ফিলিস্তিনি লেখিকা আদানিয়া শিবলির নগণ্য খুঁটিনাটি তার তৃতীয় উপন্যাস। বাংলায় অনুবাদ করেছেন মোরশেদুর রহমান। বইটির ইংরেজি অনুবাদের শিরোনাম মাইনর ডিটেইল (২০২০)। মূল বই আরবিতে তাফসিল থানাওই নামে প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৭ সালে। উপন্যাসটি দখলদার ক্ষমতার দ্বারা নিপীড়িত জাতির উপর চাপিয়ে দেওয়া মিথ্যা গল্পের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ। এই উপন্যাসে যেভাবে সত্য অন্বেষার জন্য কোনো ছাড় না দেওয়ার নজির স্থাপন করেছেন আদানিয়া শিবলি একইরকম সত্য অন্বেষার দেখা পাই আমরা দক্ষিণ কোরিয়ার ১৯৮৭ সালের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নোবেলজয়ী কথাসাহিত্যিক হান কাংয়ের হিউম্যান অ্যাক্টস উপন্যাসে।
কে এই তরুণী? তার গল্প কী চিরকাল লোকচক্ষুর অন্তরালেই রয়ে যাবে? তার নামটাও কী কেউ জানবে না? এরকম অসংখ্য প্রশ্নই লেখিকাকে এই তরুণীর সাথে একাত্ম করে ফেলে, তিনি সেই তরুণীর দৃষ্টিতে রচনা করেন উপন্যাসটি।
যেকোনো সত্য ঘটনাকে যখন ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তখন মিথ্যা তথ্যকে সুন্দর করে সাজিয়ে তা মানুষদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ১৯৪৯ সালে ফিলিস্তিন-ইজরাইলি যুদ্ধে তাই ঘটেছিল। ইজিপ্টের মরুসীমান্তের এক ইজরায়েলি পদাতিক সৈন্যদলের দ্বারা সংঘটিত অস্ত্র অভিযানে অগুণিত যাযাবরের মৃত্যু এবং তাদের শুধুমাত্র একজন বেঁচে যাওয়া কন্যার ধর্ষণ ও হত্যার গল্প নগণ্য খুঁটিনাটি বা মাইনর ডিটেইল। বইয়ের প্রথম অংশ তৃতীয় পুরুষের বর্ণনায় পাই আমরা, নিরাবেগ বর্ণনায় এই হত্যাযজ্ঞে সৈন্যদলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের মনকে অনুসরণ করা হয়। তরুণীটিকে ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয় প্রথমে, এরপর অফিসারটি তার গলা চেপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে ফেলে প্রায় এবং এরপর নিজের পোষাক খুলে তরুণীটিকে ধর্ষণ ও খুন করে।
এই ঘটনার বহুবছর পর রামাল্লায় বসে আদানিয়া শিবলি দৈনিক পত্রিকায় এই ঘটনাটির কথা জানতে পারেন। প্রথম পুরুষের বর্ণনায় তিনি সেটি জানান আমাদের। এরপর শুরু হয় দখলকৃত ভূমির মধ্যে তার নিরাশাজনক অনুসন্ধান। দীর্ঘ এক বিপদজনক যাত্রায় বেরিয়ে আসতে থাকে অসংখ্য খুঁটিনাটি। এই অনুসন্ধানে আরো উন্মোচিত হতে থাকে দখলকৃত ফিলিস্তিনের অধিবাসীদের বর্তমান অবস্থা। শিবলীর এই যাত্রায় থ্রিলার উপন্যাসের সাসপেন্সকেও হার মানায়। মরুভূমির অন্তহীন বিস্তারে কোথায় যেন লুকিয়ে আছে কোন অজানা, বইয়ের শুরুতেই এর ইঙ্গিত মেলে,
মরীচিকা ছাড়া নড়ছিল না কিছুই। ঊষর পাহাড়গুলোর বিস্তীর্ণ বিস্তার পরতে পরতে উঠে গেছে আকাশমুখী, মরীচিকার দহনে কাঁপছে নিঃশব্দে, বিকেলের নিষ্ঠুর সূর্যালোক বিবর্ণ হলুদ চূড়াগুলোর রূপরেখাকে ঝাপসা করে তুলেছে তখন।”
(নগণ্য খুঁটিনাটি, অনুবাদ, মোরশেদুর রহমান)
কাব্যিক বর্ণনায় তার যাত্রার কথা আমাদের জানাচ্ছেন লেখিকা, বাংলা অনুবাদেও সেই কাব্যের সুর ধরা পড়েছে প্রবলভাব।
কে এই তরুণী? তার গল্প কী চিরকাল লোকচক্ষুর অন্তরালেই রয়ে যাবে? তার নামটাও কী কেউ জানবে না? এরকম অসংখ্য প্রশ্নই লেখিকাকে এই তরুণীর সাথে একাত্ম করে ফেলে। আদানিয়া শিবলি সেই তরুণীর দৃষ্টিতে রচনা করেন উপন্যাসটি। মোরশেদুর রহমানের অসাধারণ অনুবাদে আমরাও তাই জানতে পারি, খুঁটিনাটিগুলো। যা ইতিহাসের গর্ভে এতদিন গোপন ছিল, একে বের করে আনা মানে তো নিপীড়িতের প্রতিবাদও। তাই আদানিয়া শিবলির নগণ্য খুঁটিনাটি উপন্যাসটি হয়ে ওঠে মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের বিজয়গাথা।
নগণ্য খুঁটিনাটি
লেখক: আদানিয়া শিবলি
অনুবাদ: মোরশেদুর রহমান
বিষয়: অনুবাদ উপন্যাস
প্রকাশকাল: ২০২৫
প্রকাশক: কথাপ্রকাশ
মূল্য: ৩০০ টাকা।
নগণ্য খুঁটিনাটি বইটি কিনতে চাইলে
