বাহিরানা

দ্য আরলি কেসেস অভ আকেচি কোগোরো বই রিভিউ—এদোগাওয়া রাম্পো—একপেশে গল্প ও নীরস, অনুবাদেও তাই


মামুনুর রশিদ তানিম


এদোগাওয়া রাম্পো’র গোয়েন্দা আকেচি কোগোরো’র সাথে দীর্ঘ পরিচয়পর্বটা (৪’টা কেস) বেশ আন্ডারওয়েলমিং বলা চলে! অনেকখানি নীরস৷ ‘আরলি কেসেস’-এ কিছুটা অপরিপক্ব বা অতি উৎসাহী গোয়েন্দার দেখা পাওয়া যেতে পারে, সেটা মানা যায়। কিন্তু এখানে গোয়েন্দা যতখানি সরস, তার কেসগুলো ততখানিই নীরস। ক্ষেত্রবিশেষে শিশুতোষ। বিশেষ করে, এই বইয়ের প্রথম ৩’টা কেসে (ডি. হিলের হ’ত্যাকাণ্ড, কালো হাতের সংঘ, প্রেতাত্মার প্রতিশোধ)। ছোট গল্প এগুলো। প্রথমে কেসের প্রেক্ষাপট, তারপর ধুম করে কেসের মোটিফ ও সমাধান প্রক্রিয়া। তদন্তের বিবরণও অতি ঠুংকো, যার কারণে গল্পগুলো আরো একপেশে এবং খেলো মনে হয়েছে।

এই বইয়ে সেই নুয়্যান্সিটিরই দেখা নেই, (রাম্পোর) মূলে না থাকাতে অনুবাদও বোধকরি আড়ষ্ট হয়ে গুটিয়ে গেছে আর অসচেতনভাবে, ক্লেদাক্ত ভাব প্রকাশ করে দিয়েছে। তো, রাম্পো আরলি কেসে তো সারমেয়হীন রইলেন অধিকাংশে, লেটার কেসের অগ্রগতি জেনে নেবার একটা ইচ্ছা থাকল

এরমধ্যে অনুবাদের অধারাবাহিকতা তো আছেই। বিশেষ করে দ্বিতীয় গল্প ‘কালো হাতের সংঘ’ এবং শেষের উপন্যাসটি, ‘দৈবাঙ্গ বামন’। অনুবাদক এখানে অনুবাদ তো ঠিকই করেছেন, কিন্তু দ্বিতীয় গল্পটি পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে তিনি স্রেফ শব্দের অনুবাদই করেছেন। শব্দের পর শব্দে বাক্য, আর বাক্যের পর বাক্যে যে গদ্য হচ্ছে—সেই গদ্যের প্রিসাইশন; মসৃণতা; ধারাবাহিকতা ওতে নেই। ফলে পড়তে গিয়ে হোঁচট খেতে হয় বারেবারে। একে তো অতি মাঝারি গল্প, তারউপর বাহুল্যতা ও বাগাড়ম্বরতায় চিকন ঘাম ছুটে যায় কুঞ্চিত ভ্রু’র চারপাশের অঞ্চলে।

‘দৈবাঙ্গ বামন’, উপন্যাসিকা আকারের গল্পটিতে এই সমস্যার অনেকখানি কাটানো গেছে। একমাত্র ওটা পড়তে গিয়ে যা কিছুটা ভালো লাগা কাজ করেছে। তা এদোগাওয়া রাম্পো শেষে মনজো আর মিসেস ইয়ামানোর কোণ এনে, সেটাকে আবার ঠিকানাহীন ভাবে ভ্যানিশ করে দিয়ে এবং মনজো’কেও অনেকখানি আড়াল করে দিয়ে আর সমাধানের পথ সুগম করতে সহজবোধ্য কিছু উপাদান নিয়ে এসে গোটা গল্পটাকে অনেকখানি ‘বাঙাল’ করে ফেলেছেন। কাঁচা। আরেকটু কষ্টার্জিত হওয়া দরকার ছিল, আর ঘটনার ঘনঘটা একটু বেশিই দৈবিক।

তবে (রাম্পো) জাপানিজ সমাজের টুইস্টেড আচারআচরণ ও নিগূঢ় মনস্তত্ত্বের চরিত্রদের অনায়সেই ধরেছেন প্রতিটা গল্পেই। গল্প ভালো না হলেও পড়ে কিছুটা আরাম পাওয়া গেছে লুৎফুল কায়সারের অনূদিত ‘ডি. হিলের হ’ত্যাকাণ্ড’ ও ‘প্রেতাত্মার প্রতিশোধ’। কিন্তু তার অনূদিত গদ্যও তুলনামূলক ছন্দহীন৷ অথচ, ‘জাপানের অদ্ভুতুড়ে সব গল্প’ বইয়ে রাম্পো ও অনুবাদক কায়সার দুজনেই বেশ জ্বলজ্বলে। উপাদান আর জনরা অলংকারে ভারী সেসব গল্পের গদ্যও যথেষ্ট মেদহীন, বিবরণীয় এবং সৌকর্যময়। অনুবাদ ওমন নিপুণ আর আত্মিক হবার ফলেই কিন্তু গদ্যের এই নুয়্যান্সিটি ধরা গেছে।

এই বইয়ে সেই নুয়্যান্সিটিরই দেখা নেই, (রাম্পোর) মূলে না থাকাতে অনুবাদও বোধকরি আড়ষ্ট হয়ে গুটিয়ে গেছে আর অসচেতনভাবে, ক্লেদাক্ত ভাব প্রকাশ করে দিয়েছে। তো, রাম্পো আরলি কেসে তো সারমেয়হীন রইলেন অধিকাংশে, লেটার কেসের অগ্রগতি জেনে নেবার একটা ইচ্ছা থাকল, অন্য গল্পে মানুষের; সার্বিকভাবে জাপানি সমাজের টুইস্টেড মনস্তত্ত্বকে যতটা প্রলেপিত আকারে তিনি রূপ দিতে পারেন, সেই প্রশংসার জায়গা হতে৷

দ্য আরলি কেসেস অভ আকেচি কোগোরো
লেখক: এদোগাওয়া রাম্পো
অনুবাদ: লুৎফুল কায়সার, শুভঙ্কর শুভ, তাসফিয়া প্রমি
প্রকাশক: নটিলাস প্রকাশনী
প্রকাশকাল: ২০২৪
মূল্য: ৪৫০ টাকা।

বইটি কিনতে চাইলে:

দ্য আরলি কেসেস অভ আকেচি কোগোরো (The Early Cases Of Akechi Kogoro) – বাহিরানা

(Visited 2 times, 1 visits today)

Leave a Comment