দিপু চন্দ্র দেব
মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি তখনকার সময়ের বিশাল শিক্ষক, যার অধীনে অনেক ছাত্র শিক্ষাগ্রহণ করছে। তখনই শামস তাবরিজী’র সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটেছিল, আর বদলে গিয়েছিল রুমির জীবন চিরতরে। তখন তিনি সাধনায় মত্ত হয়েছিলেন, হয়ে উঠেছিলেন কবি। খ্যাতির চরম শিখরে অবস্থিত “মসনবি” তারই ফল। আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর অনুবাদে “রুমির গভীর প্রেমালাপ” বন্ধু-শিক্ষক তাবরেজির সঙ্গে তার সাক্ষাতের চিহ্ন—হৃদয়ের আলাপ, প্রেমের বাহন কবিতার।
কবিতাগুলো ফারসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন আজিমা মেলিতা ও মারিয়াম মাফি। আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু ভূমিকা অংশে লিখেছেন, অনুবাদকদ্বয়ের ইচ্ছে ছিল, “আটশ বছর আগে রুমির সঙ্গে একত্রে সময় কাটানোর মানসিক আবহ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তাদের উপলব্ধিকে আরও গভীর করা।” আমরা দেখতে পাই বইটির বাংলা অনুবাদেও অনুবাদক সেই প্রয়াস জারি রেখেছেন।
রুমি আরেক ধরণের কবিতাও লিখেছিনে যেগুলো আমাদের এখানে বেশি আলোচিত হয়নি, সেগুলো হচ্ছে “রুবাই” বাংলায় চতুষ্পদী। এই বইটি সেই রুবাইগুলো নিয়েই, যেগুলো বিভিন্ন সুফী গজলে ব্যবহৃত হয় প্রায়ই। প্রায় ১,৬৫৯ স্তবকের এই চতুষ্পদীগুলো তিনি তাবরেজীর সঙ্গে থাকাকালে এবং পরে লিখেছিলেন। শামস দুইবার রুমী’র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন, প্রথমবার হারিয়ে যাওয়ার পরে ফিরে এসেছিলেন, দ্বিতীয়বার আর ফেরেননি। এ নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে, অনেকে জালালুদ্দীনের ছেলেকে দায়ী করেন এ বিষয়ে, এর সত্যতা যদিও স্থিরনিশ্চিত নয়, তবু তাবরেজীর সঙ্গে থাকাকালে রুমী যে তার অধ্যাপনা থেকে পুরোপুরি অবসরে গিয়েছিলেন—সেটা সত্য, এই অবসর তাবরেজীকে অনেকের চোখেই অসহ্য করে তুলেছিল। তার সঙ্গে রুমির বিচ্ছেদের পর রুবাইগুলোতে বিরহ আসে, সম্পূর্ণ হয়। আমারা যে “সুফী নৃত্য”-এর দেখা পাই তাও রুমি-তাবরেজীর বন্ধুত্ব-বিরহ থেকেই সৃষ্ট।
কবিতাগুলো ফারসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন আজিমা মেলিতা ও মারিয়াম মাফি। আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু ভূমিকা অংশে লিখেছেন, অনুবাদকদ্বয়ের ইচ্ছে ছিল, “আটশ বছর আগে রুমির সঙ্গে একত্রে সময় কাটানোর মানসিক আবহ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তাদের উপলব্ধিকে আরও গভীর করা।” আমরা দেখতে পাই বইটির বাংলা অনুবাদেও অনুবাদক সেই প্রয়াস জারি রেখেছেন। অনূদিত দুইটি রুবাই দেখা যেতে পারে,
হে প্রিয় হৃদয়, কোথা থেকে তুমি প্রিয়তমাকে খোঁজার সাহস পাও
যখন তুমি জানো তোমার মতো আরও কতজনকে সে ধ্বংস করেছে?
আমার হৃদয় বলে ওঠে, আমি ওসবের পরোয়া করি না,
প্রিয়তমার সাথে এক হওয়াই আমার একমাত্র আকাঙ্ক্ষা।
(রুবাই, ১)
আমরা আবদ্ধ নিবিড় বন্ধনে, আমি মাটি তুমি পদক্ষেপ,
তুবও কেমন একতরফা এই প্রেম!
আমি তোমার পৃথিবী দেখতে পাই,
কিন্তু তোমাকে, না তোমাকে দেখতে পাই না।
(রুবাই, ৩)
কবিতাগুলোতে তিনি পৃথিবী, প্রেম, বন্ধুত্ব, অস্তিত্ব ও অনস্তিত্ব, বিরহ ও অর্থ-অনর্থের উপলব্ধিকে প্রকাশ করেছেন। রুবাইগুলো সময়কে পেরিয়ে অবিনশ্বর হয়েছে, কবিতার চিরকালীন ভাব-সুর সঙ্গতির কারণেই। তাই পড়ে মনে হয়, হৃদয়ের গোপন প্রদেশে শব্দধারা যেন কিছু আলোড়ন তুলল। বাংলাদেশে রুমি চর্চায় গতিশীলতা আনা ও কবিতা পাঠকদের মাঝে রুমিকে গভীরভাবে প্রোথিত করবে আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর অনুবাদে রুমির গভীর প্রেমালাপ বইটি।
রুমির গভীর প্রেমালাপ
লেখক: জালালুদ্দীন রুমি
অনুবাদ: আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু
বিষয়: অনুবাদ কবিতা
প্রকাশকাল: ডিসেম্বর ২০২৪
প্রকাশক: ঐতিহ্য
দাম: ২৫০ টাকা।
বইটি কিনতে চাইলে:
রুমির গভীর প্রেমালাপ (Rumir Govhir Premalap) – বাহিরানা