বাহিরানা

জ্যোতির্ময় সেনের পৌরাণিক শব্দসন্ধান: শব্দের গভীরে ভ্রমণ


আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন শব্দের মুখোমুখি হই দৈনন্দিন জীবনে, সাহিত্য পড়তে গিয়ে। কিন্তু কিছু কিছু শব্দের সঠিক অর্থ ও উৎস আমরা জানি না। অনেকসময় জানার প্রয়োজনও পড়ে না কারণ শব্দগুলো হয়তো কোনো নাম, যে নাম কোনো প্রবাদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট হয়ে আছে। যেমন, মান্ধাতার আমল, এখানে মান্ধাতা কিন্তু অতি প্রাচীনকালের এক রাজা। এই রাজাকে আমাদের জানার প্রয়োজন পড়ে না, কেননা এই বাক্যটির অর্থ আমরা জানি, যা বহুব্যবহারে জীর্ণ হয়ে গেছে তা-ই মান্ধাতার আমল।

তবে, মান্ধাতাকে জানতে দোষ কী? আর নতুন কোনোকিছু জানা তো আনন্দেরও বিষয়। যারা সাহিত্যকর্মে নিয়োজিত তাদের তো অবশ্যই জানতে হয়। অনেক শব্দের অর্থ পরিবর্তন হয় কালক্রমে, অনেক শব্দ হারিয়ে যায় অব্যবহারে এটা মানতেই হবে। কিন্তু যে শব্দগুলোর অর্থ পরিবর্তন হয়েছে মূলগতভাবে তাদের অর্থ কী ছিল? সেটি জানলে শব্দটিকে অনুধাবন করতে ও ব্যবহার করতেও তা কাজে দেয়। এই জানা ও অনুধাবনকে সহজভাবে উপস্থাপন করতেই জ্যোতির্ময় সেনের পৌরাণিক শব্দসন্ধান বইটি।

এখানে অক্ষর শব্দটির যে অর্থ দেওয়া আছে বর্তমানে আমরা সেই অর্থে শব্দটি ব্যবহার করি না, আমাদের কাছে অক্ষর মানে বর্ণসমষ্টি। কিন্তু এর মূল অর্থ জানতে পার কম আনন্দদায়ক ঘটনা নয় নিশ্চয়ই। আর “অক্ষৌহিণী” শব্দটি কমবেশি তার পুরাতন অর্থেই ব্যবহৃত হয় এখনও।

বইটি অভিধান ঘরানার। লেখক, আমাদের জীবনযাপনে ব্যবহৃত পৌরাণিক শব্দের উৎস ও অর্থ লিপিবদ্ধ করেছেন বইটিতে। বাংলা বর্ণমালার ক্রম অনুসারে সাজানো হয়েছে শব্দগুলো, যেটি আরো সহজবোধ করেছে শব্দগুলোকে। এর সঙ্গে সংস্কৃত শ্লোকের ভাবার্থও যুক্ত করেছেন প্রয়োজন সাপেক্ষে, যা এর যোগ্যতা বাড়িয়েছে। কয়েকটি শব্দ দেখা যেতে পারে,

অক্ষর—ব্রহ্ম, পরমাত্মা; শিব, বিষ্ণু, কৃষ্ণ। ক্ষরের অতীত বলে বা ক্ষরণ নেই বলে ব্রহ্ম, পরমাত্মা, শিব, বিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণকে অক্ষর বলা হয়।

অক্ষৌহিণী—অসংখ্য সেনা। ‘ঊহিনী’ শব্দের অর্থ সমষ্টি। এখানে সৈন্যদের সমষ্টি বা অসংখ্য সেনা বোঝাতে অক্ষৌহিণী শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। যে সেনাদলে ১০৯,৩৫০ পদাতিক, ৬৫,৬১০টি ঘোড়া, ২১,৮৭০টি হাতি এবং ২১,৮৭০টি রথসহ মোট ২১৮, ৭০০ সৈন্য থাকে।

এখানে অক্ষর শব্দটির যে অর্থ দেওয়া আছে বর্তমানে আমরা সেই অর্থে শব্দটি ব্যবহার করি না, আমাদের কাছে অক্ষর মানে বর্ণসমষ্টি। কিন্তু এর মূল অর্থ জানতে পার কম আনন্দদায়ক ঘটনা নয় নিশ্চয়ই। আর “অক্ষৌহিণী” শব্দটি কমবেশি তার পুরাতন অর্থেই ব্যবহৃত হয় এখনও।

অর্থ ও উৎস সন্ধানে তিনি সাহায্য নিয়েছেন রামায়ণ, মহাভারতে থেকে একদম সূচনায় থাকা বেদ, স্মৃতিশাস্ত্র, পুরাণের। এর সঙ্গে সুবলচন্দ্র মিত্রের বাঙ্গালা অভিধান হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষ (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড)-সহ আরো অনেক বইয়ের সাহায্যও নিয়েছেন তিনি। এতসব গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের যুক্ততার ফলে তার কাজটি অনেকটাই সুসম্পূর্ণ হয়েছে। বইটি বাংলা পৌরাণিক অভিধানকে সম্মৃদ্ধ করবে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। যারা পৌরাণিক শব্দের উৎসমুখ জানতে চান বা যারা নিছক অর্থ জেনেই আনন্দ পেতে চান তাদের সবাইকেই সম্মৃদ্ধ করবে জ্যোতির্ময় সেনের পৌরাণিক শব্দসন্ধান বইটি।

সম্মৃদ্ধ সব বই পাঠের মাধ্যমেই আমরা নতুন নতুন শব্দের অর্থ শিখি, ভাষাও শিখি এভাবেই। তার মধ্যে কোনো শব্দের বয়স হয়তো হাজার বছর পেরিয়েছে। কবি ও লেখকেরা এই শব্দগুলোকে তাদের লেখার মাধ্যমে নতুন করে তোলেন। আর শব্দের মূল অর্থ জানার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা বানানের প্রয়োগ ও বানানপঞ্জি সম্পর্কে জানতে আবুল কাইয়ুমের বাংলা বানানের প্রয়োগ অপপ্রয়োগ ও বানানপঞ্জি  এবং আধুনিক গদ্যভাষার ইতিহাস ও অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে ফয়জুল ইসলামের প্রবন্ধের বই আধুনিক বাংলা গদ্যভাষার সন্ধানে বই দুটির রিভিউও পড়তে পারেন। এর সঙ্গে বই পাঠের অভ্যাস গড়ে তুলতে ভালো পাঠক হওয়ার ৬টি উপায় লেখাটিও পড়তে পারেন।

পৌরাণিক শব্দসন্ধান
লেখক: জ্যোতির্ময় সেন
বিষয়: অভিধান, গবেষণা
প্রকাশকাল: ২০২৪
প্রকাশক: কথাপ্রকাশ
মূল্য: ১২০০ টাকা। 

পৌরাণিক শব্দসন্ধান বইটি কিনতে চাইলে


মন্তব্য করুন