বাহিরানা

কার্ল মার্ক্স-এর দাস ক্যাপিটাল: পাঠ প্রবেশিকা বই রিভিউ—মাইকেল ওয়েইন—পুঁজি ও সময়কে বোঝার গ্রন্থ


দিপু চন্দ্র দেব

কার্ল মার্ক্স-এর আগে শ্রমের উদ্বৃত্ত মূল্য সম্পর্কে ধারণা ছিল না কারো। পুঁজিবাদ সম্পর্কে কারো ধারণা ছিল না, পুঁজি কিভাবে শ্রমকে শোষণ করে, কীভাবে শ্রমের একটি বড় অংশ পুঁজিপতিদের কাছে চলে যায়—সেটি কার্ল মার্ক্স তার পুঁজি গ্রন্থের মাধ্যমে পৃথিবীবাসীর কাছে উন্মোক্ত করেছিলেন। বইটির প্রথম খণ্ড লিখতে তার বিশ বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল। এর মধ্যে থাকা সত্য আজো পুঁজি বিরুদ্ধে সবচেয়ে মোক্ষম। কিন্তু বইটি এত সহজ নয়, এর পাঠযোগ্যতা অর্জনের জন্য অনেক কিছু জানা প্রয়োজন, যেমন পুঁজিবাদি সমাজে ইতিহাসের দ্বন্দ্ব কীভাবে কাজ করে তার ভিত্তি এই বই। ফলে এর পাঠ সহায়ক গ্রন্থ প্রয়োজন, এবং এরকম অসংখ্য গ্রন্থ রচিত হয়েছে, এখনও হচ্ছে। এদের মধ্যেই মাইকেল ওয়েইনের “কার্ল মার্ক্স-এর দাস ক্যাপিটাল: পাঠ প্রবেশিকা” বইটি। গ্রন্থটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন অনুবাদক জাভেদ হুসেন।

প্রতিটি অধ্যায়ই আমাদের বর্তমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং একইসাথে অতীতের সঙ্গেও। কেননা সামন্তযুগ পেরিয়ে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে এসে পড়েছি আমরা। আর বর্তমানে মানুষের ইতিহাস বিশ্ববাজার ব্যবস্থার যুগ পাড়ি দিচ্ছে। এসব বিষয় বোঝার জন্য ভাবাদর্শকে বোঝা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে আরো কাজ হয়েছে যেমন আন্তনিও গ্রামসির “হেজিমনি” তত্ত্ব লুই আলথুসারের “আইডিওলজি এন্ড আইডিওলজিকাল স্টেট অ্যাপারেটাস”-এর কথা বলা যায়। মাইকেল ওয়েইনের ভাবাদর্শ পাঠ মার্ক্সীয় তত্ত্ববিশ্বকে বুঝতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

পুঁজিকে বুঝতে প্রথমে বোঝা প্রয়োজন পণ্যকে। কারণ পণ্যের মাধ্যমেই ব্যবস্থাটি কাজ করে। বইটি শুরু হয়েছে তাই “পণ্য” দিয়ে। এরপর “পণ্য-বিনিময়” কারণ বিনিময়ের ধারণা ছাড়া পণ্যকে বোঝা সম্ভব নয়। কিন্তু এই পণ্যের উৎপাদন করে কারা? বা উৎস কোথায়? সেটি লুকিয়ে আছে শ্রম-এর মধ্যে, ফলে তৃতীয় অধ্যায়ের শিরোনাম “সঞ্চলন ও শ্রম-ক্ষমতা ক্রয়”। এরপরই আসে বাজার ব্যবস্থা যেখানে মূল্য নির্ধারিত হয়, চতুর্থ অধ্যায় তাই “মূল্য”। যেখানে সবচেয়ে বড় গোপনীয়তা বা ফাঁকি লুকিয়ে থাকে। এরপর একে একে এসেছে, “পুঁজিবাদের অধীনে কাজ” “পুনরুৎপাদন ও সংকট” “পণ্যপূজা ও ভাবাদর্শ” “পুঁজিবাদের পর?”।

প্রতিটি অধ্যায়ই আমাদের বর্তমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং একইসাথে অতীতের সঙ্গেও। কেননা সামন্তযুগ পেরিয়ে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে এসে পড়েছি আমরা। আর বর্তমানে মানুষের ইতিহাস বিশ্ববাজার ব্যবস্থার যুগ পাড়ি দিচ্ছে। এসব বিষয় বোঝার জন্য ভাবাদর্শকে বোঝা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে আরো কাজ হয়েছে যেমন আন্তনিও গ্রামসির “হেজিমনি” তত্ত্ব লুই আলথুসারের “আইডিওলজি এন্ড আইডিওলজিকাল স্টেট অ্যাপারেটাস”-এর কথা বলা যায়। মাইকেল ওয়েইনের ভাবাদর্শ পাঠ মার্ক্সীয় তত্ত্ববিশ্বকে বুঝতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

মাইকেল ওয়েইনের প্রবন্ধগুলো মার্ক্সের চিন্তাবিশ্বের বিস্তার ও বুনিয়াদের সাথে পাঠকদের পরিচয় ঘটাবে। এবং একটি আরেকটির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত, কেননা, শ্রম ছাড়া উৎপাদন সম্ভব নয় আবার শ্রমের উদ্বৃত্ত মূল্যের তছনছ করা ছাড়া পুঁজি টিকবে না, একইভাবে ভাবাদর্শ ছাড়াও আবার সে শ্রম করায়ত্ত করতে পারবে না। ফলে বইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের যারা পুঁজিকে ও সমাজতন্ত্রকে বুঝতে চান তাদের জন্য এবং যারা জানেন তাদের নিজেদেকে ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য। জাবেদ হুসের বইটিকে জটিল করে তুলেননি, অনুবাদে প্রায়শই যা আমরা দেখতে পাই। তাই বইটি পড়তে বাড়তি বেগ পেতে হয় না পাঠকদের। মনে হয় মাইকেল ওয়েইন বাংলাতে লিখেছেন বইটি।

কার্ল মার্ক্স-এর দাস ক্যাপিটাল: পাঠ প্রবেশিকা
লেখক : মাইকেল ওয়েইন
অনুবাদ : জাভেদ হুসেন
বিষয় : অর্থনীতি, প্রবন্ধ
প্রকাশকাল : ২০২৫
প্রকাশক : গ্রন্থিক প্রকাশন
দাম : ৫০০ টাকা।

বইটি কিনতে চাইলে:

কার্ল মার্ক্স-এর দাস ক্যাপিটাল: পাঠ প্রবেশিকা (Karl Marx-Er Das Capital: Path Probeshika) – বাহিরানা

 

(Visited 4 times, 1 visits today)

Leave a Comment