বাহিরানা

বেহুলার বয়ঃসন্ধিকাল—আব্দুল আজিজ—যেগুলো সাধারণ জীবনের গল্প হতে পারতো


মামুনুর রশিদ তানিম

ভালোই আকর্ষণীয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে চমক প্রদান করা কিছু ছোটগল্পের সমাহার এই বইটি৷ আব্দুল আজিজের লেখা প্রথম পড়া হলো। এবং তার উইট প্রদানের ভঙ্গীমা ও গল্পভাবনা, দুটোই ভালো লেগেছে। সমকালীন বাস্তবতার বয়ান নিয়েই গল্পগুলো। তবে ক্লেদ নেই, অসারতা নেই। একটা নতুন ধাঁচে, নুয়্যান্স রেখে বয়ান করবার চেষ্টা আছে।

স্ট্রেইটফরোয়ার্ড গদ্য; কিন্তু লেখায় কাব্যিক সেন্সটা আছে, আবার নাটুকে নন; কিন্তু ডিটেলও রাখেন একদম প্রয়োজনমাফিক। শব্দ এবং বাক্য, এই দুটোরই প্লেসমেন্টের জায়গায় যথাযথ হওয়ায়, অতি বর্ণনায় না গিয়েই, বয়ানের জন্য যেই মেজাজটা জরুরী সেটা তৈরি করতে পারেন।

নামগল্পটাই সেই প্রমাণ দেয়। বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানো এই বেহুলার গল্প দিয়ে, প্রান্তিক মানুষদের বাস্তবতা আর প্রান্তিক রাজনীতিকরণ করে তাদের উপেক্ষা করা এবং সামরিক জান্তার অন্যায়ের সিরিয়াস বিষয়াদি ঢুকে গেছে। গ্রন্থের নামকরণও এটাই হবার কারণ হলো; আদতে এই প্রতিটি গল্প, যেগুলো সরল জীবনের গল্প হতে পারতো অন্যপিঠের বয়ানে, সেগুলোকে শিশুতোষভাবে দেখার লেন্সটা পাশে রেখে বাস্তবতার লেন্সে দেখতে চাওয়া হয়েছে। বয়ঃসন্ধিকালেই যে বাস্তবতার জ্ঞানচক্ষু মেলতে শুরু করে।

আব্দুল আজিজের এই নাতিদীর্ঘ গল্পগ্রন্থে ১৩’টি গল্প আছে! ছোটগল্পগুলো সাধারণ থেকেও একটু ছোট (অণু থেকে আবার বড়)। বেশক’টি গল্পই তিন-চার পাতা দীর্ঘ। অথচ, তার বয়ান এই স্বল্প পরিসরেও সুষম এবং অর্থব্যঞ্জক। প্রান্তিক জীবনের গল্প, আদিবাসী জীবনের গল্প, সমকালীন বাস্তবতা, ধর্মান্ধতা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, দেশভাগ, ব্যক্তিকেন্দ্রিক আকাঙ্খা ও হতাশা, ক্ষমতার বন্টন নিয়ে বিদ্রুপ—সবই এই গল্পগুলোতে ছড়িয়ে আছে। আর বক্তব্য দেওয়ার স্টাইলে তিনি নীতিবাগীশ নন, বরঞ্চ সূক্ষ্ম এবং বুদ্ধিদীপ্ত আকারেই তা দেন।

স্ট্রেইটফরোয়ার্ড গদ্য; কিন্তু লেখায় কাব্যিক সেন্সটা আছে, আবার নাটুকে নন; কিন্তু ডিটেলও রাখেন একদম প্রয়োজনমাফিক। শব্দ এবং বাক্য, এই দুটোরই প্লেসমেন্টের জায়গায় যথাযথ হওয়ায়, অতি বর্ণনায় না গিয়েই, বয়ানের জন্য যেই মেজাজটা জরুরী সেটা তৈরি করতে পারেন।

তার উইটের কথাটা আরেকবার বলতেই হয়। ওই জায়গাটা, প্রখর! সহজ ভঙ্গীতেই কি তীব্র শ্লেষটা ব্যবহার করেন তিনি সামাজিক ট্যাবু, প্রচলিত মূল্যবোধ আর বিশ্বাসের বিপরীতে। ‘কুকুর চুরির রাত’, ‘জেলখানা যৌনতা প্রকাশের জায়গা নয়’, ‘শয়তানের অংশ’—এই প্রত্যেকটা গল্পতেই তা পাওয়া যায়। আবার ‘স্বর্ণ নদীর নৌকা’, ‘প্রার্থনার ছায়ায়’ এই গল্পগুলোতে সেভাবে কোন বহুমাত্রিকতা ও ইনসাইট নেই। তবে এমন দুয়েক ছাড়া, বাকি সবেতে মিলিয়ে—ভালো গল্পগ্রন্থ এই ‘বেহুলার বয়ঃসন্ধিকাল’।

বইটির বাহিরানা রিভিউ : 

বেহুলার বয়ঃসন্ধিকাল—আব্দুল আজিজ – বাহিরানা

(Visited 16 times, 1 visits today)

Leave a Comment