বাহিরানা

দ্য ডেড (1987) চলচ্চিত্র রিভিউ—জন হিউস্টন—জয়েসের অসামান্য গল্পের অনবদ্য চিত্রায়ন


মামুনুর রশিদ তানিম

এই সিনেমার বেশকিছু সিগনিফিক্যান্স আছে। সিনেমার গল্পটা জেমস জয়েসের একই নামের ছোটগল্প অবলম্বনে। সিনেমাটা পরিচালনা করেছেন বিখ্যাত পরিচালক জন হিউস্টন (তাঁর শেষ সিনেমা)। লিখেছেন জন হিউস্টনের ছেলে টনি হিউস্টন (তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চিত্রনাট্য, এরপর সেভাবে আর কিছু বোধহয় লেখেননি) এবং অভিনয় করেছেন জন হিউস্টনের মেয়ে, অন্যতম বিদুষী অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিকা হিউস্টন। পর্দার সামনে পেছনে ট্যালেন্টের ফুল ডিসপ্লে। জেমস জয়েসের অসামান্য গল্পের অনবদ্য চিত্রায়ন এই সিনেমা! জয়েসের গল্পের প্রতি বিশ্বস্ত থেকেই, মেথডিক্যাল কিছুতে রূপ দিয়েছেন জন হিউস্টন।

জয়েসের গল্পের মতোই, এই সিনেমাটাও হিউস্টনের জন্য অত্যন্ত পারসোনাল। জন হিউস্টন বোধহয় বুঝেছিলেন, তাই তাঁর ফিল্মোগ্রাফির শেষ পিস হিসেবে সবচেয়ে উপযোগী গ্রেট পিস’টাই তিনি বেছে নিয়েছেন৷ ক্যারিয়ারে এমন নিখুঁত সমাপ্তি কজনই বা পায়! জীবন এবং পরকালের মাঝে একটা মেডিটেটিভ ব্রিজ হিসেবেই গোটা সিনেমাটাকে রূপ দিয়েছেন তিনি। শান্ত, অবিচল থেকেই অমোঘ আর অভিঘাতসম্পন্ন হয়েছে তাই। তিক্ততা, রিক্ততার মাঝেই নির্মোহভাবে বহতা নদীর মতোই এর বাঁকবিভঙ্গ। পলিশড ফ্রেমে ভরপুর, আভিজাত্যপূর্ণ ফিল্মমেকিংয়ে জয়েসের গল্পের বিমুগ্ধতা তাই আরো গাঢ় হয়।

আয়ারল্যান্ডের, উৎসবমুখর এক শীতের সন্ধ্যার পারিবারিক মহাভোজের আয়োজন ধীরেধীরে গড়িয়েছে এখানে বেদনার্ত; স্মৃতিমেদুরতা ও উষ্ণ কথামালার; জীবন দর্শনের এক আখ্যানে। শোকযাপন প্রয়োজনীয়, কিন্তু সেই শোকযাপন আবার কীভাবে করে অভ্যাসে পরিণত হয়ে কোন চরিত্রকে ভিন্নমাত্রা দিতে পারে- সেই দিকটাও বিশ্লেষণ করে এই সিনেমা। স্মৃতির সংরক্ষণ; স্মৃতির ক্ষয়প্রাপ্তি একটা সময় পর(!); হারানো ভালোবাসা আকড়ে ধরে বাঁচবার আকুতিকে বিমূর্ত করে তোলে এই সিনেমা। জেমস জয়েসের গল্পের ভেতরে যেই ইন-বিল্ট গীতিময়ী ভাব, সেটাকে অনায়সে ধরেছেন জন হিউস্টন৷ ভাবের ব্যঞ্জনায় অনেক বেশি স্বতঃস্ফূর্ত। আবেগের প্রকাশে নিয়ন্ত্রিত।

জয়েসের গল্পের মতোই, এই সিনেমাটাও হিউস্টনের জন্য অত্যন্ত পারসোনাল। জন হিউস্টন বোধহয় বুঝেছিলেন, তাই তাঁর ফিল্মোগ্রাফির শেষ পিস হিসেবে সবচেয়ে উপযোগী গ্রেট পিস’টাই তিনি বেছে নিয়েছেন৷ ক্যারিয়ারে এমন নিখুঁত সমাপ্তি কজনই বা পায়! জীবন এবং পরকালের মাঝে একটা মেডিটেটিভ ব্রিজ হিসেবেই গোটা সিনেমাটাকে রূপ দিয়েছেন তিনি। শান্ত, অবিচল থেকেই অমোঘ আর অভিঘাতসম্পন্ন হয়েছে তাই। তিক্ততা, রিক্ততার মাঝেই নির্মোহভাবে বহতা নদীর মতোই এর বাঁকবিভঙ্গ। পলিশড ফ্রেমে ভরপুর, আভিজাত্যপূর্ণ ফিল্মমেকিংয়ে জয়েসের গল্পের বিমুগ্ধতা তাই আরো গাঢ় হয়।

জন হিউস্টন বাদে আর কেইবা পারত, অনায়সে জয়েসের গল্পের অনন্যতাকে ভিজ্যুয়ালে ধরে স্বকীয়বোধ আর অনুভূতি নিরূপণে এতটা প্রগাঢ় করে তুলতে! সবার ফিল্মোগ্রাফিতে তো আর জন হিউস্টনের মতো ‘দ্য মলটিজ ফ্যালকন’ (১৯৪১), ‘দ্য ট্রেজার অফ সিয়েরা মাদ্রে’ (১৯৪৮), ‘কী লার্গো’ (১৯৪৮), ‘দ্য অ্যাস্ফাল্ট জঙ্গল (১৯৫০), ‘ম্যুলান রুজ’ (১৯৫০), ‘মবি ডিক’ (১৯৫৬), ‘দ্য মিসফিটস’ (১৯৬১), ‘প্রিৎজি’স অনার’ (১৯৮৫)- এর মতো গ্রেট সব সিনেমা নেই! ‘দ্য ডেড’ তাই সার্বিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা, অভিভূতকারী সিনেমা।

দ্য ডেড 
পরিচালক : জন হিউস্টন
প্রকাশকাল: ১৯৮৭

 

(Visited 7 times, 1 visits today)

Leave a Comment