তিনি বইটির নাম রাখতে চেয়েছিলেন “আমাদের শেষ প্রমিথিউস” কিন্তু পরে আবদুল হাই শিকদারের জানা অজানা মওলানা ভাসানী বইটি বর্তমান নাম পেয়েছে। ভাসানীর সাথে প্রমিথিউসের যোগ খুবই গভীর, যারা তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা রাখেন তারা বুঝতে পারবেন ভালোভাবে। প্রমিথিউস যেমন মানব জাতির জন্য আগুন চুরি করে শাস্তি পেয়েছিলেন বিনিময়ে ভাসানীও বাংলাদেশকে আত্মসত্তার আগুন উপহার দিয়েছিলেন।
নাতিদীর্ঘ বইটিতে মওলানা ভাসানীর জীবনের অনেক কিছুই উঠে এসেছে। যার অনেককিছুই আমরা জানি আবার অনেককিছু জানি না। আর জানা বিষয়গুলোতে আবদুল হাই শিকদার তার নিজস্ব মতামতও যুক্ত করেছেন। ফলে বইটি একইসাথে ইতিহাসগ্রন্থ এবং গবেষণাগ্রন্থের আদল লাভ করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক বাংলা, সাপ্তাহিক বিচিত্রাসহ আরো বিভিন্ন পত্রিকায় ভাসানীকে নিয়ে লেখাগুলো প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। যেমন মুক্তিযুদ্ধে ভাসানীর অবদান নিয়ে বইয়ের প্রথম প্রবন্ধটিতে “আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং মওলানা ভাসানী”তে আবদুল হাই শিকদার “স্বাধীন বাংলার প্রথম স্বাপ্নিক” বলছেন ভাসানীকে। যারা তখনকার ইতিহাস ভালোভাবে জানেন না তাদের জন্য সেটা জানা গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রবন্ধটিতে তিনি অনেকের লেখার সাহায্য নিয়েছেন, এরফলে লেখাটির ভিত্তি মজবুত হয়েছে। পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ভাসানীই প্রথম সেলস ট্যাক্স কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে চলে যাওয়া নিয়ে প্রথম প্রতিবাদ করেছিলেন, লেখাটিতে ব্যবহৃত হাসান হাফিজুর রহমানের উদ্ধৃতি থেকে আমরা তা জানতে পারি। প্রথম প্রতিবাদের গুরুত্ব অনেক। কেননা কেনো সরকারই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চায় না।
ভাষা আন্দোলনেও ভাসানীর বিরাট ভূমিকা কী মুছে ফেল সম্ভব? ইতিহাস মুছে ফেলা কঠিন বলেই আমরা জানি। ভাষা আন্দোলনে তার ভূমিকা নিয়ে বইটিতে থাকা “তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে বাংলা ভাষা আন্দোলন এবং মওলানা ভাসানী” লেখাটি তাই গুরুত্বপূর্ণ এর বিষয় বিচারেই। এ প্রসঙ্গে ভাসানীকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে বদরুদ্দীন উমরের পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি (প্রথম খণ্ড) বইয়েও। এবং এম এম জাহাঙ্গীরের আত্মকথা ও আলাপচারিতা: মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাইফুল ইসলামের স্বাধীনতা ভারত ভাসানী বই দুটি আমাদের জানায় ভাসনীর মুক্তিযুদ্ধ ও তার কিছু অজানা কথোপকথন, সাক্ষাৎকার এবং মুক্তিযুদ্ধের আগে সশস্ত্র সংগ্রামের উদ্দেশ্যে ভাসানীর লন্ডন যাত্রা কালে ভারতে আটকে পড়ার মতো ঘটনাগুলো।
আবদুল হাই শিকদারের জানা অজানা মওলানা ভাসানী নাতিদীর্ঘ বইটিতে এই জননেতার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে তার বহুমুখি সত্তার পরিচয়ও প্রবলভাবে মেলে। যেমন, “নজরুল ইসলাম থেকে নেরুদা: আরেক ভাসানী” “মওলানা ভাসানী ও আমাদের সাহিত্য” লেখা দু’টি। নজরুর ও নেরুদা সাহিত্যে ভাসানীর মতোই জনগণের শাসন চাইতেন, সেটা ঐতিহাসিক সত্য। নেরুদা তো আবার সমাজতান্ত্রিক কবি, নজরুলও কী সাম্যের দাবি তুলেননি?
বইটিতে মওলানা ভাসানীর জীবনের অনেক কিছুই উঠে এসেছে। যার অনেকছিুই আমরা জানি আবার অনেককিছু জানি না। আর জানা বিষয়গুলোতে আবদুল হাই শিকদার তার নিজস্ব মতামতও যুক্ত করেছেন। ফলে বইটি একইসাথে ইতিহাসগ্রন্থ এবং গবেষণাগ্রন্থের আদল লাভ করেছে। এখানে ভাসানীর পুরো জীবন যেহেতু তুলে আনা সম্ভব নয়, আর বইটির উদ্দেশ্যও তা নয়।, তবে তার জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই আলো ফেলেছে আবদুল হাই শিকদারের জানা অজানা মওলান ভাসানী বইটি। তাই বইটি বাংলার জনমানুষের কাতারে নেমে আসা এই রাজনীতিবিদ ও জননেতাকে গভীরভাবে অনুধাবনে প্রভূত সাহায্য করবে, নিঃসন্দেহে তা বলা যায়।
জানা অজানা মওলানা ভাসানী
লেখক : আবদুল হাই শিকদার
বিষয় : জীবনীগ্রন্থ, ইতিহাস
প্রকাশকাল : ২০২৫
প্রকাশক : শোভা প্রকাশ
মূল্য : ৩৭৫ টাকা।
জানা অজানা মওলানা ভাসানী বইটি কিনতে চাইলে
