বাহিরানা

স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি বই রিভিউ—গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ—যে রিপোর্টিং সাহিত্য হয়েছিল


গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ কথাসাহিত্যে আসার সমসময়ে সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন, সাংবাদিকতা তার আত্মার একটি অংশ ছিল, মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মাধ্যমটিকে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন, অনেকসময়ে কথাসাহিত্যের চেয়েও বেশি। “লিভিং টু টেল টু টেল” শিরোনামে তার অবিস্মরণী ২৮ বছরের আত্মজীবনীর একদম শুরুতেই যে মার্কেজের দেখা পাই আমরা সেই মার্কেজ পত্রিকায় লিখে যৎসামান্য আয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ১৯৫০ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত প্রকাশিত তার ৫০টি আর্টিক্যাল নিয়ে ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় “দ্য স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি এন্ড আদার রাইটিংস”। বইটিকে বলা যায় মার্কেজের সাংবাদিকতার প্রতি ভালোবাসার স্মৃতিতর্পণ। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের “স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরী” তার সাংবাদিকতার প্রকৃত সুরটিই ধরে আছে। হারুন রশিদ মূল বইয়ের এই শিরোনাম প্রতিবেদনটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন, সঙ্গে আরো ১১টি প্রতিবেদন, কলামের অনুবাদও যুক্ত করেছেন।

কেন প্রতিবেদনটি বিশেষ এর কারণ এই বাক্যটিতেই ভালোভাবে আছে, বাক্যটি প্রচলিত রিপোর্টিংয়ের চেয়ে এত আলাদা যে সেটি একটি উপন্যাস বা গল্পের শুরুর বাক্যের রূপ নিয়েছে। এ যেন তার সাহিত্যেরই সম্প্রসারণ, এতে সাহিত্যগুণ আছে, যা মার্কেজের সব রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রেই সত্য।

কী আছে শিরোনাম কলামে, যা দিয়ে বইয়ের নামকরণই করা হয়ে গেলো? ঘটনাটি ১৯৫৫ সালের, তখন তিনি এল এস্পেক্তাদর (হারুন রশিদের অনুবাদে এল এসপেকটেডর আছে, কিন্তু স্প্যানিশে ট ও ড-এর উচ্চারণ ত ও দ-এর মতো হয়।) পত্রিকার রোম প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছিলেন, তখন এক তরুণীর মৃত্যু এবং এর পরবর্তী সংবাদ ধারণ করছিলেন তিনি, ঘটনাটি প্রথমে যত সহজ মনে হচ্ছিল আদতে ততটা নয়, কেননা তদন্তের কিছুদিনের মধ্যেই বেরিয়ে আসতে থাকলো, এখানে একজন মন্ত্রীপুত্র ও তৎসঙ্গে কিছু উচ্চপদের সরকারী কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ। যেটা হয়, বিষয়টিকে উপরমহল থেকে সমূলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলো। এই ঘটনাটির আদ্যোপান্ত বিবরণই “স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি”।

হারুন রশিদ ভালো অনুবাদ করেছেন, তার ঝরঝরে অনুবাদে “স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি”র শুরুর বাক্যটি দেখা যেতে পারে,

“অপেক্ষা
১৯৫৩ সালের এপ্রিলের নয় তারিখ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার সময় রোডোলফো মনটেসি নামের জনৈক কার্পেন্টার তার কন্যা উইলমার বাড়ি ফেরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।”

কেন প্রতিবেদনটি বিশেষ এর কারণ এই বাক্যটিতেই ভালোভাবে আছে, বাক্যটি প্রচলিত রিপোর্টিংয়ের চেয়ে এত আলাদা যে সেটি একটি উপন্যাস বা গল্পের শুরুর বাক্যের রূপ নিয়েছে। এ যেন তার সাহিত্যেরই সম্প্রসারণ, এতে সাহিত্যগুণ আছে, যা মার্কেজের সব রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রেই সত্য। শুরুতে যখন ঘটনার বর্ণনা দেওয়া শুরু করেন, তার মাপা মাপা শব্দে, তখন রুদ্ধশ্বাসে শেষ পর্যন্ত পড়ে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।

বইয়ে থাকা বাকি লেখাগুলোর কয়েকটি হলো, “আমার জন্য আমি” “একজন লেখক খুঁজছি” “নোবেল পুরস্কারের ভূত” “লেখক হবার দুর্গতি” “আমার নিজস্ব হেমিংওয়ে”। হেমিংওয়ে নিয়ে লেখাটায় আমরা পাই, প্যারিসের রাস্তায় হাঁটার সময় অপরপারে যখন একদিন হঠাৎই হেমিংওয়ের দেখতে পেলেন তিনি তার নাম না বলে “মায়েস্ত্রো” সম্বোধন করে ডাক দিলেন, কিন্তু এত ভিড়ের মধ্যেও হেমিংওয়ে পেছন ফিরে ঠিকই সাড়া দিলেন। এই নাম না বলে মায়েস্ত্রো বলায় হেমিংওয়ে কীভাবে বুঝলেন যে তাকেই এই সম্বোধন করা হচ্ছে? এরকম আশ্চর্য সব অভিজ্ঞতাই মার্কেজ আহরণ করেছিলেন জীবনে। মূল বইটির লেখাগুলো খণ্ড খণ্ডভাবে অনেকেই অনুবাদ করেছেন, একদিন পুরো বইটিই অনুদিূত হবে বাংলায় সেই প্রত্যাশা রাখি।

স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি
লেখক: গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ
অনুবাদ: হারুন রশিদ
বিষয়: কলাম সংকলন
প্রকাশকাল: ২০২৫
প্রকাশক: চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন
দাম: ৪০০ টাকা।

বইটি কিনতে চাইলে:

স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি (Scandal Of The Century) – বাহিরানা

(Visited 3 times, 1 visits today)

Leave a Comment