বাহিরানা

মুগল বংশ বই রিভিউ—শ্রীরামপ্রাণ গুপ্ত—মুগল ইতিহাসের আকরগ্রন্থ


দিপু চন্দ্র দেব

শ্রীরামপ্রাণ গুপ্তের মুগল বংশ বইটি ইতিহাস বইয়ের তালিকায় সেই অংশে পড়ে যেগুলোকে আকরগ্রন্থ বলা হয়। এই বইগুলো থেকে শত শত বই জন্ম নেয়, ভিন্ন ভিন্ন ভাগে। যেমন কোনো ইতিহাসকার যদি ভারতের মুসলিম শাসনের ইতিহাস লিখতে যান, তবে তিনি কী মুগল শাসনের ইতিহাস এড়াতে পারবেন? মুগল শাসন ছাড়া মুসলিম শাসন কোনোভাবেই সম্পূর্ণ হবে না। তখন শ্রীরামপ্রাণের এই বইটির কাছে তাকে যেতে হবে। কারণ মুগলদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ইতিহাস সেখানে আছে। অবশ্যই তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইতিহাসের আলাদা, আলাদ ইতিহাসের জন্য অন্য বইয়ের কাছে তাকে যেতে হবে, কোনো দেশের সামগ্রিকতা এভাবেই তৈরি হয়।

আকবরের শাসনামলে রাজা তুডরমল ছিলেন চারহাজারি সেনাপতি, তার কারণেই আকবর পারসীর পরিবর্তে হিন্দিতে বিচারকার্য পরিচালনার ব্যবস্থাগ্রহণ করেছিলেন, ব্রিটিস শাসনের সাথে একটু তুলনা করলেই ভারতের মুসলমান শাসনের পার্থক্য ধরা পড়বে এই ছোট উদাহরণটিতে, ব্রিটিশরা ছিল ঔপনিবেশিক শাসনের প্রবর্তক আর মুগল তথা মুসলিম শাসন ভারতবর্ষকেই নিজেদের দেশ বানিয়ে তার সম্মৃদ্ধি আনয়নে বদ্ধপরিকর ছিল। ফলে এখানে বিরোধের কোনো সুযোগ নেই।

লেখক বইটির শুরু করেছেন চেঙ্গিস খাঁ’কে দিয়ে। কারণ তিনিই মোঘল বংশের প্রথম শক্তিশালী প্রতিনিধি। এরপর তার উত্তরাধীগণদের বিবরণ, তৈমুর লঙ্গ, বাবর, হুমায়ূন ও শেরশাহ, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, আলমগীর। পরের দুইটি অধ্যায় হলো, “মুগলদের অধঃপতন” ও “মোগল সাম্রাজ্য”। তিনি সামগ্রিক একটা ইতিহাস লিখতে চেয়েছেন, আলাদা করে নয়, তাই তৈমুর লঙ্গসহ উল্লেখিত সবার বর্ণাতেই তিনি তাদের তার রাজ্য শাসনের সর্বদিক তিনি বিবেচনায় নিয়েছেন।

যেমন, আকবরের শাসনামলে রাজা তুডরমল ছিলেন চারহাজারি সেনাপতি, তার কারণেই আকবর পারসীর পরিবর্তে হিন্দিতে বিচারকার্য পরিচালনার ব্যবস্থাগ্রহণ করেছিলেন, ব্রিটিস শাসনের সাথে একটু তুলনা করলেই ভারতের মুসলমান শাসনের পার্থক্য ধরা পড়বে এই ছোট উদাহরণটিতে, ব্রিটিশরা ছিল ঔপনিবেশিক শাসনের প্রবর্তক আর মুগল তথা মুসলিম শাসন ভারতবর্ষকেই নিজেদের দেশ বানিয়ে তার সম্মৃদ্ধি আনয়নে বদ্ধপরিকর ছিল। ফলে এখানে বিরোধের কোনো সুযোগ নেই। মুসলিম শাসনের সময় বাংলা ভাষাও সম্মৃদ্ধ হয়েছে। অবশ্য আজকের হিন্দি রাজকারণে উপনিবেশের সময়কার ব্রিটিশদের ইংরেজির পদ্ধতি অনুসরণ করছে। সেটি বৈচিত্রে বিশ্বাসী নয় আর, অন্যভাষাকে হরণ করাকেই যার লক্ষ্য বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বইয়ের শেষে পরিশিষ্ট অংশে এসেছে, আবুল ফজল, নিজাম উদ্দীন, বদায়ূনি, ফেরিস্তা, খাফি খাঁ, গোলাম হোসেন—প্রমুখদের ইতিহাস। আবুল ফজলের “আকবরনামা” বিখ্যাত বই, তার জন্য আলাদা অধ্যায়(সংক্ষিপ্ত) না থাকলে অপূর্ণই থাকত বইটি। বদায়ূনির বিষয়ে বলা যায়, তিনি আকবরের বিশেষ প্রিয়পাত্র ছিলেন তার জ্ঞানের জন্য, লেখক জানাচ্ছেন তিনি ধর্মীয়ভাবে গোড়া ছিলেন, কিন্তু তিনি আকবরের নির্দেশে রামায়ণ, মহাভারতের দুই অধ্যায় সহ অসংখ্য বই পারসীতে অনুবাদ করেছেন।

একজন ইতিহাসবিদের কাজ পক্ষাবলম্বন না করে সামগ্রিকতা ও সত্যকে তুলে আনা। শ্রীরামপ্রাণ গুপ্ত তাই করেছেন বইটিতে। মুগল বংশের একটা সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেছেন তিনি, সেইসাথে তখনকার সমাজ-রাষ্ট্রেরও বিষদ বিবরণ বাড়তি যোগ্যতা যোগ করেছে বইটিতে।

মুগল বংশ
লেখক : শ্রীরামপ্রাণ গুপ্ত
বিষয় : ইতিহাস
প্রকাশকাল : ২০২৫
প্রকাশক : অবসর প্রকাশনা সংস্থা
দাম : ৪৮০ টাকা।

বইটি কিনতে হলে:

মুগল বংশ (Mughal Bangsha) – বাহিরানা

(Visited 24 times, 1 visits today)

Leave a Comment