হারুন রশিদের চিৎ-তৌৎ-গং: চেনা চট্টগ্রামের অচেনা ইতিহাস বইটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, তবে এরকমই ইতিহাসের বিস্মৃত অধ্যায় নিয়ে তার আরেকটি বই প্রকাশিত হয়েছিল ২০২৪-এ। ব্রিটিশ সকারের শিক্ষা বিভাগের একজন কর্মচারী বাংলার শরচ্চন্দ্র দাসের উপর হারুন রশীদের শরচ্চন্দ্র দাস: নিষিদ্ধ তিব্বতে প্রথম বাঙালি সেই বই। শরচ্চন্দ্র দাস কীভাবে জেমস বন্ডের মতো গুপ্তচরবৃত্তিতে নিয়োজিত হয়েছিলেন তারই আদ্যোপান্ত বিবরণ বইটিতে তুলে এনেছেন হারুন রশিদ। লেখকের গভীরতাশ্রয়ী গবেষণা বইটিতে এমনসব আশ্চর্য বিষয় উঠে এসেছে যা বাংলায় বর্তমানে অকল্পনীয় মনে হলেও সত্যি। তিনি ইতিহাস বরাবরই পছন্দ করেন, বিশেষ করে যে ইতিহাস অজানা, লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়েছে। শরচ্চন্দ্র দাস বইটিও এর ব্যতিক্রম নয়। বইটি যেকোনো গোয়েন্দা গল্পকেও হার মানায়।
যারা সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা গোয়েন্দা সিরিজ পড়েছেন তারা শরচ্চন্দ্র দাসের অভিযাত্রাগুলোর বিবরণ পড়ে বিস্মিত হবেন, কারণ ফেলুদা কাল্পনিক আর তারটি সত্য। সেটি বিষয় নয়, বলবার কথা হলো, গোয়েন্দা পাঠক আর সাধারণ ইতিহাসের পাঠকেরা তার প্রথম, ১৮৭৯ সালের “তাশিলুম্পু”র দুর্ধর্ষ অভিযানে উপন্যাসের স্বাদ পাবেন। সত্য ঘটনায় সাহিত্যের স্বাদ পাওয়া বাংলায় নতুনই বটে। দ্বিতীয় অভিযান, ১৮৮১ সালে “লাসা” অভিযান, এটিও পূর্বোক্তটির মতোই চমকপ্রদ।
চট্টগ্রামের সন্তান ছিলেন শরচ্চন্দ্র দাস, পৃথিবীব্যাপী তিনি হাজারেরও বেশি লাইব্রেরিতে তার বই রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে তিনি প্রায় বিস্মৃত। বিস্মরণ কোনো জাতির জন্যেই ভালো কিছু বয়ে আনে না। তাকে নিয়ে ২০১৬ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসে নিবন্ধও প্রকাশিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার গুরুত্ব এতেই বোঝা যায়। এর সাথে যোগ করা যায়, হারুন রশীদের শরচ্চন্দ্র দাস: নিষিদ্ধ তিব্বতে প্রথম বাঙালি বইয়ের ভূমিকা থেকে আমরা আশ্চর্য এক তথ্য জানতে পারি, যে রুডইয়ার্ড কিপলিং তার বিখ্যাত কিম উপন্যাসের অংশবিশেষ শরচ্চন্দ্রের অভিযানের উপর ভিত্তি করে লিখেছিলেন, “শোনা যায়, রুডইয়ার্ড কিপলিং-এর কিম উপন্যাসের অংশবিশেষ তাঁর অভিযানের ওপর ভিত্তি করে লেখা।”
বইটিতে তাঁর দুইটি অভিযানের সমস্ত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ১৮৭৯ ও ১৮৮১ সালে তিনি পরপর দুইবার তিব্বত গিয়েছিলেন, অবশ্যই গোপনে। ফেরার সময় নিয়ে এসেছিলেন অনেক গোপন তথ্য ও দুর্মূল্য সব পুঁথির পাণ্ডুলিপি। এই পাণ্ডুলিপি কিন্তু দেশের জন্য চিরকালীন সম্পদ, শরচ্চন্দ্র দাস সংগ্রহ না করলে এগুলো হয়তো কখনওই তখনকার ভারতের হস্তগত হতো না। এই সফলতার ফরস্বরূপ তিনি রায় বাহাদুর উপাধী ও রাণী ভিক্টোরিয়া কর্তৃক সিআইই খেতাব পেয়েছিলেন।
যারা সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা গোয়েন্দা সিরিজ পড়েছেন তারা শরচ্চন্দ্র দাসের অভিযাত্রাগুলোর বিবরণ পড়ে বিস্মিত হবেন, কারণ, ফেলুদা কাল্পনিক হলেও শরচ্চন্দ্র দাসে অভিযান সত্যি। সেটি বিষয় নয়, বলবার কথা হলো, গোয়েন্দা পাঠক আর সাধারণ ইতিহাসের পাঠকেরা তার প্রথম, ১৮৭৯ সালের “তাশিলুম্পু”র দুর্ধর্ষ অভিযানে প্রথম শ্রেণীর গোয়েন্দা উপন্যাসের স্বাদ পাবেন। সত্য ঘটনায় সাহিত্যের স্বাদ পাওয়া বাংলায় নতুনই বটে। দ্বিতীয় অভিযান, ১৮৮১ সালে “লাসা” অভিযান, এটিও পূর্বোক্তটির মতোই চমকপ্রদ। এই দুইয়ের বিরতীর সময়ে তিনি কী কী করেছেন তারও বৃত্তান্ত দেওয়া হয়েছে বইটিতে। এবং শেষে “তিব্বত অভিযানের পর” নামে অধ্যায় যুক্ত করেছেন লেখক।
বলা যায় অভিযানকে কেন্দ্র করেই হারুন রশীদের শরচ্চন্দ্র দাস নিষিদ্ধ তিব্বতে প্রথম বাঙালি বইটি লেখা হলেও, এর মধ্য দিয়ে ব্যক্তি শরচ্চন্দ্র দাস ও তৎকালীন সমাজের একটি চিত্রও উঠে এসেছে এখানে। বইটি সাহিত্য, ইতিহাস আর রোমাঞ্চ-গোয়েন্দা পাঠক সবারই ভালো লাগবে।
শরচ্চন্দ্র দাস : নিষিদ্ধ তিব্বতে প্রথম বাঙালি
লেখক : হারুন রশীদ
বিষয় : ইতিহাস, গোয়েন্দা
প্রকাশকাল : ২০২৪
প্রকাশক : বাতিঘর
দাম : ৮০০ টাকা।
শরচ্চন্দ্র দাস: নিষিদ্ধ তিব্বতে প্রথম বাঙালি বইটি কিনতে চাইলে
