বাংলাদেশ একটি ছোটো দেশ, আয়তন মাত্র ১,৪৮,০০০ (একলক্ষ আটচল্লিশ হাজার) বর্গ কিলোমিটার। প্রকৃতির অপার রহস্য কে জানতে পারে ঠিক? জানারইবা শেষ কোথায়? এসকল প্রশ্ন এসে উঁকি দেয় মনে। সবুজ বনানী আর হাজারো নদ-নদীতে ঘেরা ষড়ঋতুর এই দেশে বসবাস করে সাতশোর উপর প্রজাতির পাখি। এর মধ্যে তিনশো বিশ প্রজাতি পরিজায়ী। সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিজায়ী পাখিগুলো আগমন করে শীতকালে। সে কারণে, পাখি পর্যবেক্ষকরা সাধারণত এই ঋতুতেই পাখি দেখতে ঘুরে বেড়ান। তখন আবাসিক ও পরিযায়ী মিলে অসংখ্য পাখি দেখে তাঁরা গভীর আনন্দ পান। অনেকের কাছেই, প্রকৃতির সুন্দরতম উপাদান হচ্ছে পাখি। পাখি প্রকৃতির এমন এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যাদের নিয়ে কবি কবিতা লিখেছেন।
বিলেতে উপমহাদেশের পাখির ফিল্ডগাইড প্রকাশক ক্রিস্টোফার হেম বাংলাদেশের পাখির বাংলা ফিল্ডগাইড প্রকাশের উদ্যোগ সম্মন্ধে জেনে অত্যন্ত উল্লসিত হন এবং উপযাচক হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি ইনাম আল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়ে দেন তাঁদের ফিল্ডগাইডে ব্যবহৃত ছবিগুলো তিনি বাংলা বইয়ের উদ্যোক্তাদের উপহার হিসেবে দিতে চান। বিনামূল্যে দিতে চাইছেন! সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁরা একটি সিডিতে করে সবগুলো ছবি পাঠিয়ে দেন। সেই ছবিগুলোই বাংলাদেশের পাখির ফিল্ডগাইডে ব্যবহার করা হয়েছে।
পাখি দেখা, একটি শখ হিসেবে পৃথিবীতে বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে বহুবছর ধরে চালু আছে। বাংলাদেশেও এটি চালু হয়েছে গত কয়েক দশক ধরে। এই নেশাটি মানুষকে গভীর তৃপ্তি দেয় শুধু তাই নয়, এই জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমেও পাখি সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
পাখি দেখে সেগুলোকে সনাক্ত করতে পারলে পর্যবেক্ষকদের আনন্দ বেশি হয়। দুনিয়াব্যাপী বার্ড-ওয়াচাররা অনেকেই পাখির ফিল্ডগাইড সঙ্গে রাখেন। এমনকী সাধারণের জন্যও ফিল্ডগাইড সঙ্গে রাখা যেতে পারে, এমনকী শিক্ষার্থীদের জন্য এ গাইডটি জরুরি।
উপমহাদেশের পাখির সম্পূর্ণ ফিল্ডগাইড তৈরি করেন ব্রিটিশ নাগরিক রিচার্ড গ্রিমেট, ক্যারল ইনস্কিপ এবং টিম ইনস্কিপ। চমৎকার এই বইটি প্রকাশ করেন ক্রিস্টোফার হেম। বইটিতে উপমহাদেশের প্রায় সব পাখির নাম, বৈজ্ঞানিক নাম ও সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত সন্নিবেশিত হয়েছে। বইটির সবচেয়ে লক্ষণীয় ও আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে মুদ্রিত ছবিগুলো।
