপান্তর পত্রিকায় ‘টিটি বেড়াল’ নামের উপন্যাসটি ছাপাও হয়েছে। আমার লেখা প্রতিটি বেড়ালবিষয়ক গল্প দিয়ে একেকটি বই হতে পারে।
বাহিরানা : কবি বিনয় মজুমদার আপনাকে কেন আকৃষ্ট করেন?
এহসান হায়দার : বিনয় মজুমদার একজন কবি এবং গণিতজ্ঞ, তার সৃষ্টিতে আমি মুগ্ধ— তার জানার পরিধি বিস্তর। তিনি যা লিখেছেন, তা সবই যৌক্তিক এবং তিনি ভিন্নমাত্রার কবি। যদিও তার সমকালে তাকে কেউ মূল্যায়ন করেনি, প্রকাশকদের কারণে তাকে লিখতে হয়েছে এটা যেমন ঠিক, তেমনি নীরবে কবিজীবন যাপন করেছেন। কোনো বাগাড়ম্বর ছিল না তাঁর, ফলে বিনয় দ্বারা আকৃষ্ট হই বারংবার।
বাহিরানা : ‘এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার’ গ্রন্থটি সম্পাদনা ও বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন্ কোন্ বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন?
এহসান হায়দার : বিনয়কে নিয়ে বৃহৎ পরিসরে কাজ করার চিন্তা আমার কখনও ছিল না; কিন্তু যখন কাজে নেমে পড়ি তখন বিনয় সম্পর্কিত প্রচুর নতুন তথ্য পাচ্ছিলাম। ফলে কাজটিতে আনন্দ জুটে যায়।
এরপর বিনয় সম্পর্কে আরও পরিকল্পনা করি, সময় নিয়ে কাজটাকে পূর্ণাঙ্গ একটা সম্পাদিত গ্রন্থের রূপ দিতে চেষ্টা করেছি। বইটির মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বিনয়কে খুঁজে পাবেন পাঠক। এই গ্রন্থ বিনয়কে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে, ফলে বিনয় চিন্তা, বিনয় দর্শন, বিনয়ের কাব্যভুবন আমরা একসঙ্গে যুক্ত করতে চেয়েছি সমস্ত সূত্রকে একসুতোয় গেঁথে একটা বকুল ফুলের মালার মতো করে।
তবে সবশেষে মনে হয়েছে বিনয়ের নির্বাচিত কবিতাও যুক্ত করা উচিৎ ছিল। তাতে করে বইটির আকার আরও বৃহৎ হতো। সে কারণে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসি। আর বিনয়ের কবিতা তো রয়েছে, ধারাবাহিকভাবে ‘কবিতা সমগ্র’ সম্পাদনা করছেন কলকাতার প্রতিভাস প্রকাশনা সংস্থা থেকে তরুণ দা(শ্রী তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়)।
বাহিরানা : ‘এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার’ গ্রন্থটি প্রকাশের পর কী মনে হয়েছে— বিনয় সম্পর্কে আরও কিছু বিষয় বইটিতে স্থান পাওয়ার মত ছিল?
এহসান হায়দার : এখন তো মনে হয় আরও কিছু বিষয়ে বিনয় সম্পর্কিত লেখা যুক্ত হতে পারতো। যেমন— বিনয়ের গণিত ভাবনার জগৎ। বিনয় কেন কবিতাকে গাণিতিক পদ্ধতিতে দেখতেন সেসকল বিষয়ও। বিনয় সংগীত নিয়ে কেমন ভাবতেন, বিনয় দেখছেন সিগনেট গড়ে উঠছে— রোজ নতুন বই কিনছেন, কারও রচনা টানছে না তাকে— কেন? নানান বিষয় আরও যুক্ত হওয়ার দাবি রাখে বইটিতে। সেক্ষেত্রে এই বইটি আরও বৃহৎ হবে বটে এবং এমনও হতে পারে— এমনটি করতেও পারি। জানি না এখনও, সময় পেলে করবো নিশ্চয়ই কাজটা।
বাহিরানা : আপন কবিতাভুবনে কোন্ সে ভাবনা আপনাকে বিচলিত অথবা আশাবাদী করে?
