গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে অনেক জীবনীগ্রন্থ লেখা হয়েছে বাংলা ভাষাসহ বিশ্বের সব ভাষাতেই। শাক্য বংশের রাজকুমার সিদ্ধার্থ গৌতম তার রাজ্য, স্ত্রী যশোধরা ও পুত্র রাহুলকে ত্যাগ করে যে বুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছিলেন, আর পরিণতিতে পৃথিবীর ভাবজগতেই অভূতপূর্ব নতুন চিন্তা যোগ করেছিলেন, সেই গৌতম বুদ্ধের জীবন সম্পর্কে কৌতূহল প্রাচ্য-পাশ্চাত্যে প্রবল হবেই। তার চিন্তা ও তাকে নিয়ে চর্চা এখনও চলমান, জ্যোতি বিকাশ বড়ুয়ার গৌতম বুদ্ধ বইটির পাঠক প্রিয়তা দেখলেও সেটি বুঝা যেতে পারে। বইটি ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয়ে এরপর দুইটি মুদ্রণও নিঃশেষ হয়ে গেছে। পাঠকদের মাঝে বুদ্ধকে জানার আগ্রহ এতে বোঝা যায়। লেখক, গৌতম বুদ্ধের জীবনের প্রারম্ভ থেকে মহানির্বাণ পর্যন্ত তুলে এনেছেন।
এই জীবনীগ্রন্থটির একটি অন্যরকম দিক হলো এর বুননকৌশল, জ্যোতি বিকাশ বড়ুয়া রূপকথার আঙ্গিককে ব্যবহার করতে চেয়েছেন ঘটনা বর্ণনায়। যেমন,
“অনেক অনেক কাল আগের কথা। জম্বুদ্বীপে গান্ধারের মধ্যে অমরাবতী নামে একটি ছোট রাজ্য ছিল। সেখানে সর্বানন্দ নামে এক রাজা রাজত্ব করতেন। তখন পার্শ্ববর্তী রাজ্য রম্যবতীতে ‘বুদ্ধ দীপঙ্কর’ ধর্ম প্রচার করছিলেন।”
“প্রাক্ কথন” থেকে শুরু হয়ে একদম শেষে গিয়ে আমরা পাই “বুদ্ধের ধর্ম” মাঝে এসেছে তার ধর্ম প্রচার নিয়ে চারটি অধ্যায় ও আরো অসংখ্য বিষয়। কোনো দিকই বাদ পড়েনি। যেগুলো গৌতম বুদ্ধকে সাধারণ পাঠকদের কাছাকাছি নিয়ে আসার জন্য যথেষ্ট, আর বইটি রচনার যোগ্যতা বলতে গেলে সেটি বেশি পরিমাণেই লেখকের আছে।
এখানে “অনেক অনেক কাল আগে” বর্ণনাকাঠামোটি রূপকথা, পুরাকথায় ব্যবহৃত হতে দেখি, জ্যোতিপ্রকাশ আঙ্গিকটিকে ব্যবহার করে আলাদা মাত্রা যুক্ত করেছেন। এতে পাঠের আনন্দও বৃদ্ধি পেয়েছে।
ছোট ছোট বাক্যে বুদ্ধের জীবনের ও তার সময়কার সমাজকাঠামোকেও উঠে আসতে দেখি জ্যোতি বিকাশ বড়ুয়ার গৌতম বুদ্ধ বইটতে। বুদ্ধের জন্মস্থান কপিলাবস্তু থেকে তার নির্বাণের পথে যাত্রা সবই উঠে এসেছে বইটিতে। কোনো মহান পুরুষকে জানতে তার সময় ও সমাজকে জানা প্রয়োজন। যেমন, বুদ্ধ “ভিক্ষুণীসংঘ” কেন ও কীভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? তার সময়ের জন্য সেটি বৈপ্লবিকই ছিল, কারণ বুদ্ধধর্মে জাতপাত মানা হয় না। লেখক আলাদা করে এসব বর্ণনা করেননি, বুদ্ধের কার্যাবলীর বিস্তারিত কিন্তু সংহত নিরাবেগ বর্ণানাতেই সেসব চলে এসেছে।
“প্রাক্ কথন” থেকে শুরু হয়ে একদম শেষে গিয়ে আমরা পাই “বুদ্ধের ধর্ম” মাঝে এসেছে তার ধর্ম প্রচার নিয়ে চারটি অধ্যায় ও আরো অসংখ্য বিষয়। কোনো দিকই বাদ পড়েনি। আর, গ্রন্থপঞ্জি যোগ করায় বইটির উৎসমুখ জানার পাশাপাশি অগ্রসর পাঠকদের জন্যও বেশ সুবিধার হয়েছে। বইটি গৌতম বুদ্ধকে সাধারণ পাঠকদের কাছাকাছি নিয়ে আসার জন্য যথেষ্ট, আর বইটি রচনার যোগ্যতা বলতে গেলে সেটি বেশি পরিমাণেই লেখকের আছে। তার বৌদ্ধধর্ম নিয়ে তার জানাশোনা, লেখা ও অভিজ্ঞতা বিশাল।
বুদ্ধধর্মকে বোঝার জন্য এবং এর বিশাল সাতিহ্যকে ভালোভাবে বোঝার জন্য প্রথমেই গৌতম বুদ্ধকে জানা প্রয়োজন, অনুধাবন করাও গুরুত্বপূর্ণ। জ্যোতি বিকাশ বড়ুয়ার গৌতম বুদ্ধ বইটি সেই দায়িত্ব পালন করেছে ভালোভাবেই।
গৌতম বুদ্ধ
লেখক: জ্যোতি বিকাশ বড়ুয়া
বিষয়: জীবনীগ্রন্থ
প্রকাশকাল: ২০২৫
প্রকাশক: কথাপ্রকাশ
মূল্য: ৪০০ টাকা।
