বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা মনজুরুল আহসান খানের বলা ও না-বলা কথা তার আত্মজীবনীমূলক বই। মজনজুরুল আহসান খানের জন্ম ১৯৪৫ সালে কলকাতায়। বইটি শুরু হয়েছে কলকাতা, তার জন্ম ও পরিবারের বৃত্তান্ত দিয়েই। দেশ ভাগের সময় তার বাবা পূর্ব বাংলায় চলে আসেন। তাঁর অন্য যত পরিচয়ই থাক সবকিছু ছাপিয়ে বামপন্থায় নিজেকে বিলীন করে দেওয়াটাই মুখ্য হয়ে ওঠে। ফলে তার আত্মস্মৃতি বামঘরানার ইতিহাসের দিশারও হদিস দেবে এটা বলা যায়। বইটিকে একম শৌখিন পাঠ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই, মনজুরুল আহসান খান ব্যক্তি মানুষ হিসেবে ভুল-শুদ্ধের উর্ধ্বে নন, তার পক্ষপাতের বিষয়ও রয়েছে। সেটা বিবেচনায় নিয়ে বইটি পড়লে তার পক্ষপাত আলদার করে মূল আহরণ করা সহজ হবে।
মনজুরুল আহসান খানের মূল ধারার রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয়েছিল বিশ বছর বয়সে, কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ অর্জনের মধ্য দিয়ে। এরপর একে একে ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে যোগদান, দেখেছেন বৈশ্বিক মঞ্চে সমাজতন্ত্রের পতনও। হাল ছাড়েননি, তখন “সমাজন্ত্রের সংগ্রাম চলবে” ব্যানারে মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এটা আশ্চর্যই বলতে হবে, কারণ রাশিয়া ছিল সমাজতন্ত্রের মূলভূমি, তাদের পতনের পর স্বাভাবিক ভাবেই পৃথিবীব্যাপী শ্রেণীহীনতার আদর্শে উজ্জীবিত কর্মীদের মন ভেঙে যাওয়ার কথা, মনজুরুল আহসান খান ও তার মতো কিছু নেতারা হার মানতে চাননি।
নটরডেম কলেজে ছাত্রথাকাকালে যখন ছাত্র সংগঠনের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল তখনই তার রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়। এবং ছাত্রথাকাকালীনই সিপিবির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। বিশেষ করে তার জীবনের আরেকটি দিক হলো তিনি মুক্তিযুদ্ধের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। কিন্তু এটাই শেষ নয়, বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী ঘটনাবলিসহ বাকশাল গঠনে সিপিবির দায়—এই সব বিষয়েই আলোকপাত করেছেন। ফলে বইটি আত্মজীবনী ছাপিয়ে বিশ্লেষণাত্মক ও পর্যালোচনামূলকও হয়ে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের ঠিক পরেই আওয়ামী সরকারের ব্যর্থতার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন তিনি। বাংলাদেশে আরেকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু প্রায় অবহেলিত অধ্যায় ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ, এই দু্র্ভিক্ষ কেন হয়েছিল? তা নিয়ে মনজুরুল আহসান খানের বলা ও না-বলা কথা বইয়ে পর্যবেক্ষণ রয়েছে।
তিনি যে আটাশ বছর বয়সে পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে অন্যতম সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন, সেটি আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। উদীচী’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও তিনি। ফলে বর্নাঢ্য এক রাজনৈতিক জীবন অতিবাহিত করেছেন মনজুরুল আহসান খান।
মনজুরুল আহসান খানের জীবনীগ্রন্থ মানে বৈশ্বিক পরিসরে বাংলাদেশের স্রোতধারা জানাও। এখানে উঠে এসেছে এমনসব অজানা ঘটনাবলি, যা জানা প্রয়োজন। বইটি তাকে ও বামরাজনীতিকে জানতে সাহায্য করবে বলা যায়।
বলা ও না-বলা কথা
লেখক : মনজুরুল আহসান খান
বিষয় : জীবনীগ্রন্থ
প্রকাশকাল : ২০২৩
প্রকাশক : আদর্শ
দাম : ৩৬০ টাকা।
বলা ও না-বলা কথা বইটি কিনতে চাইলে
