বাহিরানা

দ্য ভেজিটেরিয়ান বই রিভিউ—হান কাং—মানুষের সম্পর্ক বিষয়ে অন্যরকম উপন্যাস


দিপু চন্দ্র দেব

একটা সাধারণ পরিবার যেখানে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই খুবই সাধারণ এক জীবন যাপন করে। সেখানে হঠাতই স্ত্রীর একটি সিদ্ধান্ত অসাধারণ বাঁকের মুখোমুখি করে পরিবারটিকে। তাদের জীবনের পরিচিত পরিসর আমূল বদলে যায়। ইয়ং-হে যার সম্পর্কে তার স্বামীর বক্তব্য দিয়েই নোবেল জয়ী হান কাংয়ের “দ্য ভেজিটেরিয়ান” উপন্যাসটি শুরু হয়। এই বলে যে, “আমার স্ত্রী নিরামিষাশী হবার আগ পর্যন্ত, বরাবরই আমি তাকে অতি সাদামাটা সাধারণ একজন নারী হিসেবেই দেখে এসেছি।” চামড়াহীন বাস্তবতায় প্রবেশ যাকে বলে, এ যেন তাই। কোনো ভণিতা নেই। হান কাং এরপর পরতে পরতে সমাজ ও পরিবারের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে থাকেন।

নোবেল জয়ের পর হান কাংয়ের দ্য ভেজিটেরিয়ান উপন্যাসটির অসংখ্য অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তবে যা হয় বেশিরভাগই বাজার ধরার চেষ্টা। সাবাবা মোর্শেদ টুই-এর অনুবাদটি ব্যতিক্রম। পড়ে মনে হয় তিনি বইটির ভেতর প্রবেশ করেছেন, আর মূলের গীতিময়তাকে সহজ, সাধারণ কিন্তু তীর্যকভাবে বাংলায় নিয়ে এসেছেন।

ইয়ং-হে একদিন হঠাত করেই ভেজেটেরিয়ান হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ হিসেবে সে একটি দুঃস্বপ্নে কথা বলে। কিন্তু তার স্বামী বা পরিবারের কেউ তার এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারে না। কিন্তু সে অনড়। তার সংসার ভেঙে যেতে থাকে। তবু সে কোন অজানা ক্ষমতাবলে তার অবস্থান থেকে সরে না। নিজের জন্য কোনো লক্ষ্য স্থির করা যে কতটা শক্তি দাবী করে, আর সেই লক্ষ্যকে আকড়ে থাকার জন্য যে কী পরিমাণ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সমাজ, আপনজনদের শৃঙ্খলা একে একে উন্মোচিত হতে থাকে, হান কাং এই অসাধারণভাবে সাধারণ উপন্যাসটিতে তা আমাদের সামনে উপস্থাপিত করেন।

উপন্যাসটিতে তিনটি ভাগ রয়েছে, “নিরামিষাশী” “মঙ্গোলীয় চিহ্ন” ও “জ্বলন্ত বৃক্ষেরা”। একজন অসফল শিল্পী যে আবার ইয়ং-হের ভগ্নিপতি, তার ভেতর ইয়ংয়ের প্রতি অদম্য কামনা কাজ করে। অন্যজন ইন-হে ইয়ং-হের বড় বোন। এক কসমেটিক স্টোরের ম্যানেজার। তাদের জীবনও তুলে ধরেছেন হান কাং। কাফকার মেটামরফসিস-এ জোসেফ কে’র মধ্য দিয়ে যেরকমভাবে আমরা রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবারের মুখোমুখি হই, হান কাংয়ের ভেজিটেরিয়ান-এও তাই। তবে ভিন্ন ও নতুন আঙ্গিকে অবশ্যই।

নোবেল জয়ের পর হান কাংয়ের দ্য ভেজিটেরিয়ান উপন্যাসটির অসংখ্য অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তবে যা হয় বেশিরভাগই বাজার ধরার চেষ্টা। সাবাবা মোর্শেদ টুই-এর অনুবাদটি ব্যতিক্রম। পড়ে মনে হয় তিনি বইটির ভেতর প্রবেশ করেছেন, আর মূলের গীতিময়তাকে সহজ, সাধারণ কিন্তু তীর্যকভাবে বাংলায় নিয়ে এসেছেন। তবে অনেক জায়গায় শব্দের অতিব্যবহার চোখে লাগে, যেমন, “তার মন জয় করার জন্য জ্ঞানের প্রদর্শন জাহির করারও তাই প্রয়োজন হয়নি।” এখানে প্রদর্শনের পর জাহির অতিরিক্ত শব্দ, এটা একটু ভিন্নভাবে অনুবাদ করা যেত। এরকম আরো কয়েক জায়গায় রয়েছে। তবে তার অনুবাদে বইটি সুখপাঠ্য হয়েছে। ভিন্ন ধরণের এই উপন্যাস পাঠকদের পাঠ-অভিজ্ঞতাকে সম্মৃদ্ধ করবে।

দ্য ভেজিটেরিয়ান
লেখক: হান কাং
অনুবাদ: সাবাবা মোর্শেদ টুই
বিষয়: অনুবাদ উপন্যাস
প্রকাশকাল: ২০২৫
প্রকাশক: তরফদার প্রকাশনী
দাম: ৩৪০ টাকা। 

বইটি কিনতে চাইলে:

দ্য ভেজিটেরিয়ান (The Vegetarian) – বাহিরানা


Leave a Comment