বাহিরানা

ফিলিপাইনের লোকগল্প বই রিভিউ—মাসুদ খোন্দকার—হারিয়ে যাওয়া গল্পের সংগ্রহ


দিপু চন্দ্র দেব

একটি দেশের আত্মা লুকিয়ে থাকে তার লোকসংস্কৃতি আর সাহিত্যে। এশিয়ার ফিলিপাইন নামক দেশের সেই আত্মাকে ঔপনিবেশিক শাসকরা ধ্বংস করেছিল, তার মহাকাব্যসহ তাবৎ লোকগল্পের ভাণ্ডারও এর মধ্যে পড়েছে। এমনকি নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে “তাগালগ” নামক সর্বজনসিদ্ধ ভাষাটির অক্ষরও, সেটিকে রোমান হরফে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এমনটি আমরা ঘটতে দেখেছি আফ্রিকায়, নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো’র “ডিকলোনাইজিং দ্য মাইন্ড”-এর কিছু বর্ণনা দেখেছি আমরা। তবে, ফিলিপাইনের কিছু লোকগল্প যেভাবেই হোক টিকে ছিল, স্প্যানিশ কিছু গবেষক, সন্ধানীরা এর কিছু কিছু সংগ্রহ করেছেন, পরে ভূমিপুত্ররাও দীর্ঘকাল যাবত সংগ্রহ করেছে, তাদের সেই খোঁজ অব্যাহত আছে এখনও। মাসুদ খোন্দকারের “ফিলিপাইনের লোকগল্প” সেইসব মিথ, পুরাণ আর গল্প নিয়েই অবয়ব পেয়েছে।

যেকোনো সাহিত্যকর্মের মতোই লোকপুরাণেরও আবেদন বৈশ্বিক। সর্বজনকে সে তার সুধারস দান করে, তবে লোকপুরাণ, মিথ, লোকগল্প একটি বাড়তি দায়িত্ব পালন করে, তা হলো এটি পাঠকদের অবচেতনে থাকা সৃষ্টিশীলতার দানবকেও পুষ্ট করে কোনোধরণের ঋণস্বীকারের ব্যবস্থা না রেখেই। ফলে প্রতিটি দেশই এর অংশীজন হতে পারে, তাদের মানসকে ঝালিয়ে নিতে পারে। মাসুদ খোন্দকার দীর্ঘদিন ফিলিপাইনে বাস করেছেন কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনে। ফলে তিনি তাদের আচার-সংস্কৃতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বেশ ভালোভাবেই।

বইটি চিরায়ত মিথের রূপে সাজিয়েছেন লেখক, পাঁচটি ভাগের নাম হলো, “মিথ, পুরাকথা” “কিংবদন্তি” “লোককথা, উপকথা” “প্রবাদ-প্রবচন, ধাঁধধা” “উদোগল্প” আর শেষে একটি প্রবন্ধ “প্রাচীন ফিলিপিনো সাহিত্য: একটি আলোচনা”। এখানে শিরোনামে থাকা ইংরেজি শব্দ বাদ দিয়েছি। প্রাচীন সব সভ্যতার মতো ফিলিপিনোদেরও কৌতূহল ছিল মানুষ, দেবতা, পরকাল নিয়ে, সবকিছু সৃষ্টি হয়েছিল কীভাবে, ফলে তাদের মিথেও তার উল্লেখ আছে। কিন্তু বাড়তি হিসেবে আছে সমুদ্র, “কেন সাগরের জলতরঙ্গ” নামক একটি গল্পে তার বর্ণনা আছে। দেশটি সমুদ্রের পাশে, এর সাতশটি দ্বীপপুঞ্জ আছে, তাই সমুদ্রের ব্যাখ্যা থাকবেই। যেমন মায়ানদের মহাকাব্যে তামাকের উল্লেখ আছে।

যেকোনো সাহিত্যকর্মের মতোই লোকপুরাণেরও আবেদন বৈশ্বিক। সর্বজনকে সে তার সুধারস দান করে, তবে লোকপুরাণ, মিথ, লোকগল্প একটি বাড়তি দায়িত্ব পালন করে, তা হলো এটি পাঠকদের অবচেতনে থাকা সৃষ্টিশীলতার দানবকেও পুষ্ট করে কোনোধরণের ঋণস্বীকারের ব্যবস্থা না রেখেই। ফলে প্রতিটি দেশই এর অংশীজন হতে পারে, তাদের মানসকে ঝালিয়ে নিতে পারে। মাসুদ খোন্দকার দীর্ঘদিন ফিলিপাইনে বাস করেছেন কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনে। ফলে তিনি তাদের আচার-সংস্কৃতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বেশ ভালোভাবেই। তাই তার অনুবাদে দেশটি লোকসত্তা ধরা পড়ার সম্ভাবনাই বেশি, আদতে তাই হয়েছে। বইটি একটি নতুন জগতের সন্ধান দেয় আমাদের। তাই নিজেদেরকে সম্মৃদ্ধ করারও সুযোগ রয়ে গেছে।

“তাগালক” তাদের জাতীয় ভাষা হলেও সেখানে আঠারোটি ভাষাকেন্দ্রিক জনগোষ্ঠী আছে, দেব-দেবী আছে প্রায় অর্ধশতাধিক। আর এই লোকগল্পগুলো এই মানুষদেরই পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে আসা। “মানুষ এলো কোথা থেকে” নামক পুরানে তাই পাওয়া যায় একসময় জলরাশি আর আকাশ ছিল, এরপর একটি নিঃসঙ্গ পাখির আবেদনে সমুদ্র দ্বীপরাশির সৃষ্টি করলো। জলরাশি আর আকাশের কথা সব সৃষ্টিতত্ত্বেই পাওয়া গেলেও তাদের এখানে সমুদ্র দ্বীপের জন্ম দেয়, কারণ তারা সমুদ্রসন্তান। বইটি বাংলা ভাষাকে রত্নে পূর্ণ করবে এই আশাবাদ মনের মধ্যে জিইয়ে রাখা যায়।

ফিলিপাইনের লোকগল্প
লেখক : মাসুদ খোন্দকার
বিষয় : লোকগল্প, গল্প
প্রকাশকাল : ২০২৫
প্রকাশক : কথাপ্রকাশ
দাম : ৪০০ টাকা।

বইটি কিনতে চাইলে:

ফিলিপাইনের লোকগল্প (Philipiner Lukogolpo) – বাহিরানা

(Visited 4 times, 1 visits today)

Leave a Comment