এহসান হায়দার : আপন কবিতাভুবন মানে— আমার নিজের কবিতার জগৎ। ‘আলোর আঘ্রাণ’ আমার প্রথম কবিতার গ্রন্থ। ২০১৬ সালে প্রকাশ করেছিলাম, আমি নিজে। আমার কবিতা, সময় এবং আমি— এই বিষয় তিনটি আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ন। কবিতা মৌলিক এবং শিল্প আর তা ভীষণভাবে প্রবাহিত।
প্রতিটি নতুন কবিতা লেখার পর একটা নিজস্বতা তৈরি হয় নিজের ভেতর। সেটা প্রকাশ করাটা জরুরি। সারা পৃথিবীতে যে কবিতা লেখা হয়েছে গত একশ বছরে, তার প্রভাব এসে ধরা দেয় এখনকার সময়েও। ফলে পৃথিবীতে এখন যে কবিতা রচিত হলো তা গত একশ বছর আগেকার, আমি সেসব উপাদান কেবল অ্যাকোমোডেড করলাম আর কিছু নয়। আমি বলতে চাইছি— সময়ের মধ্যে আমাদের ভাবনা আবর্তিত হয়। এই আবর্তনেই রয়েছি আমরা সকলে। আমার কাছে কবিতার ভাবনাটাই জরুরি— অক্ষরজ্ঞানহীন একজন মানুষও মহৎ কবিতা রচনা করতে পারেন। কবিতার বিষয়টিই এখানে প্রকৃত, ধারণাটিই মুখ্য। এরসঙ্গে যুক্ত হয় প্রকৃতি আর আমাদের মুহূর্ত। এই দুইয়ের সম্মিলন ঘটে একটা চিন্তার উন্মেষের মধ্য দিয়ে। ফলে দেখুন এটা একটা গণিত। গাণিতিকভাবেই এটা হয়ে থাকে, কেউ ঘটনাটি মানবেন আবার না-ও মানতে পারেন।
আমি ভাবি কবিতার পিওরিটির বিষয়ে, এটা আমার কবিতার জগতকে আলোড়িত করে। এবং এ বিষয়ে আমি আশাবাদি।
বাহিরানা : কথাসাহিত্য অথবা সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় কাজের পরিকল্পনা আছে কি?
এহসান হায়দার : হ্যাঁ, সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় আমি কাজ করছি। তবে বিশেষভাবে উপন্যাসের প্রতি আগ্রহ রয়েছে আমার— ত্রিশের দশক নিয়ে, এই লেখাটা লিখতে চাই এবং থ্রিলারের প্রতি রয়েছে আমার দুর্বলতা।
পরিচিতি :
এহসান হায়দার(Ahasan Hydar) মূলত কবিতা লেখেন। পৈতৃক ভিটে— খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলাধীন গড়খালী গ্রামে। জন্ম— খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলাধীন পাটকেলপোতা গ্রামে মাতুলালয়ে। তিনি ছোটকাগজে লিখতে পছন্দ করেন। কাজ করতে ভালোবাসেন শিশুদের জন্য। এই কারণে নিজের ভালো লাগার সবটা জুড়ে থাকে শিশু-কিশোরদের দল। ‘রূপকথা’ নামে শিশু-কিশোরদের একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। পুরকৌশল বিদ্যায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। এখন কাজ করছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। প্রকাশিত গ্রন্থ: কবিতা : আলোর আঘ্রাণ; শিশুতোষ গল্প : লাল পাহাড়ের রহস্য, বোবাই, গাছেদের স্কুল; ভাষান্তর গল্প : তুর্কি রূপকথা; সম্পাদনা : ফুলেদের দ্বীপাঞ্চল(রূপকথা), এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার(যৌথ), সারাদিন বেড়ালের সঙ্গে(বেড়াল বিষয়ক গল্প সংকলন)।
বইটির বাহিরানা রিভিউ:
সারাদিন বেড়ালের সঙ্গে: বেড়ালের গল্প-সংকলন – বাহিরানা (BAHIRANA.COM)
বই কিনতে হলে
সারাদিন বেড়ালের সঙ্গে: বেড়ালের গল্প-সংকলন – বাহিরানা (BAHIRANA.COM)