বাহিরানা

সাদাত হোসাইনের সে এসে বসুক পাশে: পরিচয়ের আড়ালে থাকা একজন


সাদাত হোসাইনের সে এসে বসুক পাশে উপন্যাসটি ২০২৩-এর বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। রেণু নামে এক মেয়েকে নিয়ে গড়ে ওঠেছে এর আখ্যানভাগ। বইটি পড়তে পড়তে মনে হয় যে চরিত্র আমাদের পরিচিত বাস্তবতারই অন্যতম অংশ হয়ে থাকা একজন, কিন্তু যাকে আমরা সঠিকভাবে কখনও লক্ষ্য করিনি। লেখক এই নারীটির ভালোবাসা, হাসি, কান্না, বিষাদ আর দীর্ঘশ্বাসের কাহিনী বুনেছেন পুরো বইটিতে। ভালোবাসা আর অপেক্ষার দীর্ঘসূত্রে গাঁথা তার জীবন। পাওয়া না পাওয়ায় সে ক্রমাগত দোলে। এর মাঝেই এক শূন্যতার অনুভূতিও তাকে দখল করে রাখে। হুমায়ূন আহদেমের সাহিত্যের মধ্যবিত্তদের জীবনই তার সাহিত্যচর্চায় অঙ্গীভূত করতে চান সাদাত হোসাইন। কতটুকু সফল হবেন তিনি তা সময়ই বলে দেবে। এখানে উল্লেখ্য সাদাত হোসাইন শুধু উপন্যাসই লেখেন না গল্পও লেখেন। সম্প্রতি প্রকাশিত তার বিলবোর্ড গল্পের বইটিতে ভিন্ন এক লেখককে পাই আমরা, যিনি কথাসাহিত্যের সব শাখায় বিচরণ করতে পছন্দ করেন।

জীবনের অবতলহীন বিষাদের মাঝে জন্ম নেওয়া শূন্যতা যা কার্যত জীবনকেই অন্য সূচনার জন্য প্রস্তুত করে, কিংবা ঘুচিয়ে দেয় সব প্রশ্ন আর উত্তরের বাঁধাধরা সামাজিকতা। লেখক তারই এক টুকরো দিয়ে নির্মাণ করেছেন রেণু নামের চরিত্রটি। যার জীবনকে পড়তে পড়তে সুখ-দু:খের টানাপোড়েনে দুলতে থাকেন পাঠক। আর একসময় অনুধাবন করেন, রেণুর জীবনের এই ঘটনাগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন তারাও জীবনের কোন না কোন কালপর্বে।

রেণুর জীবন আর দশটা মধ্যবিত্ত মেয়ের জীবনেরই প্রতিরূপ, তার মনোজগতেও এসে ভিড় করে ফেলে আসা কারো স্মৃতি, অনুভূতি ডালপালা মেলে নতুন কারো প্রতি। সে সামনে এগিয়ে যেতে চায় আবার অতীতের প্রতিও উদাসীন নয়। কিন্তু কী এক বিষণ্নতা যেন তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তখন সে চায়, কেউ কাছে এসে বসুক। জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’ যেমন সব শেষের উত্তর নিয়ে বসে থাকে আমাদের জন্য— রেণুর এই চাওয়া তেমন নয়, সে চায় তার নির্ভরতা হয়ে কেউ একজন তার পাশে মৌন হয়ে তাকে বুঝুক। সেই একজন তার শূন্যতার অংশ হোক। যেখানে শব্দ আর নীরবতা এক হয়ে মেশে।

জীবনের অবতলহীন বিষাদের মাঝে জন্ম নেওয়া শূন্যতা যা কার্যত জীবনকেই অন্য সূচনার জন্য প্রস্তুত করে, কিংবা ঘুচিয়ে দেয় সব প্রশ্ন আর উত্তরের বাঁধাধরা সামাজিকতা। লেখক তারই এক টুকরো দিয়ে নির্মাণ করেছেন রেণু নামের চরিত্রটি। যার জীবনকে পড়তে পড়তে সুখ-দু:খের টানাপোড়েনে দুলতে থাকেন পাঠক। আর একসময় অনুধাবন করেন, রেণুর জীবনের এই ঘটনাগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন তারাও জীবনের কোন না কোন কালপর্বে। আর তখন তার সাথে পাঠকদের আশ্চর্য এক সহাবস্থানের জন্ম হয়। ঝরঝরে গদ্যে,  প্রেম, প্রতারণা, ঘৃণা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি আর সবশেষে বিষাদ আর শূন্যতার সাধারণ ঘটনাবলির ধীরে ধীরে অসাধারণ হয়ে উঠারই বিবরণই লিপিবদ্ধ করেছেন লেখক সে এসে বসুক পাশে বইটিতে।

সাদাত হোসাইন সবসময়ই ভাষার যোগাযোগক্ষমতা বিষয়ে সচেতন, তার বলা গল্প সহজবোধ্য। ভাষার জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে লেখার মূলভাব থেকে পাঠকদের সরিয়ে দেয় না। সাদাত হোসাইনের সে এসে বসুক পাশে বইটিতেও তা খুব ভালোভাবেই দেখা যায়। বইটির আরেকটি বিশেষত্ব হলো এর বর্ণনা, যথাযথ শব্দ এবং একইসাথে মেদহীন পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ কিন্তু কোনোরকম ক্লান্তি তৈরি করে না। যা আখ্যানটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। তৈরি করেছে দৈনন্দিন জীবনের মাঝে লুকিয়ে থাকা প্রেম আর শূন্যতার কথকতা।

সে এসে বসুক পাশে
লেখক: সাদাত হোসাইন
প্রকাশক: অন্যধারা
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৭২
প্রকাশকাল: ২০২৩
মুদ্রিত মূল্য: ৫৪৭ টাকা।

সে এসে বসুক পাশে বইটি কিনতে হলে

 


মন্তব্য করুন