বাহিরানা

অলবেরুনীর দেখা ভারত বই রিভিউ—প্রেমময় দাশগুপ্ত—নতুন করে বোঝা


দিপু চন্দ্র দেব

অলবেরুনী ছিলেন তৎকালীন হিন্দুস্থানে সুলতান মাহ্‌মুদের একজন রাজবন্দী। তিনি তার ভারততত্ত্ব সেই বন্দী নির্বাসন কালেই লেখেন, তবে বইটি হয়ে ওঠে অমূল্য রত্নসম। তিনি তেরো বছর সংস্কৃত অধ্যয়ন করেন ভারতকে গভীরভাবে জানতে। তার পর্যবেক্ষণক্ষমতা এতই তীক্ষ্ণ যে, যা এত বছর পর আজও গুরুত্ববহ। বইটিতে প্রথমেই তিনি ভারত চর্চার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার বিষয়টিতে আলোকপাত করে শুরু করেছেন। যেমন এর প্রধান দুইটি কারণ হিসেবে বলেছেন, ভাষা ও যোগাযোগ। আরবীর সাথে তুলনা করে বলেছেন, ভাষাটিতে একই শব্দের বহু অর্থ। এবং, এর দুইটি ভাগ রয়েছে, একটি উপরের তলার অধিবাসীদের সাধু ভাষা অপরটি সাধারণ মানুষদের কথ্য ভাষা। বিজ্ঞানচর্চা ও জ্ঞানের বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবহার নিয়েও আলোচনা আছে এখানে। প্রেমময় দাশগুপ্তের “অলবেরুনীর দেখা ভারত” বইয়ে তিনি অলবেরুনীর ভারতকে গভীর ও ভিন্নদৃষ্টিতে দেখা “ভারততত্ত্ব’কে স্বচ্ছ ও সহজভাবে নিয়ে এসেছেন।

ভারতের ভৌগোলিক বিবরণ, ধর্মীয় সামাজিক জীবন, জ্যোতিষ শাস্ত্র, বিভিন্ন হিন্দুশাস্ত্রগ্রন্থ, জাদুকলা, রসায়ন—কোনোকিছুই তিনি তার আলোচনা থেকে বাদ দেননি। মোট কথা একটি ভূখণ্ডকে গভীরভাবে জানতে যা যা আলোচনা করা প্রয়োজন তার সবই করেছেন তিনি। বাদ যায়নি সংস্কৃত ছন্দের আলাপও।

বলা প্রয়োজন, মুসলিমবিশ্ব প্রথম গ্রিক জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা করেছিল, সম্প্রসারণ ও তাতে বহু অমূল্য যুক্তিপরম্পরা যোগ করেছিল। আল বেরুনী সেই ধারারই উত্তরসুরী, তিনি তার বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখতে পান ভারতীয় সময়জ্ঞান বিজ্ঞানভিত্তিক নয়, পরবর্তীতে পাশ্চাত্যসভ্যতা যা নিয়ে আলোচনা করত, তারই নজির আমরা আল বেরুনীর আলোচনাতে পাই। যেমন, ইতিহাসভিত্তিক সংখ্যার ভিত্তিতে সময়ের ভাগ—সেটির অভাব সমগ্র ভারতবর্ষেই আজও বিদ্যমান। যেমন, কোনো বিখ্যাত রাজার জন্ম-মৃত্যুর সময়কে একশ বছরের হিসেবে না ফেলে সেটিকে এক হাজার বছরের হিসেবে উল্লেখ করা। কোনো রাজত্বকালের সময়সীমা পাঁচশ, হাজার বছর বলে উল্লেখ করা, এসব। সেটি বেরুনী লক্ষ করেন। ভারতীয় ধর্ম ও দর্শন নিয়ে তার আলোচনা বিশেষ গুরুত্ববহ আজও। গীতা ও পতঞ্জলির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। প্রায় সবগুলো ধর্ম-দর্শন নিয়েই তিনি আলোচনা করেছেন।

ভারতের ভৌগোলিক বিবরণ, ধর্মীয় সামাজিক জীবন, জ্যোতিষ শাস্ত্র, বিভিন্ন হিন্দুশাস্ত্রগ্রন্থ, জাদুকলা, রসায়ন—কোনোকিছুই তিনি তার আলোচনা থেকে বাদ দেননি। মোট কথা একটি ভূখণ্ডকে গভীরভাবে জানতে যা যা আলোচনা করা প্রয়োজন তার সবই করেছেন তিনি। বাদ যায়নি সংস্কৃত ছন্দের আলাপও।
প্রেমময় দাশগুপ্তের অলবেরুনীর দেখা ভারত অলবেরুনীর ভারতত্ত্বের বিষয়বস্তুকে সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ফলে বইটি ভালোভাবে আত্মস্থ করাও সহজ হয়। তার নিজের জানাশোনার পরিধিও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভূমিকা অংশটিও বেশ সম্মৃদ্ধ।

অলবেরুনীর দেখা ভারত
লেখক : প্রেমময় দাশগুপ্ত
বিষয় : ইতিহাস
প্রকাশকাল : ২০২৫
প্রকাশক : নিয়ন
দাম : ২৫০ টাকা।


Leave a Comment