ভ্রমণ কখনও কখনও ঐতিহাসিক কর্ম হয়ে ওঠে। তবে কখনও শব্দটি বাদ দিয়েও বলা যায় আদতে সব ভ্রমণকাহিনীই ঐতিহাসিক, কারণ একটি সময় আর জনপদকে জানতে সেই সময়টি নিয়ে ভ্রমণবৃত্তান্তগুলো বড় ভূমিকা পালন করে। যেমন ইবনে বতুতা, ফা-হিয়েনদের কথা বলা যায়, তাদের লেখার মাধ্যমে এমনসব কথা আমরা জানতে পারি, যা তাদের বিবরণ ব্যতীত জানা দুরূহ হতো। আলোচ্য বই দেলওয়ার হাসানের ভ্রমণকারিবন্ধুর পত্র: কবিবর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত নিয়ে এই কথাগুলো। বইটি বর্তমানে ঐতিহাসিক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
জমিদার ও তার প্রজাদের সম্পর্ক কেমন ছিল? কেমন ছিল সেইসসময়ের রীতি-নীতি, আচার-সংস্কার? সেসব তিনি তুলে এনেছেন এই ভ্রমণকাহিনীতে। সেইসাথে রাজকর্মচারী ও পেশাজীবীদের কর্মপ্রবাহ ও নদীঅঞ্চলের মানুষের জীবনের এক অনবদ্য বর্ণনা পাওয়া যায় তার কাছে। ফলে ব্রিটিশ শাসনের সময়টির এই জনপদের ঐতিহাসিক একটি বিবরণও অনায়াসেই বলা যায় বইটিকে।
ইশ্বরচন্দ্র গুপ্ত কবি হলেও তিনি সম্পাদকও ছিলেন, কিন্তু তার আরেকটি গুণ ছিল, সেটি হলো বাংলায় প্রথম সফল ভ্রমণকাহিনি পালামৌ বইয়ের লেখক সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো তিনিও ভ্রমণ করতে পছন্দ করতেন, বলা যায় এটা তার নেশা ছিল। তিনি সেগুলো নিয়ে লিখতেন, একজন সাহিত্যিকের অনবদ্য ভাষায় কিন্তু একজন ঐতিহাসিকের পরিশ্রমসাধ্য সত্য উদঘাটনের মানসিকতাও থাকত সেই বিবরণগুলোয়। ভ্রমণের বিষয়ে তার একটি বিশেষ ঝোঁক ছিল, সেটি হলো নিম্নবঙ্গ বা পূর্ববঙ্গ, তিনি এই অঞ্চলটিতে ভ্রমণ করেছিলেন। নৌকাযোগে ১৮৫৪ সালে তিনি ঢাকা, বরিশাল, রাজশাহী, পাবনা, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ত্রিপুরা ও চট্টগ্রাম ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। তার যাত্রার শুরু হয়েছিল রাজশাহী থেকে। কিন্তু বইটির নাম “ভ্রমণকারিবন্ধুর পত্র” হলো কেন? এর কারণ তিনি সংবাদ প্রভাকর নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন, সেখানেই তার ভ্রমণবৃত্তান্তগুলো এই নামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেছিলেন। আসলে এই ভ্রমণকারিবন্ধু ছিল কবি ইশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ছ্দ্মনাম। আর এই ছদ্মনামের লেখাগুলোরই প্রতিলিপি সংস্করণ দেলওয়ার হাসানের সম্পাদনায় মলাটবন্দী হয়ে এসেছে।
উনিশ শতকের বাংলার শান্ত মফস্বল কেমন ছিল? নদীঘেরা নিম্নবঙ্গের এক অনবদ্য আখ্যান তিনি এই ভ্রমণগদ্যে তুলে এনেছেন। তবে বিশেষ করে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই লেখাগুলোর আরেকটি মূল্য আছে, তা হলো, সিপাহি বিদ্রোহের আগের বাংলার জনপদ-সংস্কৃতির, আচার-ব্যবহারের একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ। জমিদার ও তার প্রজাদের সম্পর্ক কেমন ছিল? কেমন ছিল সেইসসময়ের রীতি-নীতি, আচার-সংস্কার? সেসব তিনি তুলে এনেছেন এই ভ্রমণকাহিনীতে। সেইসাথে রাজকর্মচারী ও পেশাজীবীদের কর্মপ্রবাহ ও নদীঅঞ্চলের মানুষের জীবনের এক অনবদ্য বর্ণনা পাওয়া যায় তার কাছে। ফলে ব্রিটিশ শাসনের সময়টির এই জনপদের ঐতিহাসিক একটি বিবরণও অনায়াসেই বলা যায় বইটিকে।
দেলওয়ার হাসান সংগ্রহের সাথে সাথে একটি সম্মৃদ্ধ ভূমিকা দিয়ে বইটিকে দারুণ পাঠ-উপযোগী করেছেন। দেলওয়ার হাসানের ভ্রমণকারিবন্ধুর পত্র কবিবর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত বইটির মধ্যে থাকা পূর্ব বাংলা ও ঢাকার ইতিহাস প্রসঙ্গে একই বছর প্রকাশিত আরেকটি বই ঢাকার নবাব পরিবার ও তৎকালীন ঢাকার সমাজ বইটিতেও ঢাকার নবাব আমলের অন্যরকম এক ইতিহাস রয়েছে। আর দেলওয়ার হাসান শুধু পূর্ব বাংলার ইতিহাসই নয় বাঙালির সামাজিক পদবীর ইতিহাস নিয়েও আগ্রহী, তার বাঙালির সামাজিক পদবীর ইতিহাস বইটিতে বাঙালির নামের শেষে থাকা পদবীর ইতিহাস খুঁজে বের করেছেন তিনি। যাকে বলে একটি জাতির সর্ববিষয়ে আগ্রহ, তিনি সেরকম কাজ করছেন। এই বই দুটির উপর আলোচনাও পড়তে পারেন।
ভ্রমণকারিবন্ধুর পত্র: কবিবর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
লেখক: ইশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
সংগ্রহ ও ভূমিকা: দেলওয়ার হাসান
বিষয়: ভ্রমণ
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২৪
প্রকাশক: পাঠক সমাবেশ
দাম: ৩৯৫ টাকা ২০% ছাড়ে বাহিরানায় ৩১৬ টাকা।
ভ্রমণকারিবন্ধুর পত্র: কবিবর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত বইটি কিনতে চাইলে