বাংলাদেশে প্রকাশিত এবং বাংলায় রচিত প্রথম ফিল্ডগাইড ইনাম আল হক ও তারেক অণুর বাংলাদেশের পাখির ফিল্ডগাইড। গভীর আগ্রহের কারণে ইনাম আল হক পাখি নিয়ে গবেষণা করছেন কয়েক দশক ধরে। তিনি নিবেদিতপ্রাণ পাখিপ্রেমীর সঙ্গে দেশের সমস্ত বনাঞ্চল, হাওড়, লেক, নদী ও উপকূল চষে বেড়িয়েছেন এবং পাখিদের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। ফলশ্রুতিতে তাঁর পক্ষে পাখিদের সম্মন্ধে জানা সম্ভব হয়েছে। সেই জানা থেকেই তাঁর একটি ফিল্ডগাইড বের করার উদ্দেশ্য সফল। একাজে তাঁকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেছেন তারেক অণু। তিনিও একজন অভিজ্ঞ পাখি-পর্যবেক্ষক। বিলেতে উপমহাদেশের পাখির ফিল্ডগাইড প্রকাশক ক্রিস্টোফার হেম বাংলাদেশের পাখির বাংলা ফিল্ডগাইড প্রকাশের উদ্যোগ সম্মন্ধে জেনে অত্যন্ত উল্লসিত হন এবং উপযাচক হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি ইনাম আল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়ে দেন তাঁদের ফিল্ডগাইডে ব্যবহৃত ছবিগুলো তিনি বাংলা বইয়ের উদ্যোক্তাদের উপহার হিসেবে দিতে চান। বিনামূল্যে দিতে চাইছেন! সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁরা একটি সিডিতে করে সবগুলো ছবি পাঠিয়ে দেন। সেই ছবিগুলোই বাংলাদেশের পাখির ফিল্ডগাইড বইয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশের পাখিদের সঙ্গে বন্যপ্রাণী নিয়ে আগ্রহীদের জন্য আরেকটি বইয়ের নাম নিতে হয় যেহেতু পাখিসহ বন্যপ্রাণীর উপর বইয়ের সংখ্য হাতেগোণা। বইটি হলো ইউসুফ এস আহমেদের উইথ দ্য ওয়াইল্ড অ্যানিমেলস অব বেঙ্গল । এই বইটিতেও পরিযায়ী ও স্থানীয় পাখিদের উল্লেখ রয়েছে। ইউসুফ এস আহমেদ স্বাধীনতাপূর্বকালের সমগ্র পাকিস্তান ফরেস্টের ইন্সপেক্টর অব জেনারেল ছিলেন। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বইটিতে তিনি দার্জিলিঙ, ডুয়ার্স থেকে সুন্দরবন, ময়মনসিংহ, ঢাকা পর্যন্ত বিশাল এলাকাজুড়ে জঙ্গলের পাখি ও বন্যপ্রাণী নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন।
সেই সঙ্গে প্রতিটি প্রজাতির বাংলা নাম, ইংরেজি নাম এবং বৈজ্ঞানিক নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আরো আছে বাংলায় সংক্ষিপ্ত বিবরণ। যেকোনো বার্ড-ওয়াচার এবং আলোকচিত্রী এই বইটি সঙ্গে রাখলে উপকৃত হবেন। বাংলাদেশের পাখির ফিল্ডগাইড সম্মন্ধে কোনো নেতিবাচক দিক বের করা বেশ কঠিন। হয়ত প্রিন্টের মান আরো উন্নত হতে পারত। আমাদের দেশে প্রিন্ট নিয়ে অনেকের অভিযোগ আছে যে ক্ষেত্রে তেমন উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কীভাবে তা হতে পারে সে বিষয়ে লেখকের ধারণা নেই, মুদ্রণ শিল্পের কর্তাগণ বলতে পারবেন। উপরন্তু, বইটি শুধুমাত্র পাখির বিষয়ে আগ্রহীদেরই প্রলুব্ধ করবে বলে মনে হয়।
সবশেষে, পাখি পর্যবেক্ষকদের জন্য ইনাম আল হক ও তারেক অণুর বাংলাদেশের পাখির ফিল্ডগাইড অত্যন্ত কার্যকর একটি বই। প্রকৃতির এই সুন্দরতম উপাদানটি দেখে তৃপ্তিলাভের পাশাপাশি প্রজাতিটিকে সনাক্ত করতে পারলে আনন্দ দ্বিগুণ হবে।
বাংলাদেশের পাখির ফিল্ডগাইড
লেখক: ইনাম আল হক, তারেক অণু
প্রকাশক: বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব
প্রকাশকাল: ২০১৫
দাম: ৭০০ টাকা।
