পৃথিবী ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে যেমন আমরা এখনও অনেক কম জানি তেমনি আমাদের মস্তিষ্ক বিষয়েও একই কথা বলা যায়। কিন্তু জানার তো শেষ নেই, জানার আগ্রহ যেহেতু প্রবলভাবেই আছে আমাদের। বর্তমান পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীদের একজন লিসা ফেল্ডমেন ব্যারেটের মস্তিষ্ক সম্পর্কে সাড়ে সাত পাঠ মস্তিষ্কের জানা-অজানা বিষয় নিয়েই। মূল বইটি ইংরেজিতে সেভেন এন্ড অ্যা হাফ লেসনস এবাউট দ্য ব্রেইন প্রকাশিত হয়েছিল ২০২০ সালে। তখন পৃথিবীজুড়ে করোনার বিস্তারে মানুষ অবরুদ্ধ। লিসা ফেল্ডম্যান ব্যারেট (১৯৬৩ থেকে বর্তমান) কানাডিয়ান-আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী। পেশায় তিনি নর্থ ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত অধ্যাপক।
বিজ্ঞানীরা কখনওই মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা থামাননি। কারণও আছে, মানব মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে তা না জানলে এর সর্বোচ্চ ব্যবহার অনেকটাই অব্যবহৃত থেকে যাবে। তাই সভ্যতার অগ্রগতির জন্যে এই জানা প্রয়োজন। কিন্তু বিজ্ঞান এখন পর্যন্ত কতদূর জানতে পেরেছে? লিসা ফেল্ডমেন ব্যারেটের মস্তিষ্ক সম্পর্কে সাড়ে সাত পাঠ বইটি আমাদের তাই জানাবে। বইটি একদমই অন্যরকম এবং অজানা সব তথ্যে পূর্ণ। সেইসাথে সহজপাঠ্যও, একে মানব মস্তিষ্কের বিবর্তনের ইতিহাসও বলা যায়।
লিসা ফেল্ডমেন বইটিতে বিজ্ঞানের সাথে দর্শন, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান—সব কিছু্ই একত্রে পরিবেশন করেছেন। ফলে বহুস্তর জটিলতার পরত খুলতে খুলতে তিনি তার তিনি তার উত্তর প্রস্তুত করেছেন। এতে তার আলোচনার গুরুত্ব যেমন যেমন বেড়েছে তেমনি সহববোধ্যতাও বেড়েছে। যেমন, “আপনার মস্তিষ্ক একটি, তিনটি নয়” অধ্যায়টি তিনি শুরু করেছেন প্লেটোকে দিয়ে, যে, এই দার্শনিক দেশে দেশে যুদ্ধ নয় বরং মানুষের মস্তিষ্কেই যুদ্ধের আবিষ্কার করেছেন, এই যুদ্ধের পেছনে মানুষের ব্রেনের তিনটি প্রবণতাকে চিহ্নিত করেছেন। এভাবে এসেছে এ্যারিস্টট্লসহ আরো অনেক খ্যাতিমানদের নাম।
লিসা ফেল্ডমেন কীরকম আশ্চর্য করতে পারেন তার নমুন বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের শিরোনামেই রয়েছে। আমরা জানি মানুষ শ্রেষ্ঠ কারণ সে চিন্তা করতে পারে, কিন্তু তিনি বলছেন, “আপনার মস্তিষ্ক চিন্তা করার জন্য নয়”, এই অধ্যায়টিকে তিনি বলছেন অর্ধপাঠ, মানে অর্ধেক অধ্যায়। এর পূর্ণ সাতটি অধ্যায় রয়েছে, যথাক্রমে, “আপনার মস্তিষ্ক একটি, তিনটি নয়” আপনার মস্তিষ্ক একটি সম্মন্ধজাল” “ছোট ছোট মস্তিষ্ক তাদের নিজেদের জগতে সম্পর্ক যুক্ত হয়ে আছে” “আপনি যা-কিছু করেন তার প্রায় সবই আপনার মস্তিষ্ক অনুমান করে” “আপনার মস্তিষ্ক অগোচরে অন্য মস্তিষ্কের সঙ্গে কাজ করে” “মস্তিষ্ক বহুবিধ মন গঠন করে” “আমাদের মস্তিষ্ক বাস্তবতা সৃষ্টি করতে সক্ষম”।
অর্ধপাঠ অধ্যায়টিতে মস্তিষ্কের বিবর্তনের ইতিহাস বলা যায়, আলোচনার পরিধি ৫৫০ মিলিয়ন বছর আগে থেকে বর্তমান পর্যন্ত। এককোষী প্রাণের বিবর্তনে প্রথম শিকারী প্রাণীর আবির্ভাব ঘটে, বিজ্ঞানীরা এই সময়পর্বটির নাম দিয়েছেন “ক্যামব্রিয়ান যুগ”। তার মানে মস্তিষ্কের সূচনা হয়েছিল অন্য প্রাণীদের শিকার করে জীবন রক্ষার তাগিদে, চিন্তার জন্য নয়। লিসা ফেল্ডমেন বইটিতে বিজ্ঞানের সাথে দর্শন, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান—সব কিছু্ই একত্রে পরিবেশন করেছেন। ফলে বহুস্তর জটিলতার পরত খুলতে খুলতে তিনি তার তিনি তার উত্তর প্রস্তুত করেছেন। এতে তার আলোচনার গুরুত্ব যেমন যেমন বেড়েছে তেমনি সহববোধ্যতাও বেড়েছে। যেমন, “আপনার মস্তিষ্ক একটি, তিনটি নয়” অধ্যায়টি তিনি শুরু করেছেন প্লেটোকে দিয়ে, যে, এই দার্শনিক দেশে দেশে যুদ্ধ নয় বরং মানুষের মস্তিষ্কেই যুদ্ধের আবিষ্কার করেছেন, এই যুদ্ধের পেছনে মানুষের ব্রেনের তিনটি প্রবণতাকে চিহ্নিত করেছেন। এভাবে এসেছে এ্যারিস্টট্লসহ আরো অনেক খ্যাতিমানদের নাম।
মানব মস্তিষ্ক যে কত গভীর রহস্যময় এবং একইসাথে এর কার্যপ্রক্রিয়া কত বিচিত্র—লিসা ফেল্ডমেন ব্যারেটের মস্তিষ্ক সম্পর্কে সাড়ে সাত পাঠ-এ তার সাথে আমাদের সম্যকভাবেই পরিচয় ঘটে। মস্তিষ্ক বিষয়ে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে তার সবই তুলে এনেছেন তিনি। প্রতিটি অধ্যায়েই এক একটি আবিষ্কারের তটভূমিতে উপনীত হয়েছেন আমাদের বিস্মিত করে। বইটি বাংলায় অসাধারণ অনুবাদ করেছেন রাজীব এল. দাস। তার অনুবাদ সহজবোধ্য বাংলায় হওয়ায় সব ধরণের পাঠকই বইটিতে আনন্দ খুঁজে পাবেন। আপনার মস্তিষ্ককে আরো সচল করতে ভালো হওয়ার ৬টি উপায় লেখাটি পড়তে পারেন।
মস্তিষ্ক সম্পর্কে সাড়ে সাত পাঠ
লেখক: লিসা ফেল্ডমেন ব্যারেট
অনুবাদ: রাজীব এল. দাস।
বিষয়: বিজ্ঞান, প্রবন্ধ
প্রকাশকাল: ২০২৫
প্রকাশক: দিব্য প্রকাশ
দাম: ৩০০ টাকা।
