বাহিরানা

দূর পৃথিবীর গন্ধে বই রিভিউ—মাসউদ আহমাদ—কবির অন্তর্গত যন্ত্রনার ‍বিষাদময় পরত


মামুনুর রশিদ তানিম

এই গল্পগ্রন্থ পড়তে গিয়েই জানতে পারলাম এবং প্রমাণও পেলাম, গল্পকার মাসউদ আহমাদের, জীবনানন্দ নিয়ে আচ্ছন্নতা৷ শুদ্ধতম এই কবিকে নিয়ে বেশ অনেকগুলো ফিকশনাল গল্প রচনা করেছেন তিনি। স্মৃতির পাড় ঘেঁষে জীবন্ত হেঁটে বেড়ায় জীবনানন্দ, তার গল্পগুলোতে। এই গল্পগ্রন্থের ৫’টি গল্পেও জীবনানন্দ মিশে আছেন৷ আরো আছেন লাবণ্য দাশ, শান্তি ব্যানার্জী। একটা গল্পে বুদ্ধদেব বসুও আছেন।

তবে একটা ফাঁপা জায়গা অনুভব হবার অনুভূতিও মিলিয়ে যায়নি। সেটা হচ্ছে, গল্পবিশেষে লেখক এবং জীবনানন্দ দু-ই উপস্থিত। সেই মেটা ফিকশনের ভেতরেও লেখকের অবস্থান ভক্তরূপে। এবং তথ্য অনেক থাকলেও, ভক্তরূপী লেখক কিছুটা দূর থেকেই জীবনানন্দকে দেখে গেলেন। মানে ওই ভক্তির কাছে ভক্ত যতটা ম্রিয়মাণ থাকে আরকি। পাশাপাশি হাঁটলেও একটা দেয়াল আছে। সেই দেয়াল ভেদ করে প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য পুরোপুরি পাওয়া হয় না।

গল্পগুলো পড়তে গিয়ে পেলব ছোঁয়া পাওয়া যায়, বেশ গাঢ় হয়েই তা চেপে বসেছে। এবং সেটা ভালোত্ব বাড়িয়েছে। লাবণ্য দাশ, শান্তি ব্যানার্জীর দৃষ্টিকোণ থেকেও এই রূপসী বাংলার কবিকে দেখা হয়েছে। এই চেনা গণ্ডির চৌহদ্দির জীবন ও সামাজিক বাস্তবতায় যে, কবিকে বড়ই বেমানান লাগত। ওই উশখুশ, চেনা চৌহদ্দিতে পড়ে যাবার দ্বন্দ্ব ও কবির অন্তর্গত যন্ত্রণার বিষাদময় পরতগুলো আছে গল্পবিশেষে। এটা অনায়সেই টের পাওয়া যায়, কবিকে নিয়ে তিনি বিস্তর পড়াশোনা করেছেন। অনুভূতিতে অনুনাদ জাগাবার মতো নানান তথ্যের সমাহার আছে আলাপের ছলে, বয়ানের ঢঙে।

তবে একটা ফাঁপা জায়গা অনুভব হবার অনুভূতিও মিলিয়ে যায়নি। সেটা হচ্ছে, গল্পবিশেষে লেখক এবং জীবনানন্দ দু-ই উপস্থিত। সেই মেটা ফিকশনের ভেতরেও লেখকের অবস্থান ভক্তরূপে। এবং তথ্য অনেক থাকলেও, ভক্তরূপী লেখক কিছুটা দূর থেকেই জীবনানন্দকে দেখে গেলেন। মানে ওই ভক্তির কাছে ভক্ত যতটা ম্রিয়মাণ থাকে আরকি। পাশাপাশি হাঁটলেও একটা দেয়াল আছে। সেই দেয়াল ভেদ করে প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য পুরোপুরি পাওয়া হয় না। কিন্তু গল্পগুলো তো ফিকশনাল, অন্তরঙ্গতা তো এই জায়গায় আবশ্যিক। পরিদর্শক নয়, দরকার তো ছিল ভেতরটাকে উপড়ে নেবার; নয়তো তলিয়ে দেখবার মতো একজনের। সেই তলিয়ে দেখবার মতো গভীরতা এই গল্পগুলোয় পাওয়া যায়নি, অনেককিছু পাওয়া গেলেও। পূর্ণতা পায়নি। কবি তো রহস্যময়, ওই রহস্যেই কবির সৌন্দর্যতা। সেই রহস্যের ঘোর আমি ভাঙাতে বলছি না (ভাঙলেও দোষ নেই, ওতে মেটাফিকশনাল গল্পখানি আরো আকর্ষিক হবে এবং কেন ‘মেটা’ হতে গেল, সেটারও যথাযথ উদ্দেশ্য পাওয়া যেত), কিন্তু আমি অনুভব করতে চাই, স্রেফ অবলোকন নয়। স্রেফ অবলোকনে গল্প তো হয়েছে, তবে রেশ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

মাসউদ আহমাদের গদ্যও বেশ সরলসোজা। তবে চনমনে হয়ে ওঠবার ক্ষমতা আছে। কিন্তু রূপসী বাংলার কবিকে ঘিরে গল্পগুলো, তথ্য ও দৃষ্টিকোণের বাহিরে স্রেফ কবিকে রোমান্থন করার মাঝেই আঁটকে গেল। শুধু সন্ধ্যার আলাপচারিতা নয়, গভীর রাতের একান্ত আলাপনও দরকারি। সাবজেক্টের প্রয়োজনীয়তা ও প্রগাঢ়তা অনুভব করানোর দরকার আরো বেশি ছিল। বায়োগ্রাফি তো নয়, ফিকশন/মেটাফিকশন, সেক্ষেত্রে তো অতলে ঝেঁকে দেখবার সমস্ত সুযোগ বিদ্যমান। বনলতা সেনের গভীরেও ঘুরে আসা যায় যেমন, রহস্যকে ক্ষয় হতে না দিয়েই।

দূর পৃথিবীর গন্ধে
লেখক: মাসউদ আহমাদ
বিষয়: গল্প
প্রকাশক: ঘাসফুল
প্রকাশকাল: ২০২১
মূল্য: ২২০ টাকা।

(Visited 5 times, 1 visits today)

Leave a Comment