বাহিরানা

সাংবাদিকতায় অদৃশ্য হাত বই রিভিউ—সিউল আহমেদ—জুলাইয়ের সাংবাদিকতার স্বরূপ সন্ধান


দিপু চন্দ্র দেব

অর্থনীতিতে অদৃশ্য হাতের কথা অ্যাডাম স্মিথ বলেছিলেন, কিন্তু সেখানে অদৃশ্য হাত পুঁজি ব্যবস্থায় দাম নির্ধারণে ভূমিকা রাখলেও সব ক্ষেত্রে এর ফল ভালো হয় না। যেমন “সাংবাদিকতা” এখানে অদৃশ্য হাত মানে সত্য প্রকাশে বাধা। সাংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা একটি বহুল চর্চিত ও প্রয়োজনীয় বিষয় যদি আমরা উন্নত সমাজব্যবস্থা ও গণতন্ত্র চাই। আমরা দেখতে পাই, যে দেশগুলোতে গণতন্ত্র নেই, সেখানকার সংবাদমাধ্যম স্বাধীন নয়। আমরা এই অভিগজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি বহু বছর ধরেই। বাংলাদেশে আবার আরেকটি বিষয় আমরা লক্ষ্য করি সেটি হলো সেল্ফ সেন্সর, পত্রিকাগুলো নিজেরাই নিজেদের সেন্সর করছে উদ্বিগ্ন হয়ে, তাদের এর সেন্সরের মূলে আছে ক্ষমতায় যারা আছে তারা হয়তো এটা পছন্দ করবে না। অথচ হয়তো ক্ষমতাসীন দলের এ নিয়ে কোনো ভ্রক্ষেপই নেই। আমরা বাংলাদেশের বেশিরভাগ সংবাদপত্রের ইতিহাসজুড়েই এটা দেখতে পাব। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সাংবাদিকতা কেমন ছিল? ১৯৭১এর পর বাংলাদেশে যে সবচেয়ে বড় গণহত্যা সংঘটিত হলো, তার সংবাদ কী পত্রিকার রিপোর্টাররা ঠিকমতন জানাতে পেরেছেন আমাদের? টিভি সাংবাদিকতা তো আমরা দেখেছিই, খুবই হতাশাজনক ছিল অবস্থা। সরকার পক্ষের মতের বাইরের কোনো খবরই পাইনি আমরা। সিউল আহমেদের “সাংবাদিকতায় অদৃশ্য হাত” জুলাইয়ে সাংবাদিকতায় বা মাঠপর্যায়ের রিপোর্টিংয়ে কোন পক্ষ বাধা দিচ্ছিল, সেটির উৎস সন্ধান নিয়ে।

কিছু কিছু পত্রিকা শত বাধাবিপত্তির মধ্যেও তাদের কাজ সুচারু ও সাহসীকতার সঙ্গে করে গেছে, পত্রিকাগুলোর নামের তালিকায় প্রথমে থাকবে ইংরেজি দৈনিক “নিউ এইজ”-এর নাম। পত্রিকাটির সম্পাদক নুরুল কবীর আপসহীন ও প্রকৃত সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী, তার সাক্ষৎকার না থাকলে বইটি অসম্পূর্ণ থাকতো, সেই অসম্পূর্ণতা ঘুচিয়েছেন লেখক। আমরা দেখেছি টিভির চেয়ে ছাপা পত্রিকা ওই সময় গুরুত্বপূর্ণ ও ক্রিটিকাল খবর প্রকাশ করেছে। এর একটি কারণ হলো বহু বছর ধরে টিভির রিপোর্টিং ক্ষমতাসীনদের দখলে ছিল, তাদেরকে বিটিভির চেয়ে আলাদা করে দেখার ‍উপায় ছিল না, ফলে ‍জুলাই মাসেও অবস্থা পরিবর্তনের কোনো কারণ ছিল না।

বইটিতে মাঠপর্যায়ের রিপোর্টিংয়ে যুক্ত অনেকের সাক্ষাৎকার রয়েছে, যারা তখন তাদের রিপোর্টিং প্রকাশ করতে পারেননি, বা তাদের প্রেরিত সংবাদকে কেটে দেওয়া হয়েছিল, কিংবা আটকে দেওয়া হয়েছিল অদৃশ্য হাতের নির্দেশে। সেই হাতটি কার? আমরা জানি হাতটি গত হওয়া ক্ষমতাসীন দলের। কিন্তু পত্রিকার সম্পাদকদের কেন সেই নির্দেশনা মানতে হচ্ছিল? রিপোর্টারদের অভিজ্ঞতা কেমন? সেসবে কিছুটা বা অনেকটা প্রকাশিত হয়েছে বইটিতে। ভবিষ্যতে যারা উক্ত জুলাই অভূত্থান নিয়ে গবেষণা করবেন তাদের বিরাটা কাজে দেবে সিউল আহমেদের বইটি।

কিছু কিছু পত্রিকা শত বাধাবিপত্তির মধ্যেও তাদের কাজ সুচারু ও সাহসীকতার সঙ্গে করে গেছে, পত্রিকাগুলোর নামের তালিকায় প্রথমে থাকবে ইংরেজি দৈনিক “নিউ এইজ”-এর নাম। পত্রিকাটির সম্পাদক নুরুল কবীর আপসহীন ও প্রকৃত সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী, তার সাক্ষৎকার না থাকলে বইটি অসম্পূর্ণ থাকতো, সেই অসম্পূর্ণতা ঘুচিয়েছেন লেখক। আমরা দেখেছি টিভির চেয়ে ছাপা পত্রিকা ওই সময় গুরুত্বপূর্ণ ও ক্রিটিকাল খবর প্রকাশ করেছে। এর একটি কারণ হলো বহু বছর ধরে টিভির রিপোর্টিং ক্ষমতাসীনদের দখলে ছিল, তাদেরকে বিটিভির চেয়ে আলাদা করে দেখার ‍উপায় ছিল না, ফলে ‍জুলাই মাসেও অবস্থা পরিবর্তনের কোনো কারণ ছিল না। সিউল আহমেদের বইটি স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সবচে ‍বৃহৎ গণহত্যায় সাংবাদিকতার ভূমিকায় সামান্য হলেও আলো ফেলতে পেরেছে। ফলে বইটি অবশ্যপাঠ্য বলা যায়।

সাংবাদিকতায় অদৃশ্য হাত
লেখক: সিউল আহমেদ
বিষয়: গবেষণা
প্রকাশকাল: ২০২৫
প্রকাশক: অ্যাডর্ন পাবলিকেশন
দাম: ৫০০ টাকা। 

বইটি কিনতে চাইলে:

সাংবাদিকতায় অদৃশ্য হাত (Shangbadikotay Odrisshya Hat) – বাহিরানা

 

(Visited 3 times, 1 visits today)

Leave a Comment