বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেকগুলো গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। অভ্যুত্থানের সাথে যখন গণ যুক্ত হয় তখন বুঝতে হয় সেটা নির্দিষ্ট কোনো দল-আদর্শ-পন্থার কাছে নেই, বরং পৌঁছে গেছে গণমানুষের কাছে। স্বতস্ফুর্তভাবে তারা যুক্ত হয়েছে আন্দোলনে, কারণ বহুদিনের, বছরের অবদমিত ক্ষোভ বেরিয়ে আসার পথ পেয়েছে অবশেষে। এই গণের যুক্ততার কথা বিবেচনা করলে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান হচ্ছে ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। তারই ধারাবাহিক ঘটনাক্রম নিয়ে নজরুল ইসলামের লাল বসন্ত: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দিনলিপি ইতিহাসের বইটি। একই বিষয় নিয়ে আলতাফ পারভেজের লাল জুলাই চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানের পথপরিক্রমা বইটিও পড়া যেতে পারে। সেটিতেও অভ্যুত্থানের ঘটনাগুলোর ধারাবাহিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে।
তবে সফলতার সবচেয়ে বড় কারণটি হলো মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অংশগ্রহণ। এই দেশে কোনো রদবদলই তাদের অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব হয়নি। আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধ ছিল এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীরই ছেলে, তাদের জীবনদান সরকার পতন ত্বরান্বিত করেছিল।
কোটা বিরোধী আন্দোলন কিভাবে বদলে গিয়েছিল সরকার পতনের আন্দোলনে তার একটা আভাস পাওয়া যায় বইটিতে। আন্দোলনটির একটি বিশেষত্ব হলো এখানে যুক্ত হয়েছিল দেশের প্রায় সবগুলো বড় রাজনৈতিক দল, তাদের অসংখ্য কর্মী জীবন দিয়েছে রাজপথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সাথে। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলই তাদের দলের ব্যানার ব্যবহার করেনি। তবে সফলতার সবচেয়ে বড় কারণটি হলো মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অংশগ্রহণ। এই দেশে কোনো রদবদলই তাদের অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব হয়নি। আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধ ছিল এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীরই ছেলে, তাদের জীবনদান সরকার পতন ত্বরান্বিত করেছিল।
আমার উপরে বলা ব্যাখ্যা বা কারণগুলো বইয়ের জোরের অংশ নয়, বরং বইটি জোর দিয়েছে ঘটনাপ্রবাহ লিপিবদ্ধ করায়। যার উপর ভিত্তি করে পাঠক, গবেষকরা নিজেদের সিদ্ধান্ত টানবেন। যা পরবর্তী বৃহৎ ইতিহাস রচনার রসদ জোগাবে। ২০১৮-এর “নিরাপদ সড়ক” আন্দোলনের সাথে ২০২৪-এর যোগ রয়েছে, নজরুল ইসলাম সেগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। নজরুল ইসলামের লাল বসন্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দিনলিপি বইটি জুলাইকে জানতে আগ্রহীদের পাঠতৃষ্ণা মেটাবে বলা যায়।
লাল বসন্ত: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দিনলিপি
লেখক : নজরুল ইসলাম
বিষয় : ইতিহাস
প্রকাশকাল : ২০২৫
প্রকাশক : বাতিঘর প্রকাশনী
দাম : ৬৫০ টাকা।
