দর্শনকে সহজে বোঝার জন্য সব শ্রেণীর পাঠকদের জন্য বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে যত বই আছে তার মধ্যে অন্যতম ইয়স্তাইন গোর্ডারের সোফির জগৎ। ১৪ বছর বয়সী সোফি অ্যামুন্ডসেনকে তার বাবা ছদ্মনামে নাটকীয়ভাবে দর্শন শেখার এক কোর্সে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করেন, এরপরই একের পর এক বিভিন্ন জায়গায়, কখনও চিঠির বাক্সে, কখনও বাগানের লুকোনো অংশে—সোফির কাছে চিঠি আসতে থাকে …আর তার কাছে উন্মুক্ত হতে থাকে অনির্বচনীয় এক জগৎ, যেখানে ছদ্মনামধারী চিঠির লেখক তাকে জানায় দর্শনের সূত্রপাত হয় কৌতূহল আর বিস্ময়ের মাধ্যমে। এখান থেকেই সব শুরু। বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছে জি এই হাবীব।
শ্রেণীদ্বন্দ্ব আর পুঁজির বিকাশ এবং মানুষের মনস্তত্ত্বের দু্ই ভিন্ন দিগন্ত উন্মোচন করা জটিলতা আবিষ্কার করে যে দুইজন ব্যক্তিত্ব উনবিংশ আর বিংশ শতাব্দীকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছেন তারা যথা ক্রমে “কার্ল মার্ক্স” এবং “সিগমুন্ড ফ্রয়েড”, সুফীর জগতে আলোচনা করা হয়েছে তাদের কাজ নিয়েও।
তবে বলে নেওয়া ভালো, বইটিতে আমাদের প্রাচ্যের সুগভীর, ঋদ্ধ দর্শনের ইতিহাস স্থান পায়নি, তাই একে পাশ্চাত্যের দর্শনের বই বলাই ভালো। বইটির বিশেষত্ব হলো পাশ্চাত্য দর্শনের ৩ হাজার বছরের ইতিহাস আলোচনায় লেখক বেছে নিয়েছেন উপন্যাসের আঙ্গিক, যা দর্শন আলোচনায় অভিনব বলা যায়। আরেকটি দিক হলো জটিল সব তাত্ত্বিক মতবাদকে এখানে তুলে আনা হয়েছে একদম সহজবোধ্যভাবে।
প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকদের থেকে শুরু করে বিগ ব্যাং থিওরিতে এসে শেষ হয়েছে বইটি। সবচেয়ে প্রাচীন “থেলিস” থেকে ইউরোপের মধ্যযুগ, আধুনিক যুগের যাবতীয় মতবাদসহ একটি নদীর রহস্যময় বাঁকগুলো আবিষ্কারের মতো দর্শনের উত্তেজনাকর এক ভ্রমণ সোফি অ্যামুন্ডসেনকে উপহার দিয়েছেন ছদ্মবেশধারী সেই দর্শনের শিক্ষক, সাথে পাঠকদেরও। শ্রেণীদ্বন্দ্ব আর পুঁজির বিকাশ এবং মানুষের মনস্তত্ত্বের দু্ই ভিন্ন দিগন্ত উন্মোচন করা জটিলতা আবিষ্কার করে যে দুইজন ব্যক্তিত্ব ঊনবিংশ আর বিংশ শতাব্দীকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছেন তারা যথা ক্রমে “কার্ল মার্ক্স” এবং “সিগমুন্ড ফ্রয়েড”, সোফির জগৎ-এ আলোচনা করা হয়েছে তাদের কাজ নিয়েও।
ইয়স্তাইন গোর্ডারের সোফির জগৎ-এর অসাধারণ অনুবাদ করেছে জী এইচ হাবীব। আমরা দেখেছি তিনি মূলের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে অনুবাদ করেন, আবার একইসাথে বাংলা ভাষার প্রবাহমানতাও বজায় রাখেন, তার মার্কেসের একশ বছরের নি:সঙ্গতা ও উমবের্তো একোর গোলাপের নাম-এর মতো জটিল-গঠন বইদুটির সফল অনুবাদের ধারাবাহিকতা এই বইয়ের ক্ষেত্রেও আছে। বাংলা অনুবাদে তার অবদান অনেক। আর বইটিতে জি এইচ হাবীবের একটি সম্মৃদ্ধ ভূমিকা একে আরো সম্মৃদ্ধ করেছে।
বইটির সূচনায় ইয়স্তাইন গোর্ডার গ্যেটের একটি মন্তব্য উদ্ধৃত কেরেছেন, বাক্যটি হলো, “তিন হাজার বছর যে কাজে লাগাতে পারে না তার জীবন অর্থহীন”। আশ্চর্য সোফির জগৎ-এ সেই চেষ্টা করা হয়েছে।
সোফির জগৎ
লেখক: ইয়স্তাইন গোর্ডার
অনুবাদ: জি এইচ হাবীব
বিষয়: দর্শন, ইতিহাস
প্রকাশকাল: দ্বিতীয় সংস্করণ, ২০২৩
প্রকাশক: সংহতি প্রকাশন
দাম: ৮৫০ টাকা ২০% ছাড়ে বাহিরানাতে ৬৮০ টাকা।
বইটি কিনতে চাইলে:
সোফির জগৎ (Sufir Jogot) – বাহিরানা
