বাহিরানা

বিশ্বজিৎ চৌধুরীর অভিযুক্ত: বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি ও মানবীয় সম্পর্কের জটিলতার আখ্যান


বিশ্বজিৎ চৌধুরীর গদ্যের নিজস্ব স্বকীয়তা আছে। তার গল্পগ্রন্থ “সম্ভ্রমহানির আগে ও পরে” উপন্যাস, “নার্গিস ও বাসন্তী” কিশোর গল্পগ্রন্থ “লিন্ডা জনসনের রাঁজহাস”—বইগুলো দিয়ে তিনি নিজের যে পথ রচনা করেছেন, সেটি লক্ষ্যের অভিমুখেই চলেছে। লক্ষ্য বলতে পথটিকে আরো দূর অবধি আবিষ্কার করা, প্রশস্ত করা। আমাদের আলোচ্য বই বিশ্বজিৎ চৌধুরীর অভিযুক্ত উপন্যাসটি  ব্শ্বিবিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র রাজনীতি আর যৌন হেনস্তার গল্প নিয়ে। ঠিক এর আগের বছরই ২০২৩-এ অভিযুক্ত উপন্যাসে একদম বিপরীত বিষয় কাজী নজরুল ইসলামের জীবনসঙ্গীনীকে নিয়ে বিশ্বজিৎ চৌধুরী লিখেছিলেন আশালতা  উপন্যাসটি। আশালতাঅভিযুক্ত  এই উপন্যাস দু’টি তার বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে অবাধ যাতায়াতের কথাই বলে আমাদের।

তখন প্রশ্ন দেখা দেয়, যিনি এত যত্নের সাথে একটি প্রেমের সম্পর্ককে মনের মাঝে লালন করতে পারেন তিনি কেন তার প্রাক্তন ছাত্রীকে যৌন হেনস্তা করবেন? এমনসব বিপরীতমুখি বিষয়ে গড়ে উঠেছে উপন্যাসটি। আর ক্রমেই মানবিক অনুভূতির গোপনতার সাথে লেখক যতই আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন ততই তিনি সেখানে রাজনীতি, দেশ সম্পর্ককেও নিয়ে আসতে থাকেন। তাই এটি একমুখী কোনো গল্প না হয়ে একটি বহুঅর্থবোধক উপন্যাস হয়ে ওঠে। ফলে বইটি শেষ করেও এর রেশ থেকে যায় মনে।

বিশ্বজিৎ চৌধুরীর অভিযুক্ত উপন্যাসের মূল গল্পটি এরকম, শিক্ষক শাহজাহান হঠাৎই একদিন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়া প্রাক্তন ছাত্রী দেবযানী সাহা’কে যৌন হেনস্তার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। অভিযোগটি তুলে স্বয়ং দেবযানী সাহা। শাহজাহানের পরিবারে যার অবাধ যাতায়াত ছিল, এবং তার স্ত্রী তসলিমার সঙ্গে ছিল গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তাই বিষয়টি গোলমেলে এক রহস্যের মাঝে ফেলে দেয় শাহজাহানসহ পাঠকদের। এখানে কেবল শুরু, এই অভিযোগের ঘটনাটি ক্যাম্পাসকে উত্তপ্ত করার পাশাপাশি শাহজাহানের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনকেও তছনছ করে দেয়।

বিশ্বজিৎ চৌধুরীর উপন্যাস অভিযুক্ত-তে একে একে দৃশ্যমান হতে থাকে শিক্ষক রাজনীতি, ছাত্রনেতা শোয়েব কামরান, ছাত্রী হলের দাপুটে নেত্রী হোসনে আরা সহ অনেকেই। পরিস্থিতি জটিল এক মোড় নেয়। তবে সেখানে শাহজাহানের কলকাতায় রবীন্দ্র ভারতীতে পিএইডি করতে যাওয়ার স্মৃতিও উঠে আসে। তখন মুর্শিদাবাদের মেয়ে নিগার সুলতানার সাথে ঝড়ো প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি যে তার মনে এতদিন গোপনে লুকিয়ে ছিল উন্মোচিত হয় তা-ও। তখন প্রশ্ন দেখা দেয়, যিনি এত যত্নের সাথে একটি প্রেমের সম্পর্ককে মনের মাঝে লালন করতে পারেন তিনি কেন তার প্রাক্তন ছাত্রীকে যৌন হেনস্তা করবেন? এমনসব বিপরীতমুখি বিষয়ে গড়ে উঠেছে উপন্যাসটি। আর ক্রমেই মানবিক অনুভূতির গোপনতার সাথে লেখক যতই আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন ততই তিনি সেখানে রাজনীতি, দেশ সম্পর্ককেও নিয়ে আসতে থাকেন। তাই এটি একমুখী কোনো গল্প না হয়ে একটি বহুঅর্থবোধক উপন্যাস হয়ে ওঠে। ফলে বইটি শেষ করেও এর রেশ থেকে যায় মনে। এখানে উপন্যাসটির শুরুর দিকের একটি অংশ দেখতে পারি আমরা,

“নিজের কন্ঠস্বর নিজেই চিনতে পারছি না, অনেকটা ডুকরে ওঠার মতো অদ্ভুত ধ্বনি বেরিয়ে এসেছে মুখ বা বুকের ভেতর থেকে। আমার পাশে এসে বসল তসলিমা। আমার গলা বেষ্টন করে একটা হাত রাখল কাঁধের ওপর, সান্তনা ও সাহস যোগানোর চেষ্টা। কী আশ্চর্য, সত্যিই তা সঞ্চারিত হলো আমার ভেতরে। এবার আমি বলতে পারব।”

ছোট ছোট বাক্যে এভাবেই মানবিক উদ্বেগ আর নির্ভরতার আখ্যান গড়ে উঠেছেঅভিযুক্ত উপন্যাসটিতে। আর পড়তে পড়তে মনে হয় এই চরিত্রগুলো আমাদের চারপাশ থেকেই উঠে আসা, কোনো নকল নির্মাণ নয়, প্রধান চরিত্র শাহজাহানের সাথে বাকি চরিত্রগুলোও তাই আমাদের সাথে সুখ-দু:খের কথোপকথনে লিপ্ত হয়ে পড়ে, অংশ হয়ে যায় আমাদের।

অভিযুক্ত
বিশ্বজিৎ চৌধুরী
বিষয়: উপন্যাস
প্রকাশনী : প্রথমা প্রকাশন
প্রকাশকাল : ২০২৪
দাম : ৩৪০ টাকা ২০% ছাড়ে বাহিরানায় ২৭২ টাকা।

অভিযুক্ত বইটি কিনতে চাইলে 


মন্তব্য করুন