দিপু চন্দ্র দেব
মধ্যযুগের বাংলার সাহিত্য বিষয়ে আমরা যতদূর জানি বা গবেষণা রয়েছে তার খুবই অল্প পরিমাণই রয়েছে অর্থনীতি নিয়ে। এর কারণ তথ্য-উপাত্তের অভাব নাকি মনোযোগ—সেটা বের করা শক্ত। তবে এটা নিশ্চিত অর্থনীতি ও সাহিত্য ছাড়া মধ্যুযুগ কেন ইতিহাসের কোনো সময় পর্বের সমাজেরই প্রকৃত অবস্থা জানা সম্ভব নয়। উদাহরণ হিসেবে চর্যাগীতিকার কথা বলা যায়, গীতিকাগুলোতে সেইসময়ের সমাজের গঠন জানার পাশাপাশি তার অর্থনীতিও আমরা জানতে পারি। যেমন, নীম্নজাতের মানুষদের সমাজের বাইরে বাস করতে হতো। তাদের জীবিকা ও জীবন কেমন ছিল তার একটা ধারণা পাই আমরা গীতিকাগুলোতে। সাদিকুর রহমানের “মধ্যযুগে বাংলার অর্থনীতি (১২০৪-১৭৫৭)” বইটি মধ্যযুগের অর্থনীতি জানতে ও বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এর সাথে অন্য গবেষকদেরও আকৃষ্ট করতে পারে।
লেখক বৃহৎ পরিসরে সময়টিকে আয়ত্ত করতে চেয়েছেন, জীবন যাপনের মূল রসদ কোথা থেকে আসে, জীবিকা কীভাবে অর্জিত হয়, এগুলো তিনি সবিস্তারে আলোচনা করেছেন। আর বিষয়গুলোকে বাধা প্রদান করে বা সম্মৃদ্ধ করে যে রাজনীতি সেটিকে এড়িয়ে তো কোনো অর্থবহ আলোচনাই হতে পারে না, তাই তিনি একে বইয়ের একদম শুরুতেই রেখেছেন।
সাদিকুর রহমানের মধ্যযুগে বাংলার অর্থনীতি (১২০৪-১৭৫৭) গবেষণা বইটিতে একটি বিশেষ দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন, সেটি হলো, মধ্যযুগে বৈশ্বিক পরিসরে বাংলা বিশেষ পরিচিত পেয়েছিল তার পণ্য ও ব্যবসায়ের কারণে, কিন্তু প্রচলিত ইতিহাস গবেষণায় সেটিকে অগ্রাহ্য করে সেইসময়ের রাজাদের নিয়েই আলোচনা হয় বেশি। লেখক বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে। বিষয়টি প্রকৃত অর্থেই মনোযোগ দাবী করে। তবে এটা বলা যায় রাজাদের ইতিহাসও অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বাদ দিয়ে নয়। আর ভারতীয় গ্রাম ব্যবস্থার চেয়ে বাংলার গ্রাম ব্যবস্থা ছিল ভিন্ন, অর্থনীতির আলোচনায় এটাও বিবেচনায় রাখা উচিত। কারণ এই ভিন্নতাই সমাজগুলোর আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য অর্জনের কারণ। তবে পার্থক্যটি বইয়ে সম্যকভাবে না এলেও জীবিকার সামগ্রিক আলোচনায় এটি এমনিতেই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
বইয়ে অধ্যায় আছে পাঁচটি, “মধ্যযুগে বাংলার রাজনীতি” “মধ্যযুগে বাংলার কৃষি” “মধ্যযুগে বাংলার শিল্প” “মধ্যযুগে বাংলার ব্যবসায়-বাণিজ্য” “মধ্যযুগে বাংলার জীবনযাত্রার মান”। শেষে পরিশিষ্ট অংশে রয়েছে সাহিত্য পর্যালোচনা।
দেখা যাচ্ছে লেখক বৃহৎ পরিসরে সময়টিকে আয়ত্ত করতে চেয়েছেন, জীবন যাপনের মূল রসদ কোথা থেকে আসে, জীবিকা কীভাবে অর্জিত হয়, এগুলো তিনি সবিস্তারে আলোচনা করেছেন। আর বিষয়গুলোকে বাধা প্রদান করে বা সম্মৃদ্ধ করে যে রাজনীতি সেটিকে এড়িয়ে তো কোনো অর্থবহ আলোচনাই হতে পারে না, তাই তিনি একে বইয়ের একদম শুরুতেই রেখেছেন। আর অগ্রসর পাঠকদেরকে বইয়ে থাকা গ্রন্থপঞ্জি বিষেয় সহায়তা করতে পারে। সব ধরণের পাঠকদেরই বইটি পাঠের আনন্দ ও জ্ঞানের রসদ জোগাবে।
মধ্যযুগে বাংলার অর্থনীতি (১২০৪-১৭৫৭)
লেখক : সাদিকুর রহমান
বিষয়: অর্থনীতি, গবেষণা
প্রকাশকাল : ২০২৫
প্রকাশক : কথাপ্রকাশ
দাম: ৮০০ টাকা।
বইটি কিনতে চাইলে:
মধ্যযুগে বাংলার অর্থনীতি (১২০৪-১৭৫৭)