বাহিরানা

সেলিম জাহানের বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ: সঙ্কট ও সম্ভাবনার দিকনির্দেশ


বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন অবস্থায় আছে? বিশেষ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-্এর পর যে অর্থনীতি পেয়েছে উপদেষ্টা সরকার, আর এই অর্থনীতির ভবিষ্যতই কী? সেগুলোর পর্যালোচনা ও দিকনির্দেশনা নিয়েই সেলিম জাহানের বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বইটি। বইয়ের প্রবন্ধগুলো বেশিরভাগই সাম্প্রতিক সময়ে লেখা, ফলে বর্তমানের একটা ছাপ আছে বইটিতে।

আর্থিক খাতের সংস্কারের আলোচনায়, বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি ব্যাংক খাতের সংস্কার প্রসঙ্গটিতে, আমরা দেখেছি আমাদের এখানে জনগণের টাকা সবচেয়ে বেশি আত্মসাৎ হয় ব্যাংক সিস্টেমকে ব্যবহার করে। তাই এই বিষয়টিতে লেখকের নজর ফেলা বইটির গুরুত্ব বাড়িয়েছে।

বইয়ে মূল আলোচনার বিভাগ আছে সাতটি, যা থেকে শুরুতেই পাঠকেরা এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়ে যাবেন। বিভাগগুলো হলো, “বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতি” “দারিদ্র এবং অসমতা” “উন্নয়নের দর্শন, অগ্রগতি এবং পরিমাপ” “উন্নয়ন চেতনা এবং নারী” “উৎসবের অর্থনীতি” “আর্থিক খাত, অনুশাসন এবং সংস্কার” “বৈশ্বিক প্রেক্ষিত”। প্রতিটি বিভাগের বিস্তারিত অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা করেছেন লেখক। যেমন, প্রথম বিভাগে, বর্তমান সঙ্কটগুলো কী কী সেগুলো তিনি নির্দেশ করেছেন, এর সাথে পণ্যের বাজারমূল্য, শিল্প ও ব্যবসাখাতসহ আরো অনেক সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শেষে এসেছে করণীয়গুলো কী কী তার আলোচনা। একইভাবে দারিদ্র নিয়ে আলোচনায় এসেছে “বহুমাত্রিক দারিদ্র: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত” “বৈষম্যের স্বরূপ: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত” বন্যা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ আরো অনেক দিক। এই দারিদ্র বিমোচনের অর্থনীতির তত্ত্বের কথা আমরা পাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তিন শূন্যের পৃথিবী বইয়ে। সেলিম জাহানের বইয়ের সঙ্গে ইউনূসের বইয়ের একটা তুলনামূলক পাঠ হতেই পারে। পুঁজিবাদী বিশ্বে দারিদ্র বিমোচন হলেই অসমতা ঘুচে? এই প্রশ্নটির উত্তরও খুঁজে দেখা যেতে পারে বই দুইটিতে।

আবার সেলিম জাহানের বইয়ে “বৈষম্যের স্বরূপ: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত” প্রবন্ধের মধ্যে থাকা বৈষম্যেরর সঙ্গে আকবর আলি খানের পরার্থপরতার অর্থনীতি বইয়ের লিঙ্গভিত্তিক বৈষ্যমের আলোচনা “লিঙ্গ-ভিত্তিক বৈষম্যের অর্থনীতি”-এর পারস্পরিক পাঠ হতে পারে। কারণ একটি রাষ্ট্রের যেকোনো বৈষম্যের মধ্যে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য অবশ্যই থাকে, আর সবধরণের বৈষম্য মিলিয়ে সার্বিকভাবে একটি রাষ্ট্রে বৈষম্যের সংজ্ঞা বা ধরণ কী দাঁড়ায় তার তার আলোচনা সেলিম জাহানের প্রবন্ধটিতে পাওয়া যায়, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চূর্ণগুলোকে একটি এককে রূপান্তরের মতো প্রায়।

উন্নয়নের দর্শনে এসেছে, মানবসম্পদের বিষয়টি, বাংলাদেশ তার মানব সম্পদের যথাযথ উন্নয়ন সাধিত করতে পারছে না, সেটা আমরা জানি, এই ক্ষেত্রটিতে যে যে দেশ উন্নত তারাই পৃথিবী শাসন করছে বর্তমানে। আরেকটি বিষয় নারীদের উন্নয়নের চেতনায় নারীর যথাযোগ্য অন্তর্ভুক্তিকরণ, এটা সম্ভব না হলে সামগ্রিক উন্নয়ন দুরাশাই থেকে যাবে। আর্থিক খাতের সংস্কারের আলোচনায়, বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি ব্যাংক খাতের সংস্কার প্রসঙ্গটিতে, আমরা দেখেছি আমাদের এখানে জনগণের টাকা সবচেয়ে বেশি আত্মসাৎ হয় ব্যাংক সিস্টেমকে ব্যবহার করে। তাই এই বিষয়টিতে লেখকের নজর ফেলা বইটির গুরুত্ব বাড়িয়েছে।

পৃথিবী বর্তমানে একটি অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, প্রতিটি রাষ্ট্রই অস্থিরতার একটি চক্র পার করছে, ফলে পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থা বলতে যা বোঝাত—বর্তমানে সেরকম আর বোঝাচ্ছে না। আর বাংলাদেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তনে বিদেশি সরকারগুলোর সাথে সম্পর্ক কেমন হবে সেটিও ভাবনার বিষয়, এই বিষয়টিতে লেখক আলোকপাত করলে বইটি আরো সম্পূর্ণতা পেত। কেননা উন্নয়নে বৈশ্বিক পক্ষগুলোর আদান-প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যদিও জাতিসংঘ নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। যা দরকারী। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্কট ও উত্তরণ নিয়ে যারা জানতে আগ্রহী তাদের জন্য অবশ্যপাঠ্য সেলিম জাহানের বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বইটি।

বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
লেখক: সেলিম জাহান
বিষয়: অর্থনীতি, প্রবন্ধ
প্রকাশকাল: ২০২৫
প্রকাশক: জাগৃতি প্রকাশনী
মূল্য: ৪৫০ টাকা।

বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বইটি কিনতে চাইলে


মন্তব্য করুন