দিপু চন্দ্র দেব
দারিদ্র বিমোচনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অবদান শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী। পৃথিবীর পুঁজিবাদ বর্তমানে যে অবস্থায় এসে পৌঁছেছে সেটিকে তিনি বিপর্যয় হিসেবেই দেখেন। সেখান থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন নতুন কোনো তত্ত্বের, যা মাইক্রোফাইনান্স বা ক্ষুদ্রঋণ তত্ত্ব নামে তিনি ইতোমধ্যেই দিয়েছেন। প্রথাগত অর্থনীতির বিবেচনায় যেটিকে বৈপ্লবিক বলা যায়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের “তিন শূন্যের পৃথিবী” আদতে বর্তমান বিশ্ব অর্থব্যবস্থার উন্নতি নিয়ে তার চিন্তাক্রমের বই। বইটিতে তিনি নতুন পৃথিবী গড়ার একটা পথ দেখাতে চেয়েছেন, অর্থনৈতিক তত্ত্বের সাথে তার পর্যবেক্ষণ ও বর্তমানে সেই তত্ত্ব দ্বারা অনুপ্রাণিত বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের উদাহরণও তুলে ধরেছেন। এটি ইংরেজিতে “অ্যা ওয়ার্ল্ড অব থ্রি জিরোস” শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল, বর্তমান বইটি এর বাংলা অনুবাদ।
বইটির একটি বিশেষত্ব হলো তিনি তার চিন্তা কোনো একক দেশকে উপলক্ষ করে সাজাননি। মানে হচ্ছে, তিনি এখানে কোনো একটি দেশের অর্থনীতিতে সীমাবদ্ধ নন। সব দেশকেই বিবেচনায় রেখেছেন। তৃতীয় বিশ্বের সাথে উন্নত বিশ্বও তার চিন্তপ্রকল্পকে কাজে লাগিয়েছে যেহেতু।
কিন্তু তিন শূন্য বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন? দারিদ্র, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে একদম শূন্যে নামিয়ে আনাকেই তিন শূন্য নাম দিয়েছেন তিনি। যা সত্যি করা বর্তমান পৃথিবীতে স্বপ্ন বলেই মনে হয়। কিন্তু তার ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প বাংলাদেশসহ আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। অসংখ্য কর্মসংস্থানের পাশাপাশি তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে তার এই প্রকল্পের অবদান বিশাল। তাই তার তিন শূন্য বাস্তবায়নের লক্ষ্য অলীক মনে হয় না বরং সম্ভাবনাময় বলেই মনে হয়, আশাবাদীও করে।
বইটির একটি বিশেষত্ব হলো তিনি তার চিন্তা কোনো একক দেশকে উপলক্ষ করে সাজাননি। মানে হচ্ছে, তিনি এখানে কোনো একটি দেশের অর্থনীতিতে সীমাবদ্ধ নন। সব দেশকেই বিবেচনায় রেখেছেন। তৃতীয় বিশ্বের সাথে উন্নত বিশ্বও তার চিন্তপ্রকল্পকে কাজে লাগিয়েছে যেহেতু। যেমন, মেককেইন, রেনাল্টের মতো প্রতিষ্ঠান ইউনূসের নুতন অর্থনৈতিক মডেলকে ব্যবহার করছে। আমরা জানি অর্থনীতির সব সূত্র সব দেশের অর্থব্যবস্থায় কাজ করে না, কিন্তু ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পকে এর ব্যতিক্রম বলা যায় অনেকটা।
বইয়ের প্রথম অংশে তিনি বর্তমান পুঁজি ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছেন। এরপর নুতন সভ্যতা গড়ার জন্য নতুন অর্থব্যবস্থাপনায় সামাজিক ব্যবসায়ের কথা আলোচনা করেছেন। এরপর তৃতীয় ভাগে আলোচনা করেছেন, তারুণ্য, প্রযুক্তি এবং মানবাধিকার নিয়ে। তারুণ্যের শক্তি ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়, আর মানবাধিকার ও সামাজিক রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধান ছাড়া সবকিছুই অনর্থে রূপ নিতে পারে। প্রযুক্তির শক্তিকেও সেখানে বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন অবশ্যই। তবে, তিনি এমন এক অর্থব্যবস্থার গড়ার কথা বলছেন যেটা সমাজের সব শ্রেণীর জন্যেই সমান সুবিধাজনক হবে, বাস্তবে সেটা হওয়া কঠিনই, কিন্তু এরও পথ নির্দেশ বাতলেছেন তিনি।
বইয়ের শেষ দুইটি লেখায় তিনি নতুন পৃথিবী গড়তে কোন ধরণের অর্থনৈতিক কাঠামো প্রয়োজন এবং আগামীর পৃথিবীর নতুন নকশা নিয়ে আলোচনা করেছেন। বইয়ের পাঠযোগ্যতা বাড়িয়েছে শেষে থাকা নোটস ও টিকা। বইটি সবধরণের পাঠকদের জন্যেই গুরুত্বপূর্ণ, অবশ্যপাঠ্য।
তিন শূন্যের পৃথিবী
লেখক : ড. মুহাম্মদ ইউনূস
অনুবাদ: ইরফান শেখ, তাহসীন কাইয়ুম, রাকিব হোসেন মৃদুল
বিষয় : অর্থনীতি, প্রবন্ধ, গবেষণা
প্রকাশকাল : ২০২৫
প্রকাশক : অনন্যা
দাম : ৭৫০ টাকা।
বইটি কিনতে চাইলে:
তিন শূন্যের পৃথিবী (Tin Shunner Prithibi) – বাহিরানা