বাহিরানা

পথের পাঁচালী বই রিভিউ—বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়—নিরাসক্ত বর্ণনায় চিরায়ত জীবনগাথা


দিপু চন্দ্র দেব

বাংলা গদ্যসাহিত্যের ভাষায় নিজস্বতার কথা বিবেচনা করলে যে কয়জন কথাসাহিত্যিক সেটি অর্জন করেছেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের মধ্যে অন্যতম। তার শব্দে-বাক্যে যেন একটি স্পর্শযোগ্য আবেদন আবার একইসাথে নিরাসক্ত ভাব আছে, এখানে নিরাসক্ত ভাবটি কাহিনী বর্ণনার সময় খুব কাজে দেয়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পথের পাঁচালী” উপন্যাসে আবার এই দুই গুণই বর্তমান। উপন্যাসটি বাংলা ভাষাভাষীদের মনে চিরস্থায়ী স্থান করে নেওয়ার পেছনে এর লেখকের নিরাসক্ত কিন্তু স্পর্শযোগ্য ভাষা একটি প্রধান কারণ।

উপন্যাসটির নামের মধ্যে একটি পথ আছে আর সেখানে যে গ্রাম আছে তার নাম নিশ্চিন্দপুর, এর মানে নিশ্চিন্ত, যেখানে কোনো চিন্তা নেই। যেন অবিরল সুখের পৃথিবী এই গ্রাম। শৈশবে কী জীবনের জটিল-কুটিল দুশ্চিন্তা থাকে আদতেই? না, কারণ এই সময় আবিষ্কারের আনন্দ সব শিশু-কিশোরকে মত্ত করে রাখে। অন্য কোনো চিন্তা করার সময় নেই তখন, যেমন, অপু-দুর্গার পরিবার তাদেরকে পরিপূর্ণ স্বাচ্ছন্দ দিতে পারে না, কিন্তু এ নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা নেই। কিন্তু উপন্যাসের “পথ”টি কোথায়? পথ তৈরি হয় তখন যখন দুর্গা অপুকে ছেড়ে যায় বিশাল একা পৃথিবীতে একা, যেখানে তার একা একাই বাঁচতে হবে, সংগ্রাম করে।

নিশ্চিন্দিপুরের দুই ভাইবোন অপু-দুর্গার জীবনের গল্প নিয়ে এই উপন্যাস। তাদের নির্মল শৈশবের একসাথে চারপাশের সবকিছুকে আবিষ্কারের ঘটনাগুলোর বর্ণনা এবং একইসাথে তাদের বাবার জীবন, গ্রামের মানুষজনের জীবন এসবই উঠে আসে আখ্যানটিতে। তবে একদিন দুই ভাইবোনের বিচ্ছেদ ঘটে, আর সেটি চিরতরের। দুর্গা জীবনের অপরূপ সৌন্দর্য ফেলে চলে যায়। তখন অপুর মনে যে প্রচণ্ড বোবা অভিঘাত আসে সেটি আমাদের দখল করে নেয়, কেননা বুদ্ধের মতে সুখই দুঃখে রূপ নেয়, জগৎ তাই দুঃখময়।

উপন্যাসটির নামের মধ্যে একটি পথ আছে আর সেখানে যে গ্রাম আছে তার নাম নিশ্চিন্দপুর, এর মানে নিশ্চিন্ত, যেখানে কোনো চিন্তা নেই। যেন অবিরল সুখের পৃথিবী এই গ্রাম। শৈশবে কী জীবনের জটিল-কুটিল দুশ্চিন্তা থাকে আদতেই? না, কারণ এই সময় আবিষ্কারের আনন্দ সব শিশু-কিশোরকে মত্ত করে রাখে। অন্য কোনো চিন্তা করার সময় নেই তখন, যেমন, অপু-দুর্গার পরিবার তাদেরকে পরিপূর্ণ স্বাচ্ছন্দ দিতে পারে না, কিন্তু এ নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা নেই। কিন্তু উপন্যাসের “পথ”টি কোথায়? পথ তৈরি হয় তখন যখন দুর্গা অপুকে ছেড়ে যায় বিশাল একা পৃথিবীতে একা, যেখানে তার একা একাই বাঁচতে হবে, সংগ্রাম করে। তখন হঠাৎ করে জীবন পূর্ণভাবে অপুর মনে এসে ভর করে, বা অপু প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায়। মানুষ যেভাবে বৃহৎ জীবনে প্রবেশ করে, বিভূতিভূষণের অপু যেন তারই এক মর্মান্তিক প্রতীক।

বিস্ময়ের বিষয় এই যে, লেখক বিভূতিভূষণ নিরাসক্তভাবে খুঁটিনাটিসহ বর্ণনা করে গেছেন এই সবকিছু, কিন্তু এর মাঝেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “পোস্টমাস্টার” গল্পের অবিস্মরণীয় উক্তিটি স্মরণে আসে, “কোথায় যেন বেদনা রহিয়া গেল”। এটাই ভাষায় অনুভূতির স্পর্শযোগ্যতা, যা মহৎ লেখকদেরই গুণ। আর এর ফলেই, “পথের পাঁচালী” বাঙালির মনে আসন নিয়েছে।

পথের পাঁচালী
লেখক : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বিষয় : উপন্যাস
প্রকাশকাল : ২০২৪ (পাঠক সমাবেশ সংস্করণ)
প্রকাশক : পাঠক সমাবেশ
দাম : ৩৫০ টাকা।

বইটি কিনতে চাইলে:

পথের পাঁচালী (Pather Panchali) – বাহিরানা

(Visited 12 times, 1 visits today)

Leave a Comment