বাহিরানা

সৈয়দ আকরম হোসেনের বাংলাদেশের সাহিত্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ: সাহিত্যের নতুন ভাষ্য নির্মাণে সহায়ক


সাহিত্য এমন কিছু নয় যা সবসময় সামনের দিকে অগ্রসর হয়। সময়ের সাথে সাথে যার অগ্রগতি হয় এমনও নয়। তাই আমরা বলতে পারি না উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের চেয়ে বর্তমানের একজন কবি ভালো কবিতা লিখছেন। এরকম তুলনা সাহিত্য সমালোচনার জন্য ক্ষতিকর। শেক্সপিয়ারের চেয়ে অনেক অনেক পরে সাহিত্যজগতে আসা একজন কবিকে নতুন পথ অনুসন্ধান করতে হয় পূর্বসুরীদের পাঠ নিয়েই, আর নতুন যে ভাষাটি তিনি আবিষ্কার করেন তার ভিত্তিতেই তার নতুনত্ব নির্ধারিত হয়। তার পঠনপাঠনের প্রয়োজন তাই সর্বাধিক, আর এক্ষেত্রে সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধসাহিত্যের একটি বড় ভূমিকা আছে। বাংলাদেশে সেরকম বইয়ের সংখ্যাও কম নয়, তবে অনেকগুলোই পাঠকদের হাতের নাগালে নেই। এরকম বইয়ের মধ্যে শিক্ষক ও গবেষক সৈয়দ আকরম হোসেনের বাংলাদেশের সাহিত্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ প্রবন্ধগ্রন্থটির কথা বলা যায়। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল সেই ১৯৮৫ সালে, তবে এটি বর্তমানে পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। বইয়ের প্রবন্ধগুলো সাহিত্যের পাঠক এবং নবভাষ্য নির্মাণে আগ্রহী সাহিত্যিকদের জন্য অবশ্যপাঠ্য বলা যায়।

আবার বাংলাদেশের কবিতা কোন পথে চলেছে, তার রূপ ও রস কেমন? সেসবের চিহ্ন সন্ধান করেছেন তিনি “বাংলাদেশের কবিতা” শিরোনামের প্রবন্ধে একজন প্রাজ্ঞ বোদ্ধার মতো। তাই বিচিত্রতার অনুসন্ধানে বইটি হয়ে উঠেছে বিশেষ। যোগ করা যায় তার “নজরুলের নটরাজ: বিশ্বছন্দের প্রত্নপ্রতিমা” প্রবন্ধটি নজরুল মনীষার অনুসন্ধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

আমাদের ভালো প্রবন্ধসাহিত্যের সংকট অস্বীকার করার মতো না, প্রতি বছর যে পরিমাণ ক্ষুদ্রসংখ্যক প্রবন্ধগ্রন্থ আমরা দেখি, তাদের মধ্যে আবার অনেকগুলোই গভীরতাহীন, নতুন কথা বলতে অপারগ। এই বইটি সেই সংকট ঘোচাতে নতুনদের পথ দেখাতে পারে।

সাহিত্যের দুই মাধ্যম কবিতা ও কথাসাহিত্য, এই দুইটি অংশ নিয়েই প্রবন্ধ লিখেছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম থেকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ—বাংলা সাহিত্যের পথ যারা প্রশস্ত করেছেন, উল্লেখযোগ্য সব প্রতিভাকে নিয়েই লিখেছেন তিনি। আবার বাংলাদেশের কবিতা কোন পথে চলেছে, তার রূপ ও রস কেমন? সেসবের চিহ্ন সন্ধান করেছেন তিনি “বাংলাদেশের কবিতা” শিরোনামের প্রবন্ধে একজন প্রাজ্ঞ বোদ্ধার মতো। তাই বিচিত্রতার অনুসন্ধানে বইটি হয়ে উঠেছে বিশেষ। যোগ করা যায় তার “নজরুলের নটরাজ: বিশ্বছন্দের প্রত্নপ্রতিমা” প্রবন্ধটি নজরুল মনীষার অনুসন্ধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

সৈয়দ আকরম হোসেন রবীন্দ্র গবেষণার জন্য প্রখ্যাত, এক্ষেত্রে  ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত তার রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস: দেশকাল ও শিল্পরূপ বইটির কথা বলা যায়। সৈয়দ আকরম হোসেনের বাংলাদেশের সাহিত্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ বইয়ের প্রবন্ধগুলোও ১৯৬৬ থেকে ১৯৮২ সালের সময়সীমায় লেখা। ফলে, তার গবেষক ও প্রাবন্ধিক মননের ধারবাহিকতা যদি বলা হয় আলোচ্য বইটিকে তাহলে ভুল হয় না। এখানে বলা প্রয়োজন, “প্রাবন্ধিক মনন” কোনো ঐশী ঘটনার ফল নয়, এটা আয়ত্তযোগ্য গভীরতর দৃষ্টি ও সাধানায়, কবিতায় প্রতিভাশালী জীবনানন্দ দাশও প্রবন্ধ লিখেছেন জীবনভর , কিন্তু তাও কবিতার যোগ্যতায় নয় প্রবন্ধের যোগ্যতাতেই সেই লেখাগুলো কালোত্তীর্ণ হয়েছে। সৈয়দ আকরম হোসেন গদ্যের শিল্প, এর যুক্তি ও সৌন্দর্য সব মেনেই প্রবন্ধশিল্পের কাছে নিজের লেখা সমর্পণ করেছেন। ফলে পর্যবেক্ষণের স্বাতন্ত্র্য, যুক্তি ও দেখার তীক্ষ্ণতা নিয়েও নিরাবেগ ও টানটান গদ্যে ক্রমেই নতুন এক ভূমির ভাষ্য উন্মোচন করেছে, যে ভূমি “বাংলা সাহিত্যের”। তাই, বাংলাদেশে কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিকদের বাইরেও বইটি সাহিত্যে আগ্রহী সবধরণের পাঠকদেরই ভালো লাগবে। যারা নতুন কথা বলতে চান তাদের তো অবশ্যই।

বাংলাদেশের সাহিত্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ
লেখক: সৈয়দ আকরম হোসেন
বিষয়: প্রবন্ধ, গবেষণা
প্রকাশকাল: ২০২৪
প্রকাশক: পাঠক সমাবেশ
দাম: ৩৯৫ টাকা ২০% ছাড়ে ৩১৬ টাকা।

বাংলাদেশের সাহিত্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ বইটি কিনতে চাইলে


মন্তব্য করুন